চারঘাটে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষ

শ্রেণিকক্ষে সিগারেট খাওয়া নিয়ে দ্বন্দ্ব
চারঘাট প্রতিনিধি: রাজশাহীর চারঘাটে শ্রেণিকক্ষে সিগারেট খাওয়াকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্বে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষে অন্তত আট জন গুরুতর আহত হয়েছেন। গত সোমবার রাত ৮টার দিকে চারঘাটের শ্রীখন্ডী ও চারা বটতলা গ্রামের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে।
এতে উপজেলার নাওদাড়া দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় অনির্দিষ্ঠকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত রোববার সকাল ১১টার দিকে নাওদাড়া দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী রিজভী আলী নবম শ্রেণির শ্রেণিকক্ষের পেছনে বসে ধূমপান (সিগারেট) করছিল।
এ অবস্থায় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী দুর্জয় ইসলামের নেতৃত্বে কয়েকজন রিজভীকে ক্লাসরুম থেকে গালিগালাজ করে বের করে দেয়।
পরবর্তীতে রিজভী ফোন করে তার বন্ধু ইমন আলীসহ কয়েকজনকে বিদ্যালয়ে ডেকে আনে। তারা দুপুর ১২টার দিকে দুর্জয়কে শ্রেণিকক্ষ থেকে বিদ্যালয়ের মাঠে ডেকে বেধড়ক মারপিট করে। পরবর্তীতে দুর্জয়ের বন্ধু ও স্বজনরা এসে তাকে উদ্ধার করে চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওয়াজ নবী দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবকের সাথে কথা বলে গত সোমবার ঘটনাটি মিমাংসা করার জন্য সময় নির্ধারণ করেন। কিন্তু সোমবার এক পক্ষ উপস্থিত না থাকায় মিমাংসায় বসা সম্ভব হয়নি। পরে আহত দুর্জয়ের স্বজনরা তাঁদের শ্রীখন্ডী গ্রামের লোকজনকে সাথে নিয়ে সোমবার রাত ৮ টার দিকে প্বার্শবর্তী চারা বটতলা গ্রামে রিজভী ও ইমনের বাড়িতে হামলা করে।
এসময় তারা ইমনের চাচা মিঠুর বাড়িতেও ব্যাপক ভাঙচুর করে। তাদেরকে বাঁধা দিতে আসলে সাদিকুল ও ইমনকে গুরুতর আহত করে। এ অবস্থায় চারা বটতলা গ্রামের মাইকে ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, শ্রীখন্ডী গ্রামের লোকজন হামলা করেছে আপনারা সবাই হাতের কাছে যা পাবেন নিয়ে তাদের প্রতিরোধ করতে নেমে আসুন।
পরে গ্রামবাসী বের হয়ে হামলা করলে দুর্জয়ের বাবা সওদাগর আলী, আরজ আলী ও পলাশ হোসেন গুরুতর আহত হোন। এতে দুই পক্ষের কমপক্ষে আটজন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
চারা বটতলা গ্রামের হামলার শিকার মিঠু আলী বলেন, সিগারেট খাওয়া নিয়ে দুই শিক্ষার্থীর দ্বন্দ্ব হয়েছে। আমি ভালমন্দ কিছুই জানিনা। কিন্তু শ্রীখন্ডী গ্রামের লোকজন এসে আমার বাড়িতে ভাংচুর করে প্রায় ১১ লাখ টাকার ক্ষতি করেছে। মসজিদের মাইকে ঘোষণা না দিয়ে লোকজন জড়ো না করলে আরো বেশি ক্ষতি হতো।
এদিকে শ্রীখন্ডী গ্রামের বাসিন্দা রাকিবুল ইসলাম বলেন, দুর্জয় সিগারেট খাওয়ার প্রতিবাদ করায় তাকে রিজভী দলবল নিয়ে এসে মারধর করেছে। বিষয়টি জানানোর জন্য তাদের বাড়িতে গেলে চারা বটতলা গ্রামের মাইকে ঘোষণা দিয়ে আবারও হামলা করা হয়েছে। এতে দুর্জয়ের বাবাও গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যু শয্যায়।
দুই গ্রামবাসীর দ্বন্দ্বের কারণে নাওদাড়া দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করায় শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। দশম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক শহিদুল ইসলাম বলেন, স্কুলে এসে কিছু শিক্ষার্থী ক্লাস বাদ দিয়ে পাশের বিলের ধারে গিয়ে সিগারেট খায়। এখন ক্লাসরুমে খাচ্ছে।
স্কুল কতৃপক্ষ এ ব্যাপারে উদাসীন। এমনিতেই ঈদের লম্বা ছুটি থাকবে তার আগে এরকম অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্কুল বন্ধ থাকলে পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হবে।
নাওদাড়া দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওয়াজ নবী বলেন, শ্রেণিকক্ষে সিগারেট খাওয়া কেন্দ্র করে দুই শিক্ষার্থীর মধ্যকার দ্বন্দ্ব গ্রামবাসীর সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে। এলাকায় এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এজন্য অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে বিদ্যালয় তিনদিন সংরক্ষিত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
এর মধ্যে দুই গ্রুপের মিমাংসা হয়ে গেলে বিদ্যালয়ের ক্লাস যথারীতি শুরু হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এ বিষয়ে চারঘাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, বিষয়টি অবগত আছি। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক সেখানে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। আইনগত কার্যক্রম চলমান আছে।