ঢাকা | মে ১৮, ২০২৫ - ৪:২১ পূর্বাহ্ন

জুনের শুরুতে বাজারে উঠবে চাঁপাইয়ে আম

  • আপডেট: Saturday, May 17, 2025 - 11:48 pm

ডাবলু কুমার ঘোষ, চাঁপাই থেকে: বাগানে থোকায় থোকায় ঝুলছে নানা জাতের বাহারি সব আম। জুনের প্রথম সপ্তাহেই বাজারে উঠবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সুস্বাদু ফল আম। তাই শেষ মুহূর্তের পরিচর্যায় ব্যস্ত বাগানমালিক ও ব্যবসায়ীরা। সামনে কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা না দিলে এবছর প্রায় ৪ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে।

আর  প্রায় ৫-৬ হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্যের আশা করছে সংশ্লিষ্টরা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. ইয়াছিন আলী জানান, জেলার ৫টি উপজেলায় ৩৭ হাজার ৫শ ৪ হেক্টর জমিতে নানা জাতের আমের চাষ হয়েছে। আবাদকৃত জমিতে আমগাছের সংখ্যা হচ্ছে, ৮ লাখ ৫২ হাজার ৪শ ৯০টি। চলতি বছর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৩ লাখ ৮৬ হাজার ২শ ৯২ মেট্রিক টন। তিনি আরও জানান, আধুনিক ও উন্নত পদ্ধতি এবং বাণিজ্যিকভাবে আমচাষে নতুন নতুন উদ্যোক্তা এগিয়ে আসায় গত ১০ বছেের প্রায় ১৩ হাজার ২শ ৪৪ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ বেড়েছে।

আম গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোখলেসুর রহমান জানান, ভৌগলিক ও উৎপত্তিস্থল এবং সুস্বাদু আমের উৎপাদন হিসেবে এই জেলা প্রসিদ্ধ। তাই বরাবরই এই জেলার মানুষ আমের চাহিদা মিটিয়ে প্রতিবছর প্রায় ৩-৪ লাখ মেট্রিক টন আম দেশের ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, কুমিল্লা, নোয়াখালী, বরিশালসহ বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যকভাবে পাঠিয়ে থাকে।

এছাড়া গত কয়েক বছর ধরে নতুন উদ্যোক্তারা রাশিয়া, মধ্যেপ্রাচ্য ও ইউরোপের কয়েকটি দেশে এই জেলার আম রপ্তানি কেের আসছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক আমচাষের সমস্য বিষয়ে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ জেলার সুস্বাদু আম শুধুমাত্র কেনা-বেচা হয়ে আসছে। ফলে, যেবছর বেশি আম উৎপাদন হয়, সেবছর কৃষকরা আমের ন্যায্য দাম পায় না।

আর কৃষিবিভাগের মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার না থাকায় দীর্ঘ মেয়াদে আমবাগান ইজারা নিয়ে, কিছু ইজারাদার বেশি ফলনের আশায় ক্ষতিকর কালটার (এক প্রকার হরমোন) গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করে সাময়িক বেশি ফলন পেলেও, কয়েকবছর পর সেই গাছগুলো রোগাকান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। এছাড়া জিআই স্বীকৃতি বড় বড় ফজলি আমের তেমন দাম  কয়েক বছর ধেের না পাওয়া এবং তেমন ফলন না পাবার কারণে গাছ কেটে ফেলার হিড়িক চলছে।

শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খান শামিম জানান, আম ব্যবসার প্রধান অন্তরায়, এখন পর্যন্ত সরকারি এবং বেসরকারিভাবে আমভিত্তিক প্রক্রিয়াজাতকরণে কোন উদ্যোগ না নেয়া। অথচ এই জেলায় প্রতি বছর ৪-৫ লাখ টন কাঁচা এবং পাকা আমের উৎপাদন হলেও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এই খাত থেকে বৈদেশিক আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশ।

অন্যদিকে, ম্যাংগো ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব ও উদ্যোক্তা আহসান হাবীব জানান, আধুনিক প্যাকেজিং হাউস স্থাপন, হট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট, রপ্তানিমুখী জোন চিহ্নিতকরণ এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে অবকাঠামোগত কোন উন্নয়ন না হওয়ায় এ জেলার বড় খাত আমশিল্পের বিকাশ ঘটছে না।

তরুণ উদ্যোক্তাদের আমরপ্তানি, বাজারজাতকরণ, পরিবহন, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা না থাকাকে দুষছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বারের সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ। তিনি আরো বলেন, দেশের আম ও আমশিল্পের টেকসই উন্নয়নে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি দেশের ই-কমার্সের ক্ষেত্রে সরকার ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসলে এই খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক আমচাষের সম্ভাবনা বিষয়ে বলেন, আমভিত্তিক প্রক্রিয়াজাতকরণে সরকারি এবং বেসরকারিভাবে উদ্যোগ  নেয়া হলে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বিপুল পরিমান বৈদেশিক আয় সম্ভব। তিনি আরও বলেন, প্রক্রিয়াজাত হিসেবে আমের জুস, জেলি, আমসত্ব, আমের পাউডার, ম্যাংগো বার ও আমচুরসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি সম্ভব।

তরুণ উদ্যোক্তা গোলাম মোস্তফা সমুন আমচাষের সম্ভাবনা বিষয়ে বলেন, সারাবছর আমচাষ, অতি ঘনচাষ পদ্ধতি, আধুনিক এবং বাণিজ্যিকভাবে আমচাষে নতুন নতুন উদ্যোক্তা এগিয়ে আসায় আমের উৎপাদন বেড়েছে। জেলায় প্রতি বছর ৪-৫ লাখ টন আমের উৎপাদন হচ্ছে, তাই এই আমকে প্রক্রিয়াজাত এবং বিদেশে রপ্তানির পরিমাণ বাড়াতে পারলেই আমপ্রক্রিয়াজাতে ২০ হাজার কোটি টাকার আয়ের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. ইয়াছিন আলী আরও জানান, চলতি বছর এ জেলায় ১’শ ২২ জন আমচাষি (উত্তম কৃষিচর্চা) মেনে রপ্তানিযোগ্য আমের আবাদ করেছে ৩’শ ৩৯ হেক্টর জমিতে।

আর গতবার রপ্তানিকৃত আমের পরিমাণ ছিল ৮’শ ৩৯ মেট্রিক টন। আর গত বছর রাশিয়ার ১১টি দেশ, মধ্যেপ্রাচ্যের ৩টি দেশ ও ইউরোপের ৭টি দেশে এই জেলার আম রপ্তানি হয়েছিল। এবছর চীনের রাষ্ট্রদূত ইতিমধ্যে জেলার উত্তম কৃষিচর্চা অনুসরণযোগ্য আমেরবাগান পরিদর্শন করে গেছেন এবং বাংলাদেশ ১ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন আর কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS