ঢাকা | মে ১২, ২০২৫ - ৭:৩৮ অপরাহ্ন

প্রশিক্ষণের নামে অর্ধকোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা প্রতারকচক্র

  • আপডেট: Sunday, May 11, 2025 - 11:13 pm

চারঘাট প্রতিনিধি: প্রথমে তিন দিনের স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রশিক্ষণের আয়োজন করে ২০ জন প্রশিক্ষনার্থীদের কয়েক ধাপে ছয় হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়।

এরপর হস্তশিল্প প্রশিক্ষনের নামে এলাকাজুড়ে করা হয় চটকদার মাইকিং। আগ্রহী নারীদের রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ ও প্রশিক্ষণ শেষে সেলাই মেশিন দেয়ার কথা বলে অর্ধকোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা রাজশাহী মহিলা হস্তশিল্প সমিতির পরিচয়দানকারী এক প্রতারকচক্র।

রাজশাহীর চারঘাটে এ ঘটনায় সর্বশান্ত হয়েছেন প্রায় দেড় হাজার নারী। কেউ নিজের জমানো টাকা আবার কেউ ধার-দেনা করে টাকা দিয়েছেন। এই প্রতারক চক্রের নেতৃত্বে রয়েছে শাহানা খান সাথী নামে রাজশাহী শ্রমিক লীগের এক নেত্রী। তার বিচার চেয়ে থানাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

ভুক্তভোগীরা জানায়, গত বছরের মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ দেয়ার নামে চারঘাটের মুক্তারপুর গ্রামে লিফলেট বিতরণ করে শাহানা খানের নেতৃত্বে ওই চক্র। তিনদিনের প্রশিক্ষণ শেষে প্রতিদিন দুই হাজার টাকা হারে ছয় হাজার টাকা দেয়া হবে বলে জানানো হয়।

এতে অনেকে আগ্রহ প্রকাশ করলে যাচাই-বাছাই করে ২০ জনকে তিন দিন কাগজপত্রে সাক্ষর নিয়ে নামমাত্র প্রশিক্ষণ শেষে তিন ধাপে ছয় হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়। তাতে আশেপাশের সব গ্রামের নারীদের মাঝে প্রশিক্ষণ ভাতার খবর ছড়িয়ে পড়ে।

গত ডিসেম্বর মাসে শাহানা খান আবারও আসেন। রাজশাহী মহিলা হস্তশিল্প সমিতির উদ্যোগে হাতের কাজের প্রশিক্ষণের লিফলেট বিতরণ করা হয়। এবার প্রশিক্ষণ শেষে তিন হাজার তিনশ টাকা দেয়া হবে বলে জানানো হয়। এজন্য ৩৫ জন সদস্য নিয়ে আলাদা আলাদা সমিতি গঠনের কথা বলা হয়।

এভাবে চারঘাটের খোর্দগোবিন্দপুর, থানাপাড়া, নন্দনগাছী, মুক্তারপুর, ইউসুফপুর ও চৌমুহনী এলাকায় ৩০টিরও অধিক টিম গড়ে তোলা হয়েছে। পরবর্তীতে প্রশিক্ষণে অংশ নিতে ছয়শ টাকা হারে রেজিস্ট্রেশন ফি আদায় করা হয়। এরপর সমিতির সদস্যদের নিয়ে কয়েকটি সভার আয়োজন করে।

শুধু হাতের কাজের প্রশিক্ষণের কার্যক্রমই নয়, সেলাই মেশিন প্রদান, জরিপ প্রশিক্ষণ, বিদেশগামীদের প্রশিক্ষণ, সহজ শর্তে ঋণপ্রদানসহ নানা প্রলোভন দেখিয়ে এগারোশ থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করে প্রতারকচক্র। টাকা আদায়ের পর গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে যোগাযোগ কমিয়ে দেয় শাহানা খান। গত দুই সপ্তাহ ধরে ফোনও বন্ধ রেখেছেন।

সর্বশেষ গত বুধবার ভুক্তভোগীরা রাজশাহী শহরের মতিহার থানা এলাকায় শাহানা খাতুনের বাড়িতে গেলে তারা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়।

মুক্তারপুর গ্রামের ষাটোর্ধ নারী নাজিরা বেগম বলেন, গ্রামের শত শত মানুষ প্রশিক্ষণ নিচ্ছে এজন্য আমিও রেজিস্ট্রেশন করেছি। দুইটা প্রশিক্ষণ নিতে ৬০০ ও ১১০০ টাকা আমাদের টিম লিডারকে দিয়েছি। এখন প্রশিক্ষণও নাই টাকাও নাই।

ইউসুফপুর এলাকার টিম লিডার রিমা খাতুন বলেন, আমি তিনটি টিমের লিডার হিসাবে আছি। এর মধ্যে দুইটি হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণ ও একটি জরিপ প্রশিক্ষণের টিম ছিল।

হস্তশিল্পের রেজিস্ট্রেশন ফ্রি ছয়শ ও জরিপের প্রশিক্ষণের জন্য দুই হাজার ৫০০ টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি নিয়েছে। আমার তিনটি টিমের ১০৫ জন সদস্যের কাছে থেকে ৭৪ হাজার টাকা তুলে শাহানা খানকে দিয়েছি আরেক টিম লিডার রুবিনার মাধ্যমে।

মুক্তারপুর এলাকার টিম লিডার রুবিনা খাতুন বলেন, প্রথমবার প্রশিক্ষণ দিয়ে টাকা দিয়েছিল। শাহানা খাতুন আমার দুর সম্পর্কের আত্মীয় হওয়ায় অনেকে আমার কাছে এসেছিল। আমি তাদের যোগাযোগ করে দিয়েছি। আমি নিজেও পাঁচটি টিম খুলেছি ১৭৫ জন সদস্য নিয়ে।

কয়েক ধাপে আড়াই লাখ টাকা দিয়েছি। আমার মত আরও ৮-১০ জন টিম লিডারের আওতায় ১৫০-২০০ জন করে নারী আছে। আমরা হিসাব করে দেখেছে সব মিলিয়ে ৫০ লাখ টাকারও বেশি প্রতারণার মাধ্যমে আদায় করেছে।

এদিকে থানাপাড়া গ্রামের টিম লিডার জুলিয়া খাতুন বলেন, আমার এক টিমের হাতের কাজের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছিল। তাদের সেলাই মেশিন দেবার নামে তিন হাজার টাকা করে আদায় করেছে।

এছাড়াও স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ শেষে ছয় হাজার টাকা দেয়ার নামে পনেরশ টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি আদায় করেছে। সব মিলিয়ে আমার ছয়টি টিম থেকে চার লাখ ১০ হাজার টাকা আদায় করেছে প্রতারক চক্র।

সদস্যদের চাপে এখন আমি দিশেহারা, কিন্তু শাহানা খান ফোনও ধরছে না বাসায় গেলেও যোগাযোগ করছে না। রাজশাহীর কাশিয়াডাঙা এলাকার টিম লিডার মুরশিদা বেগম প্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন সরঞ্জাম দেয়ার নামে ১৬ লাখ টাকা শাহানা খান প্রতারণার মাধ্যমে নিয়েছেন মর্মে মহানগরের মতিহার থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।

এ বিষয়ে শ্রমিক লীগ নেত্রী শাহানা খান সাথী বলেন, ফ্রি প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু কারো কাছে থেকে কোনো প্রকার টাকা নেয়া হয়নি। মিথ্যা অভিযোগে লোকজন আমার বাড়িতে এসে আমাকে হেনস্থা করছে।

চারঘাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, প্রশিক্ষণ দেবার নামে টাকা আদায়ের বিষয়টি শুনেছি। এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS