বিএসসি ও ডিপ্লোমা নার্সদের সংঘর্ষ নগরীতে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি, তদন্ত কমিটি গঠন

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী নার্সিং কলেজে হামলা, পাল্টা হামলা ও মারধরের ঘটনায় ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ তদন্ত কমিটি গঠিত হয়।
কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. আজাদুল হক আজাদ, সদস্য সচিব সহকারী পরিচালক ডা. আবু তালেহ এবং সদস্য ডা. মনোয়ার তারিক সাবু, ডা. মোরশেদ জামান মিয়া এবং বিএসসি ও ডিপ্লোমা ইন নার্সিং এর ৩ জন প্রতিনিধি।
এর আগে বুধবার রাজশাহী নার্সিং কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে দুপুর ১২টার মধ্যে আবাসিক শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়। বুধবার সকালে কলেজের অধ্যক্ষ মতিয়ারা খাতুন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দেয়া হয়। এ আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে নার্সিং কলেজে সিনিয়র স্টাফ নার্স ও ডিপ্লোমা ইন্টার্ন নার্সদের ওপর বিএসসি ইন নার্সিং ছাত্রদের হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে এ মানববন্ধনের আয়োজন করেন হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স ও ডিপ্লোমা ইন্টার্ন নার্সরা।
মানববন্ধনে বক্তারা হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান এবং দ্রুত তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান। নার্সদের অভিযোগ, গত ১২ মে একটি কেন্দ্রীয় বিজ্ঞপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে সারাদেশে নার্সিং শিক্ষকদের জরুরি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
তার অংশ হিসেবে রাজশাহী নার্সিং কলেজের শিক্ষকবৃন্দ এবং রামেক হাসপাতালের কিছু সিনিয়র স্টাফ নার্স কলেজের অডিটোরিয়ামে একটি সভায় অংশ নিতে গেলে ছাত্রলীগের কয়েকজন সদস্য তাদের ওপর হামলা চালায়।
অভিযোগ অনুযায়ী, বেসিক বিএসসি ইন নার্সিং-এর কিছু ছাত্র প্রথমে কলেজে উপস্থিত সিনিয়র নার্সদের গালিগালাজ ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে এবং একপর্যায়ে তাদের কলেজ ভবনে তালাবদ্ধ করে রাখে। ঘটনা জানাজানি হলে আরও নার্স ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে তাদেরও লাঠি, হকিস্টিক, রড ও অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে হামলা করা হয়।
এতে অন্তত ৭ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স গুরুতরভাবে আহত হন এবং বর্তমানে তারা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মানববন্ধনে উপস্থিত নার্সরা জানান, এই ধরনের বর্বর হামলা নার্সিং পেশার জন্য অপমানজনক ও অমানবিক।
তারা অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। আন্দোলনরত নার্সরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, প্রয়োজন হলে তারা আরও কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবেন।
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন সিনিয়র স্টাফ নার্স মামুনুর রশীদ, কামরুল ইসলাম, রিমা খাতুন ও খুশি হালদার। বক্তারা একমত হন, যত দ্রুত সম্ভব এই ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে নার্সদের ওপর এ ধরনের ন্যাক্কারজনক হামলার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
অন্যদিকে, রাজশাহী নার্সিং কলেজের বিএসসি ইন নার্সিং (বেসিক) শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস ছেড়ে যাননি। তাদের দাবি আদায়ে বৃহস্পতিবারও ক্যাম্পাসে অবস্থান করে তারা কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করেছেন। পরে সংবাদ সম্মেলন করে সেদিনের প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরে রামেক হাসপাতালে কর্মরত হামলাকারী ডিপ্লোমা নার্সদের শাস্তি দাবি করেছেন।
উল্লেখ্য, ডিপ্লোমা (সিনিয়র স্টাফ নার্স) কোর্সের শিক্ষার্থীরা তাদের বিএ-এর সমমান দেয়ার দাবিতে টানা আন্দোলন করে আসছেন। আর এটি না করার দাবিতে আন্দোলন করছেন বিএসসি নার্সিং (বেসিক) কোর্সের শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে মঙ্গলবার দুপক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। এতে দুপক্ষের অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হন। এর জের ধরে কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়।