আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ হারালেন টিউলিপ, জারি হবে রেড অ্যালার্ট: দুদক চেয়ারম্যান

সোনালী ডেস্ক: শেখ হাসিনার ভাগনি ও সাবেক ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তলবে হাজির না হয়ে আত্মপক্ষ্ম সমর্থনের সুযোগ হারিয়েছেন বলে জানিয়েছেন দুদকের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।
তিনি বলেছেন, ‘টিউলিপ আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ হারালেন। কেউ উপস্থিত না হলে পরে আন্তর্জাতিকভাবে যে পদ্ধতি, সেটা অনুসরণ করা হবে।’
বুধবার দুদকের তলবে নির্ধারিত সময়ে সাবেক ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের হাজির না হওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দুদকের চেয়ারম্যান এ কথা বলেন।
এ সময় তিনি আরও জানান, দুদকের মামলায় পলাতক ব্যক্তিদের দেশে ফেরত আনার বিষয়ে বহিঃসমর্পণ চুক্তি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার করে গেছে।
আবদুল মোমেন বলেন, ‘আপনারা জানেন, কয়েকটা দেশের সঙ্গে আমাদের ‘‘এক্সট্রাডিশন ট্রিটি’’ (বহিঃসমর্পণ চুক্তি) চুক্তি রয়েছে, তার মধ্যে ভারত একটা। এই সুযোগ তৎকালীন সরকার ২০১১ সালে তৈরি করে গেছে। এই চুক্তি যেসব দেশের সঙ্গে আছে, সেসব দেশ থেকে অপরাধী ধরে আনার ক্ষেত্রে আইনগত কোনো অসুবিধা নেই।’
শেখ হাসিনার ভাগনি ও সাবেক ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক দুদকের তলবে হাজির না হয়ে আত্মপক্ষ্ম সমর্থনের সুযোগ হারিয়েছেন জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, প্রত্যেক নাগরিকের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে।
যেকোনো নাগরিকই সেটা পাবেন। শুধু টিউলিপ নন, নিয়মানুযায়ী সবাই সে সুযোগ পাবেন। তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ হারালেন। কেউ উপস্থিত না হলে পরে আন্তর্জাতিকভাবে যে পদ্ধতি, সেটা অনুসরণ করা হবে।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের অন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মতো তিনিও একজন অভিযুক্ত। আজকে তাঁর দুদকে এসে বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি আসেননি।
তিনি নিজে এটা ফেস করবেন, আমরা আমাদের পদ্ধতিগতভাবে এগিয়ে যাব। একজন মামলার আসামি অনুপস্থিত থাকলে ইন অ্যাবসেন্স ট্রায়াল হয়। পরে তিনি যদি আদালতে হাজির না হন, আমরা আন্তর্জাতিক যে পদ্ধতি রয়েছে, সেটা অবলম্বন করব।’
টিউলিপ সিদ্দিকসহ দুদকের অন্যান্য মামলায় যাঁরা আসামি রয়েছেন, তাঁদের স্বাভাবিকভাবে না পাওয়া গেলে তাঁরা বিদেশি নাগরিক হন কিংবা পলাতক হন, সে ক্ষেত্রে দুদক ইন্টারপোলের সহায়তায় রেড অ্যালার্ট জারি করবে বলে জানান তিনি।
এ সময় বিমানবন্দরের চারটি বড় প্রকল্পের দুর্নীতি অনুসন্ধানের অগ্রগতি হয়েছে বলেও জানান মোমেন। থার্ড টার্মিনাল, রাডার স্থাপন, কক্সবাজার বিমানবন্দর ও সিলেট বিমানবন্দর সিভিল অ্যাভিয়েশনের এই চারটি প্রকল্পের প্রতিবেদন অচিরেই সাংবাদিকদের জানানো হবে বলে জানান তিনি।
বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার বিষয়টি কঠিন জানিয়ে দুদক চেয়রাম্যান বলেন, ‘এটা কঠিন। আগে শনাক্ত করতে হবে টাকা কারা পাচার করেন। এর আগে আমাদের কমিশন থেকে সরকারকে অবহিত করা হয়েছে, যাঁরা বিদেশে অবস্থান করেন কিংবা বিদেশে নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন, তাঁদের সন্তান-সন্ততি যাঁরা ওখানে থাকছেন, অধিকাংশই কিন্তু বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার করে চলে যাচ্ছেন।’
দুদক চেয়রাম্যান বলেন, ‘আমরা যদি ৫ আগস্টকে একটি বেঞ্চমার্ক ধরি, তখন যাঁরা দেশের বাইরে পালিয়ে গেছেন, তাঁদের যেসব সম্পদ গুলশান-বনানীসহ বিভিন্ন জায়গায় আছে, তাঁরা তাঁদের প্রোপার্টি বিক্রি করছেন কি না, করলে সেই টাকা কোথায় যাচ্ছে, এই সংবাদ আপনারাই দেবেন।’
বিদেশে মন্ত্রী-এমপিদের সন্তানদের আয়েশি জীবনযাপনের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে মোমেন বলেন, ‘আমাদের সক্ষমতা আপনাদের বুঝতে হবে! তাঁরা সেখানে কীভাবে আছেন, সেটা আপনারাই আমাদের জানাচ্ছেন।
তখন আমাদের সন্দেহ হচ্ছে, তাঁরা এত টাকা পাচার করেছেন যে তাঁদের সন্তানেরা আয়েসি জীবন যাপন করছে। এমনও হতে পারে, ফাঁকফোকর গলিয়ে এখনো টাকা যাচ্ছে। গিয়ে থাকলে সেটা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।’