ঢাকা | মে ১৯, ২০২৫ - ২:৫৬ অপরাহ্ন

‘জুলাই সনদ’কে আইনি ভিত্তি দিতে গণভোট চায়ছে জামায়াত

  • আপডেট: Monday, May 19, 2025 - 12:14 pm

অনলাইন ডেস্ক: ‘জুলাই সনদ’ চূড়ান্ত করতে এবং এটিকে আইনি ভিত্তি দিতে গণভোট চায় জামায়াতে ইসলামী। এছাড়া, এক জন ব্যক্তি ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন না এবং একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান হতে পারবেন না বলেও প্রস্তাব দিয়েছে দলটি।

রোববার (১৮ মে) সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বর্ধিত আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব প্রস্তাব দেয় জামায়াত।

আলোচনা শেষে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের একথা জানান। তিনি বলেন, যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হবে বা ঐকমত্য হয়নি, কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; এধরনের বিষয় এক করে কোন পদ্ধতিতে তা আইনগত ভিত্তি পাবে, তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে খুব স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, তারা গণভোট চান।

জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, গণভোটের মাধ্যমে আমাদের জুলাই চার্টার (জুলাই সনদ) হোক, ন্যাশনাল চার্টার (জাতীয় সনদ) হোক এবং চার্টারের বাইরেও যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু থাকে, সেটাকে অন্তর্ভুক্ত করে গণভোট চায় জামায়াত। গণভোট চাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে আবদুল্লাহ তাহের বলেন, গণভোট হচ্ছে সব মানুষের মনের প্রতিনিধিত্বমূলক একটি ব্যবস্থা। সাধারণ মানুষই এখানে সিদ্ধান্ত নেবেন। গণভোটের মাধ্যমে এর আইনগত একটি ভিত্তি হবে।

সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে পাঁচটি সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে ঐকমত্য কমিশন। এর অংশ হিসেবে জামায়াতের সঙ্গে আলোচনা হয়। এর আগে ২৬ এপ্রিলও দলটির সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল। গতকাল দলটির সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের প্রথম পর্যায়ের আলোচনা শেষ হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আগেই জানানো হয়েছে, সংস্কার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি সনদ তৈরি করা হবে। এর নাম হবে ‘জুলাই সনদ’।

বিতর্কিত নির্বাচন করলে মেয়াদ শেষেও নির্বাচন কমিশনারদের শাস্তির বিধান রাখা

এর আগে বৈঠকের বিরতিতে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন কমিশনারদের ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য চাকরিচ্যুত, এমনকি অবসরে থাকলেও যাতে তাদের শাস্তি হয়, সেই বিধান চায় জামায়াত। এজন্য প্রয়োজনীয় আইনের সংশোধন করার প্রস্তাব দিয়েছে দলটি।

তিনি বলেন, গত ১৫ বছর বা তার আগেও নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব ছিল সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা। কিন্তু অনেকেই সেটি করেননি। এটির অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে, আমাদের বিদ্যমান আইনে নির্বাচন কমিশনারদের ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য খুব বেশি শাস্তির বিধান নেই। নির্বাচন কমিশনারদের চাকরিকালে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে পারে। কিন্তু আমরা বলেছি নির্বাচন কমিশনারদের চাকরি চলে যাওয়া বা অবসরের পরেও যাতে তাদের আইনের আওতায় আনার বিধান থাকে।

দুদকে নজরদারি করতে টাস্কফোর্স গঠন

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিষয়ে জামায়াতের প্রস্তাবের বিষয়ে আবদুল্লাহ তাহের বলেন, দুদক অনেক সময় দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে সবার কাছে চিহ্নিত হয়েছে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে দলের পক্ষ থেকে একটি টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যেটি দুদকের ওয়াচডগ হিসেবে কাজ করবে। কমিশনের কেউ দুর্নীতিতে জড়িত হলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করবে। আমাদের এই প্রস্তাবের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরাও একমত হয়েছেন।

একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী ও দলের প্রধান থাকতে পারবেন না

ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের বিষয়ে প্রস্তাব তুলে ধরে জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের প্রস্তাবের ওপর জোরালো আলোচনা হয়েছে। জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এক জন ব্যক্তি একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এবং সেই দলের প্রধান থাকতে পারবেন না। এরকম উদাহরণ পৃথিবীর বহু দেশে আছে। এছাড়া, এক জন ব্যক্তি ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না বলেও মতামত দিয়েছে দলটি।

এনসিসি গঠনে একমত, তবে এতে প্রধান বিচারপতি ও রাষ্ট্রপতিকে না রাখা

জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ডা. তাহের বলেন, আমরা এনসিসি গঠনের সঙ্গে নীতিগতভাবে একমত। কিন্তু যে ফরম্যাট দেওয়া হয়েছে, সেখানে আমরা কিছু সংশোধনী এনেছি। মূলত প্রধান বিচারপতি এবং রাষ্ট্রপ্রধানকে তারা বডির ভেতরে প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু আমরা বলেছি তাদের এখান থেকে দূরে রাখতে হবে। কারণ, কোনো জরুরি সংকট তৈরি হলে যাতে মানুষ সমাধানের জন্য তাদের কাছে যেতে পারে।

ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের নেতৃত্বে দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাসুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আজাদ, এহসান মাহবুব যোবায়েরসহ ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদল আলোচনায় অংশ নেয়।

ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান, মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন।

দ্রুততম সময়ে একটি জাতীয় সনদের দিকে অগ্রসর হতে চায় কমিশন : আলী রীয়াজ

জামায়াতের সঙ্গে আলোচনার শুরুতে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন একটি জাতীয় সনদের দিকে অগ্রসর হতে চায়। জাতীয় সনদ তৈরির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা দু-এক দিনের মধ্যে শেষ করে শিগিগরই দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু করবে কমিশন। প্রাথমিক পর্যায়ে যেসব বিষয়ে মতভিন্নতা থাকবে, দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় সেসব বিষয়ে ঐকমত্যের লক্ষ্যে অগ্রসর হতে পারবেন বলে বিশ্বাস করেন তিনি।

সূত্র: ইত্তেফাক

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS