অবশেষে মাউশির রাজশাহীর ডিডি আলমগীরকে বদলি

স্টাফ রিপোর্টার: মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) রাজশাহীর উপ-পরিচালক (ডিডি) ড. আলমগীর কবীরকে বদলি করা হয়েছে।
রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সরকারি কলেজ-২ শাখার এক প্রজ্ঞাপনে আলমগীরকে ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে বদলি করা হয়েছে। আলমগীর কবির ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে মাউশির কলেজ শাখার ডিডি হিসেবে প্রথম রাজশাহীতে যোগদান করেন।
তারপর তাঁর বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। তদন্ত চলাকালে তাঁকে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়েছিল। গত বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি সবেতনে তিনি পরিচালক হওয়ার জন্য তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন। কিন্তু পরিচালক হতে পারেননি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ১৮ নভেম্বর তাঁকে মাউশির আঞ্চলিক কার্যালয়ের ডিডি হিসেবে পদায়ন করা হয়।
এরপর শিক্ষকদের এমপিও এবং বকেয়া বিলের ফাইল আটকে রেখে ঘুষ আদায়ের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। গত বছরের ডিসেম্বরে রাজশাহীর পবা উপজেলার ডাঙ্গেরহাট মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আসলাম আলীকে ফোন করে টাকা দাবি করা হয়। পরে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ আসলাম আলী মাউশির রাজশাহীর পরিচালক মোহা. আছাদুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করে জানান, তার কলেজের ৪৩ জন শিক্ষকের বকেয়া বিলের ৯০ লাখ টাকার ফাইল আটকে আছে ডিডি আলমগীর কবীরের টেবিলে। এ অবস্থায় দ্রুত ফাইল ছাড়তে এক নারী তার কাছে ফোন করে টাকা চেয়েছেন।
পরে গত ১১ মার্চ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযান চালিয়েছিল আলমগীর কবীরের দপ্তরে। তখন অগ্রগতি করার সময় পার হয়ে গেলেও ১৫১টি ফাইল আটকে রাখার প্রমাণ পেয়েছিল দুদক।
এ ব্যাপারে দুদক সদর দপ্তরে একটি প্রতিবেদন পাঠায়। পরে ২৮ মার্চ মাউশির রাজশাহীর পরিচালক ফাইল আটকে রাখাসহ ৭ অভিযোগ এনে ডিডি আলমগীরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিলেন। আলমগীর এর সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি।
পরে আবারও ফাইল আটকে রাখার অভিযোগ উঠলে গত ৩০ এপ্রিল দুদক আবারও তার দপ্তরে অভিযান চালায়। সেদিন ৯১টি ফাইল আটকে রাখার প্রমাণ পায় দুদক। অভিযান শেষে দুদকের সমন্বিত রাজশাহী জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘ডিডি আলমগীরের কাছে ৯২টি ফাইল পেন্ডিং আছে।
ফাইলগুলো অনৈতিকভাবে ধরে রেখে তিনি পরিচালকের কাছে ফরওয়ার্ড করেননি। দুই সপ্তাহ আগে আমরা ওনার বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযান পরিচালনা করেছি। একই অভিযোগে আবরো অভিযান পরিচালনা করলাম। আমি জানি না কোন অদৃশ্য শক্তির বলে এখনো তিনি স্বপদে বহাল আছেন। আমার মনে হয় বিষয়টি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভেবে দেখা উচিত।’
এর ১৭ দিনের মাথায় ডিডি আলমগীর কবীরের বদলির আদেশ হলো। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রোববার দুপুরে তাকে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাই বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
তবে মাউশির রাজশাহীর পরিচালক মোহা. আছাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওনার বদলির আদেশটা দেখলাম। আগামী ২৫ মে’র মধ্যে তাকে অবমুক্ত হতে বলা হয়েছে। তা না হলে তাৎক্ষণিক অবমুক্ত বলে গণ্য হবেন।’ অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই বদলি কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আমি বলতে পারব না। মন্ত্রণালয় বদলি করেছে, কারণ মন্ত্রণালয় জানে।’