ঢাকা | মে ৯, ২০২৫ - ৪:১৯ পূর্বাহ্ন

রাজশাহীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমিটি গঠন নিয়ে বিএনপি-জামাত দ্বন্দ্ব

  • আপডেট: Friday, May 9, 2025 - 12:19 am

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর উপজেলাগুলোর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমিটি গঠন নিয়ে বিএনপি-জামাত দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। এসব ক্ষেত্রে বলির পাঠা হচ্ছেন ওইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের পরে উপজেলাগুলোর বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় নতুন ভাবে ম্যানেজিং কমিটি গঠনের কার্যক্রম শুরু হয়। এই কমিটি গঠন করতে গিয়ে স্থানিয় বিএনপির একাধিক গ্রুপ ও জামায়াতে ইসলামীর চাপের মুখে পড়ছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানরা।

প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অন্তত: ৩ থেকে ৪ জন ব্যক্তিকে সভাপতি করার জন্য চাপ দিচ্ছেন নেতৃবৃন্দরা। চাপ সামলাতে না পেরে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের স্মরণাপন্ন হচ্ছেন। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে কিছু জায়গায় বিষয়টি সুরাহা হলেও অনেক জায়গায় অফিস ভাঙচুর, প্রতিষ্ঠান প্রধানকে লাঞ্ছিত করা, অফিস কক্ষে তালা দেবার মত ঘটনা ঘটছে।

এসব ঘটনায় বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ করেছেন প্রতিষ্ঠান প্রধানরা। আবার অনেক জায়গায় প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদানসহ প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেবার ঘটনা ঘটছে।

এতে করে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। কারণ হিসেবে শিক্ষকরা বলছেন, কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে ঠিকমত ক্লাস হচ্ছে না। যার ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

কমিটি গঠন নিয়ে সম্প্রতি এমনি একটি ঘটনা ঘটেছে রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভার বাগধানী উচ্চ বিদ্যালয়ে।  বৃহস্পতিবার ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষকের কক্ষ তালাবদ্ধ এবং তাঁর ব্যবহৃত চেয়ারটি বিদ্যালয়ের সামনের একটি গাছে ঝুলছে। কমিটি নিয়ে স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানিয়েছেন, পরিচালনা কমিটির সভাপতির পদ নিয়ে স্থানীয় বিএনপির দুইটি পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে গত তিন দিন ধরে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে চারটি তালা ঝুলছে। প্রধান শিক্ষক মঞ্জু মনোয়ারা অভিযোগ করেছেন, তাঁকে মারধর করা হয়েছে এবং কক্ষ থেকে বের করে দিয়ে চেয়ার বাইরে ফেলে দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বাগধানী উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন নওহাটা পৌরসভার সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা হাফিজুর রহমান।

তিনি আত্মগোপনে যাওয়ার পর চলতি বছরের ৩ মার্চ নতুন সভাপতি হন বিএনপি-সমর্থিত মামুন-অর-রশিদ। তিনি নওহাটা পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।

অন্যদিকে, পৌর বিএনপির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নাজিম উদ্দিন মোল্লা এ কমিটিকে মেনে নেননি। তিনিও সভাপতি পদে আগ্রহী ছিলেন। গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় পরিচালনা কমিটির সভা ডাকা হয়েছিল। ওই সভায় পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলামের অংশ নেয়ার কথা ছিল। তবে সভা শুরুর আগেই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়।

একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি, গালিগালাজ এবং ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। তখন প্রধান শিক্ষককে কক্ষ থেকে বের করে চারটি তালা লাগিয়ে দেয়া হয়। তাঁর ব্যবহৃত চেয়ার বাইরে ছুড়ে ফেলে দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার দেখা যায়, সেই চেয়ারটি কে বা কারা গাছে ঝুলিয়ে রেখেছে। শিক্ষকরা জানিয়েছেন, প্রথমে চেয়ারটি ডোবায় ফেলা হয়েছিল। পরে তা তুলে এনে গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

ঘটনার পর গত বুধবার প্রধান শিক্ষক মঞ্জু মনোয়ারা পবা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, অভিযুক্তরা প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ঢুকে তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। বাধা দিলে আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন এবং তাঁকে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত করে কক্ষ থেকে বের করে দেন।

এরপর কক্ষে তালা লাগিয়ে তাঁরা চলে যান এবং প্রধান শিক্ষক ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হুমকি দেন।  প্রধান শিক্ষক মঞ্জু মনোয়ারা বলেন, ‘এটা বিএনপির নিজেদের দ্বন্দ্ব। বিদ্যালয়ের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।

তালার কারণে অফিসের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে আছে। উপবৃত্তি, পরীক্ষার ফাইলসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজ আটকে আছে।’ তিনি বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং থানা শিক্ষা কর্মকর্তাকে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন বলে জানান।

বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকরা জানান, ঘটনার পর বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে। প্রতিটি শ্রেণিতে যেখানে ৫০ থেকে ৬০ জন শিক্ষার্থী থাকার কথা, সেখানে এখন আসছে মাত্র ১০ থেকে ১২ জন। পরিচালনা কমিটির সভাপতি মামুন-অর-রশিদ বলেন, ‘মঙ্গলবার ছিল কমিটির সভা। আমরা যাওয়ার আগেই ওই ঘটনা ঘটে যায়। সেখানে গিয়ে দেখি অফিস রুম তালাবদ্ধ।’

অভিযোগ অস্বীকার করে সাবেক কাউন্সিলর নাজিম উদ্দিন মোল্লা নজির বলেন, ‘আমি শুধু দেখতে গিয়েছিলাম। বলেছি বাগধানীর স্কুলে বাগধানীর বাইরের লোককে সভাপতি বানানো ঠিক হয়নি। আমরা কোনো তালা মারিনি, কোনো ভাঙচুরও করিনি। প্রধান শিক্ষক যা বলছেন, তা ঠিক নয়।

পবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘পরিচালনা কমিটির সভায় উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় ও চেয়ার ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটেছে। প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তালা দেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি।

বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ এদিকে শিক্ষক ও অভিভাবকরা জানিয়েছেন, এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। তাঁরা দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ও প্রধান শিক্ষকের কক্ষ খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

এবিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন বলেন, বিষয়টি জেনে গতকাল বৃহস্পতিবার পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। সকল পক্ষকে ডেকে বিষয়টি সুরাহা করা হবে।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS