ঢাকা | মে ১৬, ২০২৫ - ৫:১৮ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

তানোরের বিল কুমারীতে গরুর পাল

  • আপডেট: Thursday, May 15, 2025 - 11:57 pm

মাঠ থেকেই বিক্রি হয় দুধ

তানোর প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোর উপজেলার বিল কুমারী বিলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার রানীহাটি এলাকার রফিকুল ইসলাম (৬২)। তিনি ৫০টি গাভী গরু নিয়ে এসেছেন অন্য আরও ৮ জনের সাথে তানোর বিল কুমারী বিলে।

এই ৮ জনের গরুর পালে তাদের ৪শ’র বেশি গাভী গরু ও বাছুর আছে। গরুর এই পাল নিয়ে তারা ঘুরে বেড়ান এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় (এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায়)।

যে জমি ফাঁকা থাকে এবং খাবার পাওয়া যায়; সেখানেই তারা ছুটে বেড়ান এই গরুর পাল নিয়ে। মাঠেই তাদের বসবাস, মাঠ থেকেই বিক্রি করেন গরুর দুধ। গরুর দুধ বিক্রি করেই চলে তার সংসার।

বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রাণ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত তানোর উপজেলার মাঠে-মাঠে এক সময় দেখা মিলতো কৃষকদের গোয়াল ঘরের গরুর পাল। কিন্তু জমি ফাঁকা পড়ে না থাকায় এখন আর সেই দৃশ্য চোকে পড়ে না।

কৃষকদের গোয়াল ঘরের সেই মাঠে চরানো গরুর পাল এখন আর দেখা যায় না। তবে সম্প্রতি গত কয়েকদিন থেকে তানোরের বিল কুমারী বিলে দেখা যাচ্ছে বিশাল এই গরুর পাল। বিলে কথা হয় রফিকুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, প্রাকৃতিকভাবে গরু মোটা তাজা করে ভাদ্র মাসে অন্তত ১৫টি গরু বিক্রি করার লক্ষ্য তার।

 তিনি বলেন, সাধারণত ভাদ্র মাসে গরুগুলোর স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং দামও ভালো পাওয়া যায়। তিনি বলেন, বংশ পরম্পরায় চলে আসা এই আদি পেশা এখনো ধরে রেখেছেন অনেকেই। লাভজনক হওয়ায় নতুন করেও অনেকে যুক্ত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, আমরা ৮ জন মিলে গরুর পাল নিয়ে বের হই।

এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় যাই। যেখানে গরুর খাবার পাওয়া যায়, সেখানেই যাই। কখনো কখনো রাজশাহীর গোদাগাড়ী, তানোর উপজেলাতেও আসি।

এক জায়গায় ১৫ থেকে ২০ দিন অবস্থান করি। তারপর পালা করে একেক জন বাড়ি আসি। একসাথে কয়েকজনের গরু এভাবে পালন করা হয়। প্রতি মাসে প্রায় ৪০ হাজার টাকার দুধ বিক্রি হয়। এছাড়াও প্রতি বছর ১৫ থেকে ২০টি গরু বিক্রি করে ছয় থেকে সাত লাখ টাকা আয় হয়। আমরা দেশি জাতের গরু পালন করি।

এগুলো অত্যন্ত সহনশীল, সব পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। অসুখ হয় কম। যখন যেখানে থাকি সেখানে গোয়ালা ঠিক করা হয়, তারা এসে দুধ সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। তার সঙ্গেই থাকা লাল মোহাম্মদ বলেন, গত প্রায় ১০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। বর্তমানে তার ৪০টি গরু রয়েছে।

তিনি বলেন, প্রতি মাসে দুধ বিক্রি করে ১০ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা এবং গরু বিক্রি করে বছরে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা আয় হয়।  তিনি বলেন, গরু নিয়ে আমরা সব উপজেলায় যাই। রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলাতেও যাই। অনেকে বেতন দিয়ে রাখাল রেখে দেয়। সাধারণত এক জায়গায় আমরা ১৫ থেকে ২০ দিন থাকি।

রাতে কোনো একটা গাছের নিচে পলিথিন দিয়ে তাঁবু টানিয়ে পালা করে ঘুমাই। গরুগুলো এক জায়গায় থাকে। দুধ বিক্রির টাকায় আমাদের দৈনন্দিন খরচ চলে। বাড়ির চাহিদাও পূরণ হয়। আর গরু বিক্রির টাকা জমানো চেষ্টা করি। সাংসারিক কাজেও ব্যয় হয়। তিনি আরও বলেন, টাকার জন্য কখনো ভাবতে হয় না।

চিকিৎসার খরচ, বিয়ে বা অন্য কোনো অনুষ্ঠানে টাকার প্রয়োজন হলে একটা গরু বিক্রি করে দিই। ভাদ্র মাসে গরুর দাম বেশি থাকে। অনেক সময় পালে গরুর সংখ্যা বেড়ে গেলেও বিক্রি করে দেয়া হয়। বর্ষায় টানা বৃষ্টি বা বন্যা হলে একটু সমস্যায় পড়তে হয়।

বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে যায়, গরুর খাবার পাওয়া যায় না। তখন কিনে খাওয়াতে হয়। গরু লালন পালনই তাদের জিবীকার একমাত্র পেশা।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS