ঢাকা | মে ১৪, ২০২৫ - ৩:৩২ পূর্বাহ্ন

এনবিআর কেন বিভক্ত হয়েছে ব্যাখ্যা দিলো প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

  • আপডেট: Wednesday, May 14, 2025 - 12:35 am

সোনালী ডেস্ক: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি বড় কাঠামোগত সংস্কারের ঘোষণা দিয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভেঙে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুটি স্বতন্ত্র সংস্থা- রাজস্ব নীতি বিভাগ এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে। দক্ষতা উন্নত, স্বার্থের দ্বন্দ্ব হ্রাস এবং দেশে করের ভিত্তিকে প্রশস্ত করতে কর প্রশাসন থেকে কর নীতি নির্ধারণকে পৃথক করা- এই সিদ্ধান্তের লক্ষ্য।

গতকাল মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এই তথ্য জানান। এতে বলা হয়, পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় আগে প্রতিষ্ঠিত এনবিআর ধারাবাহিকভাবে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত প্রায় ৭ দশমিক ৪ শতাংশ, যা এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন।

প্রসঙ্গত, বৈশ্বিক গড় ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ এবং মালয়েশিয়ায় ১১ দশমিক ৬ শতাংশ। জনগণের উন্নয়ন আকাক্সক্ষা অর্জন করতে হলে বাংলাদেশকে তার কর-জিডিপি অনুপাত কমপক্ষে ১০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। ব্যাখ্যায় বলা হয়, এই লক্ষ্যে এনবিআরের পুনর্গঠন জরুরি। ক্রমবর্ধমান ঐকমত্য রয়েছে যে- কোনো একক প্রতিষ্ঠান কর নীতি তৈরি এবং এটি প্রয়োগ উভয়ের জন্য দায়বদ্ধ হওয়া উচিত নয়- এই জাতীয় ব্যবস্থা আগ্রহের দ্বন্দ্বের জন্ম দেয় এবং অদক্ষতাকে উৎসাহ দেয়।

বছরের পর বছর ধরেই বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে আসছেন যে, নীতিমালাগুলো প্রায়ই ন্যায্যতা, প্রবৃদ্ধি এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার চেয়ে রাজস্ব আদায়কে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যাখ্যায় বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বেশ কিছু ইস্যু এনবিআরকে জর্জরিত করেছে।

স্বার্থের সংঘাত: নীতি নির্ধারণী ও প্রয়োগ উভয়ই এক ছাদের নিচে থাকার ফলে কর নীতির সঙ্গে আপস করা এবং ব্যাপক অনিয়মের সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান ব্যবস্থায় কর আদায়ের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা কোনো জবাবদিহি কাঠামোর আওতায় পড়ে না এবং তারা প্রায়ই জনস্বার্থের সঙ্গে আপস করে কর খেলাপিদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ে দরকষাকষি করতে সক্ষম হন।

অনেক ক্ষেত্রেই কর ফাঁকিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এবং ব্যক্তিগত স্বার্থে তাদের সহায়তা করতে নারাজ কর আদায়কারীরা। কর আদায়কারীদের কর্মক্ষমতা নিরপেক্ষভাবে পরিমাপ করার জন্য কোনো সিস্টেম এবং প্রক্রিয়া নেই এবং তাদের ক্যারিয়ারের অগ্রগতি পরিমাপযোগ্য পারফরম্যান্স সূচকগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়নি।

অদক্ষ রাজস্ব আদায়: দ্বৈত ম্যান্ডেট নীতি প্রণয়ন এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি উভয় ক্ষেত্রেই ফোকাস হ্রাস করেছে। ফলে করের আওতা সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে এবং রাজস্ব আদায় সম্ভাবনার তুলনায় অনেক পিছিয়ে পড়েছে।

দুর্বল প্রশাসন: এনবিআর অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রয়োগ, দুর্বল বিনিয়োগ সহজীকরণ এবং পদ্ধতিগত সুশাসন সমস্যায় ভুগছে, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট করেছে এবং আইনের শাসনকে দুর্বল করেছে।

আমলাতান্ত্রিক জটিলতা: বিদ্যমান কাঠামো- যেখানে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের প্রধানও এনবিআরের নেতৃত্ব দেন- বিভ্রান্তি এবং অদক্ষতা তৈরি করেছে, কার্যকর কর নীতি নকশা এবং বিতরণকে বাধাগ্রস্ত করছে।

হতাশা এবং অভ্যন্তরীণ উত্তেজনা: সংস্কার প্রক্রিয়াটি অভিজ্ঞ কর ও শুল্ক কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, যাদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন যে তারা একপাশে থাকতে পারেন বা উপেক্ষা করা হতে পারে।

পুনর্গঠন কীভাবে সাহায্য করবে: নতুন কাঠামোটি একটি পরিষ্কার, আরও জবাবদিহিমূলক কাঠামোর মাধ্যমে এই দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাগুলো সমাধান করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।

দায়িত্বের সুস্পষ্ট বিভাজন: রাজস্ব নীতি বিভাগ কর আইনের খসড়া তৈরি, হার নির্ধারণ এবং আন্তর্জাতিক কর চুক্তি পরিচালনার জন্য দায়বদ্ধ থাকবে। রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ প্রয়োগ, নিরীক্ষা এবং সম্মতি তত্ত্বাবধান করবে। এই বিভাজন নিশ্চিত করে যে, করের বাধ্যবাধকতা নির্ধারণকারী কর্মকর্তারা তাদের সংগ্রহকারীদের মতো নয়, যে কোনো ধরণের ষড়যন্ত্রের সুযোগ দূর করে।

দক্ষতা ও সুশাসনের উন্নতি: প্রতিটি বিভাগকে তার মূল ম্যান্ডেটের দিকে মনোনিবেশ করার সুযোগ দিয়ে সংস্কারটি বিশেষীকরণ বাড়াবে, স্বার্থের দ্বন্দ্ব হ্রাস করবে এবং প্রাতিষ্ঠানিক অখণ্ডতা উন্নত করবে।

সম্প্রসারিত করের ভিত্তি এবং শক্তিশালী প্রত্যক্ষ কর: এই সংস্কারের ফলে কর জাল আরও প্রশস্ত হবে, পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে এবং উপযুক্ত ভূমিকায় দক্ষ পেশাদারদের নিয়োগ দিয়ে প্রত্যক্ষ কর সংগ্রহ জোরদার হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

উন্নততর, আরও উন্নয়নমুখী নীতি: একটি ডেডিকেটেড পলিসি ইউনিট কেবল স্বল্পমেয়াদী রাজস্ব লক্ষ্য দ্বারা চালিত প্রতিক্রিয়াশীল নীতিগুলোর পরিবর্তে প্রমাণভিত্তিক, দূরদর্শী কর কৌশলগুলো তৈরি করতে পারে।

বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি: স্বচ্ছ, অনুমানযোগ্য নীতি এবং একটি পেশাদার কর প্রশাসন বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে এবং বেসরকারি খাত থেকে অভিযোগ হ্রাস করবে বলে আশা করা হচ্ছে। চূড়ান্তভাবে, এই পুনর্গঠন কেবল একটি আমলাতান্ত্রিক রদবদল নয়- এটি একটি ন্যায্য, আরও সক্ষম কর ব্যবস্থা গড়ে তোলার দিকে একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।

বাংলাদেশের সব নাগরিকের চাহিদা পূরণ ও আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে শক্তিশালী নীতি প্রণয়ন ও স্বচ্ছ কর প্রশাসন অত্যাবশ্যকীয় হবে। প্রসঙ্গত, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে রাজস্ব খাতকে দুটি পৃথক বিভাগে ভাগ করে অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার। গত সোমবার রাতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অনুমোদনের পর ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করা হয়। এরফলে ‘এনবিআর’ নামে প্রতিষ্ঠানটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS