দেশে ফিরে ভয়ানক অভিজ্ঞতার কথা জানালেন রিশাদ

অনলাইন ডেস্ক: পিএলএলের দশম আসরে লাহোর কালান্দাসের হয়ে রিশাল হোসেন ও পেশোয়ার জালমির হয়ে খেলতে নাহিদ রানা অবস্থান করছিল পাকিস্তান। তবে এর মধ্যেই তৈরি হয় প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যা যুদ্ধাবস্থার দিকে ধাবিত হয় হামলা-পালটা হামলায়। ড্রোন হামলা হয় পিএসএলের ভেন্যু রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়ামেও। এছাড়া দেশটির বিভিন্ন স্থানও ভারতের হামলায় আক্রান্ত হয়। তাতে নিরাপত্তাশঙ্কা দেখা দেয় বিদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে।
পরবর্তীকালে টুর্নামেন্টটির খেলা সংযুক্ত আরব আমিরাতে স্থানান্তর করার ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত বিদেশি খেলোয়াড়দের আপত্তি থাকায় স্থগিত করে দেওয়া হয় পিএসএল। এরপর বিশেষ ব্যবস্থায় (পাকিস্তান বিমান বাহিনীর বিমানে) বিদেশি ক্রিকেটারদের দুবাই পৌঁছে দেওয়া হয়।
সেখান থেকেই যে যার যার দেশের পথ ধরেন। বাংলাদেশি দুই ক্রিকেটার ও ম্যাচ কাভার করতে যাওয়া গণমাধ্যমকর্মীও এই বহরে সংযুক্ত আরব আমিরাত হয়ে গতকাল বিকালে দেশে ফিরেছেন। আর পুরোটা প্রক্রিয়ায় শুরু থেকেই নিয়মিত খোঁজখবর রেখেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
দুবাই থেকে ঢাকায় ফিরে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে পাকিস্তানে নিজেদের পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন টাইগার লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘একটু ভয় ছিল। ফ্লাইট থেকে নামার পর (দুবাইয়ে) যখন শুনলাম যে আমরা পাকিস্তান ছাড়ার পর ঐ এয়ারপোর্টে হামলা হয়েছে, শোনার পর একটু খারাপ লেগেছে এবং ভয়ও লেগেছিল।
তবে দুবাই নামার পর একটু স্বস্তি ফিরেছে।’ অর্থাৎ পাকিস্তান ছাড়ার আগমুহূর্তেও শঙ্কায় ছিল রিশাদ-নাহিদরা। শুক্রবার মধ্যরাতে রাওয়ালপিন্ডি থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্দেশে রওনা দেন বিদেশি ক্রিকেটাররা। এদিনটি শহরটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।
পাকিস্তানের অভিযোগ-ভারত তাদের তিনটি বিমানঘাঁটিতে হামলা চালানোর চেষ্টা করেছিল। তার মধ্যে একটি ছিল রাওয়াল পিন্ডির নূর খান বিমানঘাঁটি, যেখান থেকে বিদেশি ক্রিকেটাররা পাকিস্তান ছেড়েছে। দেশটির সামরিক এক মুখপাত্র এ বিষয়ে এ বিষয়ে ডয়চে ভেলে জানায়, ভারত থেকে ছোড়া অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্র পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা প্রতিহত করা হয়েছে, এবং যেগুলো প্রবেশ করতে পেরেছে, সেগুলোও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে। তাতে বিমানঘাঁটি সুরক্ষিত রয়েছে।
শুধু রিশাদ-নাহিদ না, পাকিস্তানে তাদের সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন দলের হয়ে খেলতে অবস্থান করছিল অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, জিম্বাবুয়ের একাধিক তারকা ক্রিকেটার। তারাও সেখানকার পরিস্থিতি দেখে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। আতঙ্কের মধ্যে অপেক্ষা করছিল নিজের দেশে ফিরে যাওয়ার।
সে কথাও শুনিয়েছেন রিশাদ। বলেন, ‘ড্যারিল মিচেল, টম কারান, স্যাম বিলিংস, কুশল পেরেরা, ডেভিড ভিসাসহ সবাই খুব আতঙ্কে ছিল। তাদের একটা ভাবনাই ছিল, কোনোমতে নিজেদের দেশে ফিরে যাওয়ার।
দুবাইয়ে নামার পর তো ড্যারিল মিচেল বলেছেন যে ‘আমি আর পাকিস্তান আসব না, এই পরিস্থিতিতে তো কখনোই না’। তো ওরা অনেক আতঙ্কে ছিল।
এর আগে হামলা-পালটা হামলার মধ্যেই খেলা চলছিল পিএসএলের। তবে গেল বৃহস্পতিবার স্টেডিয়ামের আশপাশে ড্রোন হামলা হওয়ার পর পিসিবি জরুরি বৈঠকে টুর্নামেন্টটির ম্যাচ সাময়িক স্থগিতের ঘোষণা দেয়।
এ সময় দশম আসরের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার জন্য পিসিবি সভাপতি মহসিন নাকভি বিদেশি ক্রিকেটারদের সঙ্গে বৈঠকও করে। সেখানে তিনি প্রস্তাব দিয়েছিলেন ক্রিকেটারদের যে, পরবর্তী ম্যাচগুলো করাচিতে খেলার পর দুবাইতে নেওয়ার কথা হয়েছিল, যদিও শেষ অবধি স্থগিতই করতে হয়েছে।
এ নিয়ে রিশাদ বলেন, ‘মিটিংয়ের উদ্দেশ্য ছিল আমাদের (বিদেশি ক্রিকেটারদের) মানসিক অবস্থা জানতে, আমাদের ভেতরে কী চলছে। সে সময় সব ক্রিকেটারই তাকে জানিয়েছে সুরক্ষিত জায়গায় নিয়ে যাওয়ার কথা। সেক্ষেত্রে দুবাই ছাড়া কোনো অপশন ছিল না। তো উনি চেষ্টা করেছিলেন করাচিতে খেলা নিয়ে যাওয়ার জন্য।
হয়তো তখন সেসময় আমাদের কাছে লুকিয়েছিল যে, তার আগের দিন করাচিতে দুইটি ড্রোন বিস্ফোরণ হওয়ার কথা। আমরা সেটা পরে জানতে পেরেছিলাম। পরে আমরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি… যেখানে উনিও (পিসিবি সভাপতি) সহায়তা করেছেন যে আমাদের সবাইকে দুবাই হয়ে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।’