ঢাকা | মে ১৯, ২০২৫ - ৫:২৪ পূর্বাহ্ন

জেলায় কোরবানির জন্য প্রস্তুত ৫ লাখ পশু জমতে শুরু করেছে রাজশাহীর পশুহাট

  • আপডেট: Sunday, May 18, 2025 - 11:52 pm

স্টাফ রিপোর্টার: কোরবানির ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, ততই জমতে শুরু করেছে রাজশাহীর পশুহাটগুলো। আগের তুলনায় রাজশাহী অঞ্চলের সবচেয়ে বড় সিটি হাটসহ বিভিন্ন হাটে পর্যায়ক্রমে বাড়তে শুরু করেছে কোরবানির পশু।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এবার রাজশাহী জেলায় কোরবানির পশুর সরবরাহ আছে পর্যাপ্ত। জেলায় এবার কোরবানির জন্য প্রস্তুত প্রায় ৫ লাখ পশু। আর এর বিপরীতে চাহিদা প্রায় ৪ লাখ। সুতরাং উদ্বৃত্ত থাকবে আরও প্রায় ১ লাখ পশু। বর্তমানে রাজশাহীর হাটগুলোতে ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর উপস্থিতিই বেশি। আকারে এর থেকে কিছুটা বড় গরু আরও কয়েকদিন পর হাটে উঠবে বলে জানিয়েছেন ইজারাদার ও ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা জানান, রাজশাহীর সবচেয়ে বড় গরুর হাট বসে সিটি বাইপাসে। সিটি হাটে প্রতি রোববার ও বুধবার হাট হয়। ঈদের কয়েকদিন আগে থেকে প্রতিদিনই হাট বসে।

সর্বশেষ  রোববার বুধবার সিটি হাটে প্রায় ১৫ থেকে ১৮ হাজার গরু উঠেছিল। রাজশাহী জেলা প্রানীসম্পদ অফিসের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় এবার কোরবানির জন্য ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৮৯৩টি বিভিন্ন পশু রয়েছে। জেলায় এবার কোরবানির জন্য পশুর চাহিদা ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৪৩৭টি। রাজশাহী জেলা থেকে উদ্বৃত্ত ১ লাখ ১২ হাজার ৪৫৬টি পশু ঢাকা, চট্টগ্রামসহ অন্যান্য জেলায় পাঠানো হবে। এছাড়াও রাজশাহী বিভাগে এবার কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে ৪৩ লাখেরও বেশি পশু। বিভাগজুড়ে বসবে তিন শতাধিক পশুহাট।

বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জানিয়েছে, বিভাগের আট জেলায় ৪৩ লাখ ৪৪ হাজার ৪৯টি গরু, মহিষ, ছাগল ও অন্যান্য কোরবানিযোগ্য পশু আছে। যা এই বিভাগের চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য জেলাতেও যাবে। ঈদুল আযহা উপলক্ষে রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় ১৬১টি স্থায়ী এবং ১৪১টি অস্থায়ী হাট বসবে।

বিভাগজুড়ে হাটগুলোর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে গঠন করা হয়েছে ২১৩টি ভেটেরিনারি মেডিক্যাল টিম। এসব টিম গাভির গর্ভ পরীক্ষা ও পশুর স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধানে কাজ করবে। এছাড়া হাটে জাল টাকা শনাক্তকরণের ব্যবস্থা থাকবে। থাকবে ব্যাংকের বুথও। পাশাপাশি ইজারাদারদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বসানো হবে সিসি ক্যামেরা।

এদিকে, কোরবানির আগে শেষ সময়ে পশুর পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারিরা। খামারিরা বলছেন, গোখাদ্যের লাগামছাড়া দামের কারণে কোরবানির পশুর বাজারে প্রভাব পড়বে। দাম বেশি না হলে লোকসান হবে। যদিও প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, রাজশাহী বিভাগে এবারও কোরবানির পশুর চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি। তাই দাম খুব একটা বাড়বে না। সহনীয় একটা দাম থাকবে, এতে ক্রেতা-বিক্রেতা কারও সমস্যা হবে না।

রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিয়ান গ্রামের খামারি মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, তার খামারে ছয়টি গরু আছে, এর মধ্যে চারটি কোরবানির উপযোগী। তিনি বলেন, গরুগুলো চার মাস ধরে লালন-পালন করছি। কোরবানির দুই সপ্তাহ আগে থেকে বিক্রি শুরু করব। খামার থেকেই বিক্রির চেষ্টা করব, না হলে হাটে তুলব। তিনি বলেন, সব খাবারই কিনে খাওয়াতে হয়। গতবারের তুলনায় এবার গোখাদ্যের দাম অনেক বেড়েছে।

বিশেষ করে ঘাস, ভুট্টা, খৈল ও ভুসির দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। দাম বাড়ার এ ধারা রীতিমতো চিন্তার বিষয়। একই উপজেলার খামারি সাজ্জাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, কোরবানির সময় পশুর দাম কিছুটা বেশি থাকে, এটাও একটা বাড়তি আশার জায়গা। আমাদের গ্রামে এখন প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই একটি বা দুটি গরু আছে। মানুষ মাঠে কাজ করার পাশাপাশি সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে গবাদিপশু পালন করেন।

তবে বাইরে থেকে যদি গরু না আসে, তাহলে স্থানীয় খামারিরা ভালো দাম পাবেন। তাহেরপুর হাটের গরু ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, এখনই হাটে অনেক গরু এসেছে। আগামীতে আরও বেশি আসবে, হয়তো পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে যাবে।

জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার খামারি আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, তার খামারে ১৪টি দেশি গরু ছিল। এর মধ্যে ছয়টি বাড়িতেই বিক্রি করেছেন। তিন মণের বেশি মাংস হবে এমন চারটি গরু তিনি এক লাখ ১০ হাজার টাকা করে বিক্রি করেছেন, আর তুলনামূলক ছোট দুটি গরু বিক্রি হয়েছে ৯৫ হাজার ও ৯৮ হাজার টাকায়।

তিনি আরও জানান, তার খামারে থাকা একটি গরু থেকে পাঁচ মণ মাংস হবে বলে তিনি আশা করছেন এবং সেটি তিন লাখ টাকায় বিক্রির পরিকল্পনা করেছেন। তবে বড় গরুগুলোর এখনও তেমন ক্রেতা পাননি এবং সেগুলো হাটেও তোলেননি। এখন হাটে নিয়ে গিয়ে দাম না পেলে আবার ফিরিয়ে আনতে হবে, তাতে লোকসান হওয়ার আশঙ্কা আছে।

এদিকে, পশুর হাট ঘিরে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিতসহ জাল টাকা শনাক্তকরণ বুথ স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন হাটের ইজারাদার ও ব্যবসায়ীরা। রাজশাহী সিটি হাটের সাব ইজারাদার হাফিজ খায়রুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি পুলিশ কমিশনার, সিটি করপোরেশন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে।

সেখানে আমরা দাবি করেছি, যেহেতু সারাদেশ থেকে সিটি হাটে ক্রেতা-বিক্রেতারা ব্যবসা করতে আসেন, সেহেতু তাদের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। তাই সিটি হাটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি নজরদারির প্রয়োজন আছে। এছাড়াও ব্যবসায়ীদের লোকসান এরাতে জাল টাকা শনাক্তের জন্য এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি বুথের অত্যন্ত প্রয়োজন।

হাটের কেনা-বেচার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা যেহেতু সিটি হাটকেই তাদের পছন্দের জায়গা স্থান হিসেবে বিবেচনা করেন সেহেতু অন্যান্য হাটের তুলনায় এই হাটে ইতিমধ্যেই পশুর ক্রয়-বিক্রয় জমতে শুরু করেছে। এখন প্রতি হাটে গড়ে ১০ থেকে ১৫ হাজার গরু আসছে।

ঈদের আরও কাছাকাছি গেলে এ সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়াতে পারে। এখন ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি। মোটা গরুর চাহিদা কম থাকায় তা শেষ সময়ে হাটে ওঠে, যখন দাম বেশি পাওয়া যায়। ইতোমধ্যে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা হাটে এসে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে দরদাম করে গরু কিনে নিচ্ছেন।

অপরদিকে, হাট ঘিরে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে হাটের ইজারাদার ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সভা করেছেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান। তিনি বলেন, প্রতিটি হাটে সিসি ক্যামেরা, জেনারেটর, স্বেচ্ছাসেবক রাখতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি পানি ও পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে হাট ইজারাদারদের।

হাসিল নিয়ে যেন কোনো দ্বন্দ্ব না হয়, সে বিষয়েও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মহাসড়কের পাশে কোনো পশুর হাট বসানো যাবে না- এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে জানিয়ে পুলিশ কমিশনার বলেন, জাল টাকা শনাক্তকরণ বুথ স্থাপনের জন্য ব্যাংকগুলোকেও অনুরোধ করা হয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হাটকেন্দ্রিক পুলিশ কন্ট্রোল রুম স্থাপন ছাড়াও বাড়ানো হবে গোয়েন্দা নজরদারি। চুরি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি ঠেকাতে নিয়মিত টহলের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল থাকবে।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS