অনিয়ন্ত্রিত অটোরিকশায় নগরীতে বাড়ছে দুর্ঘটনা ও যানজট

স্টাফ রিপোর্টার: অদক্ষ চালকদের অনিয়ন্ত্রিত অটোরিকশা চালানোর কারণে রাজশাহী নগরীতে বাড়ছে দুর্ঘটনা ও যানজট। প্রশিক্ষণহীন এসব চালকেরা তোয়াক্কা করছে না নিয়ম-নীতির। এতেই রাজশাহী নগরীতে প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে যানজটও। যানজটে ভোগান্তির মধ্যে পড়ছেন সাধারণ মানুষ ও পথচারীরা।
অদক্ষ চালকদের কারণে দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে পথচারী, মোটরসাইকেল চালক, প্রাইভেট কার, ভ্যান ও অন্যান্য যানবাহনে থাকা মানুষদের। কেউই রক্ষা পাচ্ছেন না এসব চালকের হাত থেকে। অটোরিকশা চালকরা রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানামা করাচ্ছেন। নিয়মের কোনো তোয়াক্কাই করছেন না।
আবার যাত্রী চালকদের দাঁড়াতে বললেই তারা সামনে বা পেছন থেকে কোনো গাড়ি আছে কিনা তা না দেখেই দাঁড়িয়ে যায়। আবার গাড়িটি কোন দিক যাবে তারও কোন সংকেত দেয় না। আর এতেই পথচারীরা ও অন্যান্য গাড়ির চালক ও যাত্রীরা দুর্ঘটনার মধ্যে পড়েন। পুলিশ মাঝে মধ্যে অটোরিকশা চালকদের ধরে জরিমানা করলেও তা একেবারেই অপ্রতুল।
প্রশিক্ষণ না থাকার কারণে এসব অটোরিকশা চালকরা ট্রাফিক আইনের কোন রকম তোয়াক্কা করেন না। নগরীতে গাড়ি চালানোর কোন নিয়ম অনুসরণ করছেন না অটোরিকশা চালকরা। রাস্তাকে নিজের বাড়ির রাস্তা মনে করেই গাড়ি চালায়। শুধু চালকদের এমন আচরণের কারণে নগরীর যেসব এলাকা আগে ফাঁকা থাকতো সেসব এলাকাতেও এখন যানজট লেগে থাকছে। কিছুক্ষণ পর পরেই লাগছে তীব্র যানজট।
একদিকে অসহ্য গরম অন্যদিকে যানজট দুই মিলে পথচারীরা পড়ছেন সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে। আর এ অবস্থা মোকাবিলা করতে হিমশিম খাচ্ছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যেকটি মোড় বা বাজার এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও তারা এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারছেন না। এসব চালক ট্রাফিক পুলিশের সাথেই তর্কে জড়িয়ে পড়েন। আর সাধারণ মানুষের কোন কথার তোয়াক্কাই করেন না।
নগরীর প্রায় প্রত্যেকটি এলাকায় অটোরিকশা-অটোরিকশা মুখোমুখি সংঘর্ষ বা দুর্ঘটনা ঘটে। শুধু নিজেরা নিজেরাই নয়, পথচারী ও মোটরসাইকেল চালকসহ অন্য যানবহন চালকদেরও নিজের খামখেয়ালিপনার কারণে দুর্ঘটনার মধ্যে ফেলে দেয়। এসব ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটেই চলেছে। কিন্ত কোনভাবেই যেন তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
এরা অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়েছে। অনিয়ন্ত্রিত চালকের কারণে যে দুর্ঘটনা ঘটে তাতে করে নিমিষেই ম্লান হয়ে যায় একটি পরিবারের স্বপ্ন। মুহূর্তের মধ্যেই স্বপ্ন পরিণত হয় দুঃস্বপ্নে। আর এজন্য অনেকাংশেই দায়ী অনিয়ন্ত্রিত অটোরিকশা চালকরা।
নগরীতে অটোরিকশা চালকদের বেপরোয়া গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে বেশ কিছু এলাকায় যানজট নিত্যসঙ্গী হয়ে পড়েছে। অথচ কিছুদিন আগেও নগরীতে মানুষজন স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারতেন। এসব অটোরিকশার কারণে দুর্ঘটনা ঘটলেও রাসিকের পক্ষ থেকে কোন অভিযান বা দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
মাঝেমধ্যে রাসিক ভ্রামম্যাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে কাগজপত্র ছাড়া রিকশা ও অটোরিকশা জব্দ করে। কিন্ত তাদের প্রশিক্ষণের সেভাবে কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি।
প্রয়োজনের তুলনায় রিকশা বেশি হওয়ায় এদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না ট্রাফিক বিভাগ। ইমরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, অটোরিকশা ও ব্যাটারি চালিত রিকশা চালকরা রাস্তার সামনে পেছনে না দেখেই দ্রুত গতিতে চালিয়ে চলে যান। যাত্রীরা যেখানে তাদের থামাতে বলে সেখানেই তারা দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানামা করায়। চালকদের উচিত ট্রাফিক নিয়ম মেনে গাড়ি চালানো।
কাজী ঈমাম নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, রিকশা ও অটোরিকশা চালকদের প্রশিক্ষণ ও নির্দিষ্ট নিয়ম-নীতি প্রয়োজন। এখন যে কেউ ইচ্ছে করলেই রিকশা ও অটোরিকশা চালক বনে যেতে পারছেন। ড্রাইভিং লাইসেন্স সিস্টেম চালু করা গেলে এদের দৌরাত্ম্য যেমন কমবে তেমনি যার তার হাতে অটোরিকশা যাবে না। এতে দুর্ঘটনা কমতে পারে।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক বিভাগ) নুর আলম সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশার কাগজপত্র ঠিক আছে কি না তা নিয়মিত দেখা হয়। প্রয়োজনে মামলা দেয়া হয়। রাসিকের সাথে কথা বলে চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যায় কিনা সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান সাংবাদিকদের বলেন, কাগজপত্রহীন রিকশা ও অটোরিকশা জব্দের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্ধারিত কোনো নিয়মের মধ্যে এদের আনা যায় কি না সে বিষয়ে রাসিকের সাথে কথা বলে পদক্ষেপ নেয়া হবে।