দুর্গাপুর প্রতিনিধি: রাজশাহীর দুর্গাপুরে বরেন্দ্রের ডিপ টিউবওয়েল নিয়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় হাসিবুর রহমান (২৫) নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে।

গত বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলার মাড়িয়া ইউনিয়নের হোজা অনন্তকান্দি দক্ষিণপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ওই যুবকের বাবার নাম আবুল কাশেম।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হোজা অনন্তকান্দি দক্ষিণপাড়া গ্রামের দুইটি ডিপ টিউবওয়েল দখল নিয়ে দুই গ্রুপ রেজাউক হক ও আবুল কাশেম পক্ষের দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছিল। তারা দুইজনই বিএনপির সমর্থক।

গত রমজান মাসে আবুল কাশেমের ছেলে নিহত হাসিবুর রহমান একটি ডিপ টিউবওয়েলে তালা ঝুলিয়ে দেন। এ নিয়ে স্থানীয় ভাবে সালিশ দরবার হয়েছে। তারপরও দুই পক্ষের প্রচন্ড রেষারেষি চলে আসছিল। গত মঙ্গলবার দুপুরে নিহত হাসিবুর তার ফুফাতো ভাই শফিকুল ইসলামের জমি মাপজোখ করার সময় তিনি মাপের ফিতা টানছিলেন।

এ সময় হাসিবুরের সঙ্গে মাপজোখ নিয়ে প্রতিপক্ষ পক্ষ ওয়াজেদ আলীর সঙ্গে কথাকাটি হয়। পরদিন বুধবার এসব ঘটনার জেরধরে প্রতিপক্ষ শাহিন ইসলামের সঙ্গে আবারও বিবাদে জড়িয়ে পড়েন হাসিবুরের লোকজন।

ওইদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে হাসিবুর বাড়ি থেকে বের হলে প্রতিপক্ষের লোকেরা রামদা দিয়ে কোপালে হাসিবুরের হাত ও শরীরে বিভিন্ন অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে তাকে রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে নেয়া হলে তিনি সেখানে মারা যান।

এতে উভয় পক্ষের অনন্ত ১০ জন আহত হয়। এদের মধ্যে আব্দুর রহিম (৫০), ফারুক হোসেন (৪০) নামের দুইজনের অবস্থা গুরুতর। তাদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র আইসিইউতে রাখা হয়েছে। আহত অন্যরা হলেন, আব্দুল হান্নান (৪৫), ওয়াজেদ আলী (৫০), সুনু (৪২), রাহিম (৪০), দুলু (৪৫)। আহতদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নিহত হাসিবুরের বোন কুলসুমা খাতুন বলেন, ভাইকে তারা রামদা দিয়ে কোপালো আমরা কিছুই করতে পারলাম না। গত রমজান মাস থেকে পানি সেচের ডিপ টিউবওয়েল কেন্দ্র করে আমার আব্বা কাশেম ও ভাই হাসিবুরের সঙ্গে তাদের বিরোধ চলছিল।

মঙ্গলবার ফুফাতো শফিকুলের জমি মাপজোখ করতে যেয়ে তাদের সঙ্গে আবারও দ্বন্দ্ব বাধে। পর দিন বুধবার সারাদিন ভালই ছিল। ভাই মাগরিবের নামাজের জন্য বাড়ি থেকে বের হলে, প্রতিপক্ষ রেজাউল হকের লোকজন জামরুল ইসলাম জামু, ওয়াজেদ, ফরিদ উদ্দিন, বাবু হোসেন, শাহিনরা রামদা দিয়ে আমার ভাই কুপিয়ে মারে।

এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে ঘটনা স্থলে গিয়ে দেখা যায়, রেজাউলের দোকান ঘরের সামনের অংশ ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।

দুপুরে আত্নীয় স্বজনরা হকের বাড়ি থেকে একটি গরু গাড়িতে করে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। এছাড়া শাহিনের তালাবদ্ধ বাড়ির মেইন গেটে ভাঙাচুরা দেখা গেছে।

তবে অভিয্ক্তুদের বাড়িতে কেউ না থাকায় তাদের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। জানতে চাইলে দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুরুল হোদা বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে। পুলিশ সহ সেনাসদস্যেরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ছিলেন। ওসি বলেন, দীর্ঘ দিনের বিরোধের জেরধরে সংঘর্ষে একজন মারা গেছেন। এ ঘটনায় মামলার প্রন্তুতি চলছে।