ঢাকা | জুন ৮, ২০২৫ - ১:৩১ পূর্বাহ্ন

গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৮০

  • আপডেট: Thursday, May 15, 2025 - 10:41 am

অনলাইন ডেস্ক: গাজার উদ্ধারকারীরা জানিয়েছে, বুধবার ভোর থেকে ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজাজুড়ে অন্তত ৮০ জন নিহত হয়েছেন। এসময় ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রের দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে গাজায় আটক বন্দীদের মুক্তির বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

গাজা সিটি থেকে এএফপি জানায়, গাজায় আটক বন্দিদের মুক্তি নিয়ে দোহায় সাম্প্রতিক আলোচনা চলছে, যেখানে বুধবার সফরে গেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানায়, তিনি উইটকফ ও তার আলোচক দলের সঙ্গে ‘বন্দি ও নিখোঁজদের’ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন।

পরে উইটকফ বলেন, ‘গাজা সংক্রান্ত একটি চুক্তি নিয়ে কাতারের আমিরের সঙ্গে ট্রাম্পের খুবই ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। আমরা অগ্রসর হচ্ছি এবং আমাদের হাতে একটি ভালো পরিকল্পনা আছে।’

এদিকে গাজাজুড়ে লড়াই তীব্রতর হচ্ছে। গাজার সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল-মুগাইয়্যির এএফপিকে জানান, ভোর থেকে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৮০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৫৯ জন গাজার উত্তরাঞ্চলে।

উত্তর গাজার জাবালিয়া এলাকায় এক হামলার পর ধারণ করা এএফপির ফুটেজে দেখা যায়, ধসে পড়া ভবনের স্তূপ, মাটির নিচে চাপা পড়া ধাতব কাঠামো এবং ধ্বংসাবশেষের ভেতর ব্যক্তিগত জিনিসপত্র খুঁজে ফিরছে ফিলিস্তিনিরা, যাদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে।

আরেক ফুটেজে দেখা যায়, উত্তরের শোকাহত নারীরা রক্তাক্ত কাফনে মোড়ানো মরদেহের পাশে কাঁদছেন।

একজন আর্তনাদ করে বলছিলেন, ‘সে মাত্র নয় মাস বয়সী শিশু। কী করেছে সে?’

নিজের আত্মীয় হারানো হাসান মুকবেল এএফপিকে বলেন, ‘এখানে কোনো ঘর বাসযোগ্য নেই। আমার মাথার ওপর ছাদ নেই, খাবার নেই, পানি নেই। যারা বিমান হামলায় মরছে না, তারা ক্ষুধায় মরছে। যারা ক্ষুধায় মরছে না, তারা চিকিৎসার অভাবে মরছে।’

বুধবার ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজা সিটির একাংশের বাসিন্দাদের সরিয়ে যেতে বলে হুঁশিয়ার করে জানায়, তারা ‘পুরো শক্তি দিয়ে’ ওই এলাকা আক্রমণ করবে।

– ‘অযৌক্তিক’ –

অধিকৃত পশ্চিম তীর থেকে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বুধবার বলেন, গাজায় তিনি ‘যেকোনো মূল্যে যুদ্ধবিরতি’-র পক্ষপাতী। নেতানিয়াহুকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘তিনি নিজের স্বার্থে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চান।’

উত্তর গাজার ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মোহাম্মদ আওয়াদ বলেন, সরঞ্জামের অভাবে জাবালিয়ার আহতদের যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, ‘বিছানা নেই, ওষুধ নেই, অস্ত্রোপচার বা চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই, ফলে অনেক আহতকে বাঁচানো যাচ্ছে না, তারা চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছে।’

তিনি আরও জানান, ‘হাসপাতালের মরচুয়ারি পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর এখন শহীদদের মরদেহ হাসপাতালের করিডোরে পড়ে আছে। পরিস্থিতি প্রতিটি দিক থেকে ভয়াবহ।’

গত ২ মার্চ থেকে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে ইসরায়েল, যখন ১৯ জানুয়ারির যুদ্ধবিরতি নবায়নের আলোচনা ভেঙে পড়ে।

এর ফলে খাদ্য ও ওষুধের সংকট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে, যদিও জাতিসংঘ গাজার দুর্ভিক্ষ নিয়ে যে সতর্কতা দিয়েছে, তা ইসরাইল অস্বীকার করেছে।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বুধবার গাজায় ‘সব বন্দির তাৎক্ষণিক ও নিঃশর্ত মুক্তি, অবাধ মানবিক সহায়তা প্রবেশ এবং যুদ্ধবিরতি’-র আহ্বান জানিয়েছেন।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি গাজার মানবিক পরিস্থিতিকে ‘ক্রমেই আরও মর্মান্তিক ও অযৌক্তিক’ বলে অভিহিত করেছেন।

ইসরাইলের সামরিক নিরাপত্তার আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে যে ত্রাণ বিতরণ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তা জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবিক সংস্থাকে পাশ কাটিয়ে গাজার বর্তমান ত্রাণ কাঠামো পুরোপুরি পাল্টে দেওয়ার আশঙ্কায় আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়েছে।

– ‘পুরো শক্তি’ –

মেডেসিনস স্যাঁ ফ্রঁতিয়ে (এমএসএফ) এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরাইলের এ পরিকল্পনা ‘জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির বিনিময়ে সহায়তা প্রদান’-কে শর্ত হিসেবে দাঁড় করাচ্ছে এবং পুরো জনগোষ্ঠীকে যাচাই-বাছাইয়ের আওতায় নিয়ে আসছে।

তারা আরও জানায়, ইসরাইল এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে, যা ‘গাজায় ফিলিস্তিনিদের জীবনের নিশ্চিহ্নতা’-র দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

গত ১৮ মার্চ ইসরাইল আবারও গাজাজুড়ে ব্যাপক অভিযান শুরু করে এবং এর পর থেকেই সেখানে দীর্ঘমেয়াদি উপস্থিতি বজায় রাখার পরিকল্পনার কথা জানায়।

সোমবার মার্কিন-ইসরাইলি বন্দী ইদান আলেক্সান্ডার মুক্তির সময় বিমান হামলায় সাময়িক বিরতি দেওয়া হলেও, পরে তা আবার শুরু হয়।

সেদিনই নেতানিয়াহু বলেন, ইসরাইলি বাহিনী ‘আগামী দিনে পুরো শক্তি নিয়ে’ গাজায় প্রবেশ করবে।

তিনি আরও জানান, তার সরকার এমন দেশ খুঁজছে, যারা গাজার জনগণকে আশ্রয় দিতে রাজি।

চলতি মাসের শুরুতে ইসরাইলি সরকার গাজা অভিযানের সম্প্রসারণের অনুমোদন দেয় এবং সেখানে ‘দখল’ প্রতিষ্ঠার কথাও বলে।

২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের হামলায় ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়, যাদের মধ্যে এখনো ৫৭ জন গাজায় রয়েছে। এর মধ্যে ৩৪ জনের মৃত্যুর বিষয়টি ইসরাইলি সেনাবাহিনী নিশ্চিত করেছে।

ওই হামলায় ইসরাইলি দিকের ১,২১৮ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক বলে সরকারি হিসাব অনুযায়ী এএফপির তথ্যে জানা যায়।

এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইলি অভিযানে এখন পর্যন্ত গাজায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫২,৯২৮ জন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক। এ সংখ্যা গাজার হামাস-শাসিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব, যা জাতিসংঘ বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করে।

সূত্র: বাসস

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS