ঢাকা | মে ১৬, ২০২৫ - ৫:০১ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

ফারাক্কার কারণে সেচের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের ৬ কোটি মানুষ

  • আপডেট: Friday, May 16, 2025 - 12:40 am

স্টাফ রিপোর্টার: পদ্মার উজানে দেয়া ভারতের ফারাক্কা ব্যারেজের কারণে বাংলাদেশের কমপক্ষে ৬ কোটি মানুষ সেচের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এরমধ্যে উত্তরাঞ্চলের প্রায় ২ কোটি মানুষ সেচের পানির অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এছাড়া দেশের দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলের আরও ৪ কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত।

ঐতিহাসিক ফারাক্কা লং মার্চ দিবস উপলক্ষে রাজশাহীতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঐতিহাসিক ফারাক্কা লং মার্চের ৪৯তম বর্ষপূর্তি উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও নদী গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী। এসময় ফারাক্কা লং মার্চের অংশগ্রহণকারী মাহমুদ জামাল কাদেরীও উপস্থিত ছিলেন।

ফারাক্কার সরাসরি শিকার রাজশাহীর মানুষ উল্লেখ করে মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, বিগত ৪০ বছরের ব্যবধানে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকায় গঙ্গার আয়তন নেমে এসেছে প্রায় অর্ধেকে। পানির প্রবাহ কম থাকার কারণে তলদেশ ক্রমান্বয়ে ভরাট হতে চলেছে। জলজ প্রাণী বিশেষ করে কয়েক প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। গঙ্গার ডলফিন ও ঘড়িয়াল আর দেখা যায় না। আগের মতো পদ্মায় ইলিশের ঝাঁক আর আসে না। মহাবিপর্যয়কর অবস্থায় গঙ্গা অববাহিকার প্রাণবৈচিত্র। নদীকেন্দ্রীক নানা ধরনের পেশা হারিয়ে লাখ লাখ মানুষের জীবনে নেমে এসেছে ভয়াবহ বিপর্যয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১৯৮৪ সালের তুলনায় শুষ্ক মৌসুমে রাজশাহী অংশের গঙ্গায় আয়তন কমেছে ৫০ শতাংশ। পানির গভীরতা কমেছে ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ। প্রবাহ কমেছে ২৬ দশমিক ২ শতাংশ। দক্ষিণের সুন্দরবনে মিঠাপানির সরবরাহ কমেছে ৯০ শতাংশ। ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারিতে গঙ্গায় পানি প্রবাহের পরিমাণ ছিল ৯০,৭৩০ কিউসেক। ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারিতে পানি প্রবাহের পরিমাণ ছিল ৭৫,৪০৯ কিউসেক। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে গঙ্গায় পানি প্রবাহ কমেছে ১৫,৩২১ কিউসেক। যদিও সে বছর গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল পূর্ববর্তী বছর গুলোর তুলনায় ১৯ দশমিক ২ শতাংশ কম।

ফারাক্কা সমস্যা উত্তরণে কিছু করণীয়ও তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে। বলা হয়, ১৯৯৬ সালে সম্পাদিত বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি এখনও বলবৎ।

চুক্তি অনুযায়ী প্রকৃতই বাংলাদেশ পানি পাচ্ছে কিনা এবং কতটুকু পানি পাচ্ছে সেটি জনগণ অবহিত নয়। এখন থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জনগণকে তা জানাতে বাধ্য থাকবেন। ২০২৬ সালে গঙ্গা চুক্তির মেয়াদ শেষ হবার পূর্বেই শক্তিশালী কমিটির দ্বারা এর মূল্যায়ন করতে হবে।

নতুন চুক্তির জন্য হালনাগাদ তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে হোম ওয়ার্ক সম্পন্ন পূর্বক পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি গ্রহণ করা জরুরি। নতুন চুক্তিতে ১৯৭৭ সালের চুক্তির অনরূপ গ্যারান্টিক্লস অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যৌথ নদী কমিশনে নেপালকে অন্তর্ভুক্ত করে নিয়মানুযায়ী যথাসময়ে বৈঠক করতে হবে। সরকারিভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অভিন্ন নদীর সংখ্যা ৫৪টি যা মোটেই নির্ভুল নয়। প্রকৃত সংখ্যা এর প্রায় তিনগুণ অধিক।

দেশের স্বার্থে অনতিবিলম্বে একটি বিশেষজ্ঞ দল গঠন করে সরেজমিন পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে নতুন করে তালিকা প্রস্তুত পূর্বক ভারতকে অবহিত করা সময়ের দাবি। ভারত ইতিমধ্যেই এক তরফাভাবে আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়ণে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদীর পানি প্রত্যাহার করতে শুরু করেছে যার বিরূপ প্রভাব ভাটির বাংলাদেশে পড়তে শুরু করেছে। পানি প্রত্যাহারে সৃষ্ট প্রভাব নিরূপনে পানি সম্পদ, কৃষি, পরিবেশ অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক নদী আইন বিশেষ পারদর্শী বিশেষজ্ঞদের নিয়ে অবিলম্বে একটি কমিটি গঠন করতে হবে।

এই কমিটি তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করে একটি দলিল প্রণয়ন করবেন। প্রয়োজনে ভারত কর্তৃক নদী আইন লংঙ্ঘনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্ত হতে হবে। অভিন্ন নদীর পানি সমস্যা শুধুমাত্র বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনায় সমাধান সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক নদীর পানি সুষ্ঠু ব্যবহারের স্বার্থে জাতিসংঘ ও বিশ্ব ব্যাঙ্কের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, চীন, ভুটান ও মিয়ানমারকে নিয়ে একটি আঞ্চলিক পানি ফোরাম বা নদী কমিশন গঠন করতে হবে।

কমিশন এ অঞ্চলের নদী অববাহিকাতে পানির সুষম বন্টন, পরিবেশ সংরক্ষণ সহ নদী তীরবর্তী জনপদগুলোর আর্থিক ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। যেহেতু প্রতিবেশী দেশ ভারত অভিন্ন নদীর পানি এক তরফাভাবে প্রত্যাহার করে বাংলাদেশকে সার্বিকভাবে বিপর্যয়কর অবস্থায় ফেলেছে সেকারণে ভারতকে প্রতিনিয়ত চাপ সৃষ্টি করতে হবে যেন শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ সচল থাকে।

এক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে শক্তিশালী ঐক্যের প্রয়োজন। ভারত বাংলাদেশের ন্যায্য আহ্বানে সাড়া না দিলে এদেশের মানুষ ও প্রাণ প্রকৃতি রক্ষার স্বার্থে শক্তিশালী বন্ধু দেশের পরামর্শ ও সহযোগিতা গ্রহণে সচেষ্ট হতে হবে। গঙ্গায় ফারাক্কা এবং তিস্তা ও বরাকসহ সকল অভিন্ন নদীর পানি প্রত্যাহারের ফলে এখন অবধি বাংলাদেশের আর্থিক কত ক্ষতি হয়েছে তা বিশেষজ্ঞ কমিটি দ্বারা নিরূপন করে ভারতের কাছে অবিলম্বে ক্ষতিপূরণ দাবি করতে হবে।

মাহবুব সিদ্দিকী জানান, ফারাক্কার সমস্যার সমাধানে করণীয় বিষয়ে দ্রুতই তারা অন্তর্বর্তী সরকারের সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টার সঙ্গে বসবেন।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS