ঢাকা | মে ১৩, ২০২৫ - ১:২৫ পূর্বাহ্ন

লুঙ্গি-গেঞ্জি পরে বিমানবন্দরে যান আবদুল হামিদ, দেশ ছাড়েন লাল পাসপোর্টে

  • আপডেট: Sunday, May 11, 2025 - 11:51 pm

সোনালী ডেস্ক: গত বুধবার দিবাগত রাতে দেশ ছেড়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি থাইল্যান্ডে গেছেন বলে জানা গেছে। আবদুল হামিদের দেশ ছাড়া নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়। মামলার আসামি হয়েও কিভাবে তিনি দেশ ছাড়লেন- এমন প্রশ্ন উঠেছে।

ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, ইমিগ্রেশনে কূটনৈতিক সুবিধার বিশেষ লাল পাসপোর্ট ব্যবহার করেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। শুধু তাই নয়, বিমানবন্দরে তিনি এসেছিলেন ছদ্মবেশে। তার পরণে ছিল লুঙ্গি ও গেঞ্জি এবং মুখে ছিল মাস্ক।

আবদুল হামিদের কূটনৈতিক সুবিধার বিশেষ পাসপোর্টে (নম্বর ডি০০০১০০১৫)। রাষ্ট্রপতি থাকার সময় ২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি তার নামে ১০ বছর মেয়াদি এই পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। ২০৩০ সালের পয়লা জানুয়ারি পর্যন্ত এর মেয়াদ রয়েছে। শেখ হাসিনাসহ তার সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের লাল পাসপোর্ট ইতিমধ্যে বাতিল হলেও আবদুল হামিদের পাসপোর্ট বাতিল হয়নি।

আবদুল হামিদের লাল পাসপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। গতকাল  রোববার বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে শান্তি শোভাযাত্রা শেষে এক সমাবেশে তিনি বলেন, ‘সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ফ্যাসিবাদের প্রতিনিধি। কিন্তু তার লাল পাসপোর্ট বাতিল করা হয়নি।

সরকারের শক্তিশালী উপদেষ্টারা থাকা সত্ত্বেও কিভাবে পালালেন আবদুল হামিদ?’ পাসপোর্ট অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সাবেক রাষ্ট্রপতিরা আমৃত্যু বিচারপতির পদমর্যাদা ভোগ করে থাকেন। এ ছাড়া বিদ্যমান আইনেও সাবেক রাষ্ট্রপতিদের ব্যবহৃত পাসপোর্ট সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা নেই।’

বিমানবন্দর সূত্র জানিয়েছে, জনরোষ এড়িয়ে নির্বিঘ্নে দেশত্যাগ করতে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বিমানবন্দরে যান অনেকটা ছদ্মবেশে। বুধবার মধ্যরাতে তিনি লুঙ্গি, গেঞ্জি ও মুখে মাস্ক পরে শাহজালালের ভিআইপি টার্মিনালে হাজির হন। এরপর কঠোর গোপনীয়তায় তাকে বিমানবন্দরের ভেতরে ঢোকানো হয়।

একপর্যায়ে সব ধরনের নিরাপত্তা তল্লাশি এড়িয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাকে নির্বিঘ্নে বিমানে তুলে দেন। বুধবার দিবাগত রাত ৩টা ৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের টিজি ৩৪০ নম্বর ফ্লাইটে ব্যাঙ্ককের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন আবদুল হামিদ।

এর আগে রাত ১১টার দিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান আবদুল হামিদ। সেখানে যাওয়ার পর ইমিগ্রেশনে প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই শেষে দেশ ছাড়ার ‘সবুজ সংকেত’ পান তিনি।

সূত্র জানায়, আবদুল হামিদের সুবিধার জন্য তাকে বহনকারী থাই এয়ারওয়েজের বিমানটিকে (ফ্লাইট নম্বর টিজি৩৪০) ভিআইপি টার্মিনালের কাছাকাছি আনা হয়। এরপর বিমান ছাড়ার ঠিক আগ মুহূর্তে বিশেষ গাড়িতে করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বিমানবন্দরের ১২ নম্বর আউট-বে এলাকায়।

আবদুল হামিদ বিমানে ওঠার বেশ কিছুক্ষণ পর সফরসঙ্গী ছেলে রিয়াদ আহমেদ এবং শ্যালক ডাক্তার এনএম নওশাদ খান বিমানে ওঠার অনুমতি পান। পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) কর্মকর্তারা বলছে, তার (আবদুল হামিদ) দেশত্যাগে আদালতের নিষেধাজ্ঞা কিংবা কোনো বাহিনীর আপত্তি ছিল না। নিষেধাজ্ঞা না থাকায় তাকে দেশত্যাগে বাধা দেওয়া হয়নি।

এদিকে আব্দুল হামিদের দেশ ছাড়ার ঘটনায় পরদিন তার জেলা কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনে নিয়োজিত একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার এবং উপপরিদর্শক ও সহকারী উপপরিদর্শক পদমর্যাদার দুজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগে কারা জড়িত, তা জানতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সরকার। তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে কমিটিকে।

তদন্তে যারা দায়ী প্রমাণিত হবেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS