শীষকাটা রোগে দিশেহারা কৃষক

বালাইনাশকেও হচ্ছে না কাজ
মিজান মাহী, দুর্গাপুর থেকে: রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় খরা ও অনাবৃষ্টিতে ব্যাপকহারে ধানের শীষ মরা রোগ দেখা দিয়েছে। ধান পাকার আগেই মাজরা, কিংবা ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে ধানের শীষ মরে যাচ্ছে।
এই রোগ প্রতিরোধে ওষুধ ছিটিয়েও কাজ হচ্ছে না। ফলে ফলন বির্পযয় নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা।
দুর্গাপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলাজুড়ে ৪ হাজার ১৯৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধান করেছেন কৃষকেরা। যা গতবারের চেয়ে ২০০ হেক্টর বেশি জমিতে এবার বোরো আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার প্রতিটি জমিতে বোরো খুব ভালো হয়েছে।
কৃষকেরা বলছেন, আর মাত্র কয়েকদিন পরেই হয়তো ধান কাটা শুরু হবে। এরই মধ্যে হঠাৎ করেই উপজেলার দেবীপুর, কাশিপুর, শালঘরিয়া, শ্যামপুর, হরিপুর, দাওকান্দি, উজালখলসী, বাদইল, মাড়িয়া, কিসমত বগুড়া, রসুলপুর গ্রাম সহ বিভিন্ন মাঠে ধানে ব্যাপক হারে শীষ মরা রোগ দেখা দিয়েছে।
কৃষকের অভিযোগ, অনাবৃষ্টিতে বোরো ধান পাকার আগে ব্যাপক পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। ধানের শীষ মরা রোগ প্রতিরোধ করতে বিভিন্ন কোম্পানির কীটনাশক ছিটিয়েও কোনো ফল হচ্ছে না। ফলে ধানে ফলন বির্পযয় দেখা দিতে পারে।
এতে করে ধান রক্ষায় এবং লোকসানের আশঙ্কায় দিশেহারা হয়ে পরেছেন তারা। পৌর এলাকার দেবীপুর গ্রামের নুরুজ্জামান ভদ্দর মিয়া বলেন, তার ধানখেত ভাল হয়ে ছিল।
কিন্তু ধান পাকার আগে ব্যাপক হারে শীষ কাটা দেখা দিয়েছে। শীষ বের হবার পর থেকে শীষ মরে যাচ্ছে। প্রথমে জমিতে দুই-একটি মরা শীষ দেখা গেলেও বর্তমানে তা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।
শালঘরিয়া গ্রামের চা ব্যবসায়ী রেন্টু আলী বলেন, নিজের কোন জমি নেই। বর্গা নিয়ে দুই বিঘা জমিতে বোরো ধান লাগিয়েছি। ধান ভাল হয়েছে। খরা ও অনাবৃষ্টিতে বর্তমানে জমিতে ব্যাপক পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে।
বিভিন্ন কোম্পানির ওষুধ ছিটিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। ফলে ধানের ফলন বিপর্যয় হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
নওপাড়া গ্রামের আকরাম আলী বলেন, ধান রোপণের শুরুতে এতো পোকার আক্রমণ ছিল না। আমরা শুরু থেকেই জমিতে ডালপুতে পাখি বসার জায়গা করে দিয়েছি। এজন্য বালাইনাশক কম লেগেছে। কিন্তু ধানে শীষ বের হওয়ার পর থেকে ব্যাপকহারে শীষকাটা দেখা দিচ্ছে। এখন বালাইনাশক স্প্রে করছি।
দুর্গাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাহারা শারমিন লাবনী বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকদের বিভিন্নভাবে ধান চাষে পরামর্শ দিয়েছি। ধান পাকার আগেই মাজরা, কিংবা ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে শীষ মরে যায়। এ কারণে বিভিন্ন সেমিনার, মিটিং করে কৃষকদের সচেতন করা হয়েছে।
শীষ কাটার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা আরও বলেন, এখন খরা অনাবৃষ্টি চলছে। এতে পোকার আক্রমণ একটু বেশি হতে পারে। বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে।
এছাড়াও কৃষকদের কৃষি অফিসের পরামর্শে বিষ প্রয়োগ করলে শীষ কাটার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।