ঢাকা | মে ১৮, ২০২৫ - ১১:৫৫ পূর্বাহ্ন

 বোরোর ভালো দামে খুশি চাষিরা

  • আপডেট: Sunday, May 18, 2025 - 12:12 am

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীতে শুরু হয়েছে বোরো ধান কাটার মৌসুম। মাঠে মিলছে ভালো ফলন, আর বাজারেও মিলছে ভালো দাম। বরেন্দ্র অঞ্চলসহ জেলার সর্বত্রই চাষিরা এখন ধান বিক্রি করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় ৬৮ হাজার ২৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। ইতিমধ্যেই প্রায় ৫০ ভাগ ধান চাষিরা মাঠ থেকে ঘরে তুলেছেন। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে মাঠে ফলন হচ্ছে আশানুরূপ। কৃষকরা গড়ে প্রতি বিঘায় পাচ্ছেন ২৪ থেকে ২৫ মণ ধান।

বাজারে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ১৪শ’ থেকে ১৫শ’ টাকায়, যা গত বছরের তুলনায় বেশ লাভজনক। কৃষকরা জানান, গত বছর এসময় প্রতিমণ ধান বিক্রি হয়েছে ১২শ’ থেকে ১৩শ’ টাকায়।

তানোর উপজেলার ধানতৈড় গ্রামের কৃষক আফসার আলী জানান, দুই বিঘা জমি থেকে ৪০ মণ ধান পেয়েছি। নিজের জমিতে খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা, আর বর্গা জমিতে ২৫ হাজার।’ তিনি আরও জানান, সেচের ব্যবস্থা না থাকলে খরচ বেড়ে যায়। আরেক কৃষক আবদুস সালাম বলেন, ‘এক বিঘা থেকে ২৫ মণ ধান পেয়েছি। এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বেশি ফলন। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আরও সাত বিঘার ধান কাটব।’

তিনি আরও জানান, পাইকারি বাজারে ধান বিক্রি হচ্ছে ১৩০০ থেকে ১৫০০ টাকায়। একই উপজেলার হাতিবান্ধা গ্রামের জাকির হোসেন জানান, সরকারি ক্রয় কার্যক্রমের কারণে দাম ভালো পেয়েছেন। তানোর উপজেলার গুবিরপাড়া গ্রামের আবু রহমান বলেন, গত আমন মৌসুমে ভালো দাম পেয়েছিলাম। এবার ১০ বিঘা জমিতে বোরো করেছি। বর্তমানে ফলন ও দাম দুটোই ভালো।’

গোদাগাড়ী, পবা ও বাঘা উপজেলার চরের জমিতেও এবার ভালো বোরো চাষ হয়েছে। মোট ১ হাজার ৭৬২ হেক্টর চরের জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। ফলন হয়েছে আশানুরূপ। পবা উপজেলার চর খিদিরপুর গ্রামের মিরশাদ আলী বলেন, ‘চরের মাটিতে আলাদাভাবে সার দিতে হয়নি। তাই খরচও কমেছে।’ চর আষাড়িয়াদহ গ্রামের ওসমান গনি জানান, ‘চরের জমিতে এবার বোরোর ফলন বেশি হয়েছে। অনেক কৃষক লাভবান হয়েছেন।’

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অতনু সরকার বলেন, ‘আবহাওয়া ও সরকারি সহায়তার কারণে এবার ফলন ভালো হয়েছে। কৃষকেরা সন্তুষ্ট।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক উম্মে সালমা জানান, গতকাল শনিবার পর্যন্ত জেলার ৫০ শতাংশ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চাষিরা ভালো ফলন পাচ্ছেন। এছাড়া এবার বাজারে দামও ভালো।  বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)’র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হারুন- অর- রশিদ জানান, রাজশাহীর জন্য উপযোগী ১৪টি বোরো জাত অবমুক্ত করা হয়েছে।

এর মধ্যে ব্রি-৫০ রপ্তানিযোগ্য উন্নত জাত, ব্রি- ৫৮ উচ্চ ফলনশীল এবং ব্রি-৮৪ আয়রন ও জিঙ্ক সমৃদ্ধ। তিনি বলেন, ‘আধুনিক জাতের ধানের প্রতি কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে। এটি ফলন বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।’

এদিকে চলতি বোরো মৌসুমে চাষিদের উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে সরকার গত ২৪ এপ্রিল থেকে ৪৯ টাকা কেজি দরে ১৪ লাখ মেট্রিকটন  সেদ্ধ চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু করেছে। এছাড়াও কেনা হবে সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিকটন ধান।

এরমধ্যে রাজশাহী জেলায় কেনা হবে ১৫ হাজার ৩৯ মেট্রিকটন চাল ও ৫ হাজার ১৭৫ মেট্রিকটন ধান। বোরো মৌসুমে প্রতিকেজি চালের সংগ্রহ মূল্য করা হয়েছে ৪৯ টাকা এবং ধানের ৩৬ টাকা। ধানের উঠতি মৌসুমের শুরুতেই আগের চেয়ে দাম কিছুটা বৃদ্ধি করে সরকার সংগ্রহ অভিযান শুরু করায় চাষিরা দাম ভালো পাচ্ছেন। এতে রাজশাহী অঞ্চলের বোরো চাষিরা খুশি।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS