ঢাকা | মে ১৩, ২০২৫ - ৫:৩৩ পূর্বাহ্ন

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ক্ষমতা চান সিভিল সার্জনরা

  • আপডেট: Monday, May 12, 2025 - 9:37 pm

সোনালী ডেস্ক: সীমিত আকারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ক্ষমতা চান সিভিল সার্জনরা। দেশের বিভিন্ন জেলায় গড়ে ওঠা অবৈধ ক্লিনিক, ল্যাবরেটরি, ভুয়া চিকিৎসক, দালাল চক্র, ভেজাল ওষুধ নিয়ন্ত্রণে তাদের সীমিত আকারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ক্ষমতা প্রদান করা জরুরি বলে মনে করেন সিভিল সার্জনরা।

দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ৬৪ জেলা সিভিল সার্জনদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত সিভিল সার্জন সম্মেলনে তারা এই দাবি জানান।

গতকাল সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে সিভিল সার্জনদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করেন ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন ডা. মো. জিল্লুর রহমান।

সিভিল সার্জন ডা. জিল্লুর রহমান বলেন, প্রতিটি হাসপাতালে নিরাপত্তার অভাবে স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রায়ই হুমকির মুখে পড়েন। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে প্রতিটি হাসপাতালে আনসার বা স্বাস্থ্য পুলিশ মোতায়েন করা জরুরি।

অনেক জেলায় সিভিল সার্জনের নিজস্ব অফিস ও সরকারি বাসভবন নেই। যা প্রশাসনিক দৈনন্দিন কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। তিনি বলেন, অবৈধ ক্লিনিক, ল্যাবরেটরি, ভুয়া চিকিৎসক, দালাল চক্র, ভেজাল ওষুধ নিয়ন্ত্রণে সিভিল সার্জনদের সীমিত আকারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ক্ষমতা প্রদান করা জরুরি।

তিনি আরও বলেন, নিয়মিত স্বচ্ছ পদোন্নতির মাধ্যমে দক্ষ কর্মকর্তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি নিশ্চিত করতে হবে।

প্রায় ৩৭ হাজার স্বাস্থ্য ক্যাডার কর্মকর্তার বিপরীতে গ্রেড-১ পদের সংখ্যা মাত্র দুটি। যথাযথ ক্যাডার কর্মকর্তা পদ সংস্কার ও উচ্চ পদ সৃষ্টি এখন সময়ের দাবি। ডা. জিল্লুর রহমান বলেন, সিভিল সার্জনদের প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা জরুরি।

তিনি বলেন, বাস্তবসম্মত চাহিদাভিত্তিক নমনীয় ও পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ না হলে মাঠপর্যায়ের কার্যকর স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। আকস্মিক দুর্যোগকালীন বা প্রযুক্তিগত সমস্যা মোকাবিলার জন্য বাজেট বরাদ্দ সিলিং বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

এই সিভিল সার্জন বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হলে পরিবহনসহ সব লজিস্টিক সাপোর্ট ও চিকিৎসকের পাশাপাশি দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির রাজস্ব খাতে জনবল নিয়োগ জরুরি।

তিনি বলেন, আমরা শুধু প্রত্যাশা করছি না, আমরা চাই আমাদের অভিজ্ঞতা ও পরিশ্রম যেন নীতিনির্ধারণ ও বাজেট পরিকল্পনায় প্রতিফলিত হয়। সঠিক নেতৃত্ব, আন্তরিকতা ও সমন্বিত প্রচেষ্টায় স্বাস্থ্যখাতে কাঠামোগত পরিবর্তন সম্ভব।

বক্তব্যের শুরুতে ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন ডা. মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ২৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী সিভিল সার্জন পদ দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের ইতিহাসে প্রথম জাতীয় পর্যায়ে সিভিল সার্জন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, এটি নিঃসন্দেহে যুগান্তকারী উদ্যোগ।

তিনি বলেন, মাঠপর্যায়ে বাস্তবতা সরাসরি নীতি নির্ধারকদের সামনে উপস্থাপনের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টা, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।

তিনি ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন ও তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। যারা আহত হয়ে দেশে ও বিদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন তিনি।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে তথ্য সংগ্রহ, ডাটা এন্ট্রি, যাচাই-বাছাই এবং হেলথ কার্ড বিতরণ কার্যক্রম সবকিছু সিভিল সার্জন, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের সমন্বিত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্যখাতে এরই মধ্যে বেশকিছু ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। সাত সহস্রাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদোন্নতি, তাদের মধ্যে উৎসাহ ও কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। একই সময়ে পাঁচ সহস্রাধিক চিকিৎসক নিয়োগের উদ্যোগ নবীন চিকিৎসকদের মধ্যে আগ্রহ ও আশা তৈরি করেছে।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপকদের পক্ষ থেকে উদ্যোগের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। পাশাপাশি প্রশাসনিক পর্যায়ে কর্মরতদের জন্য সুপার নিউমেরিক পদের মাধ্যমে পদোন্নতির সুযোগ তৈরি করতে বিনীত অনুরোধ জানান তিনি।

ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন আরও বলেন, মাঠপর্যায়ের সব স্বাস্থ্যকর্মী ও কর্মকর্তাদের নিঃস্বার্থ পরিশ্রমের ফলে স্বাস্থ্যখাতে অনেক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। এ সম্মেলনের পরে কাজের গতিশীলতা আরও বৃদ্ধি পাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন ডা. জিল্লুর রহমান।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS