ঢাকা | জুলাই ২৮, ২০২৫ - ২:২৫ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডারের আগে অপরিপক্ক আম পাড়ছেন ব্যবসায়ীরা

  • আপডেট: Thursday, May 8, 2025 - 10:33 pm

মিজান মাহী, দুর্গাপুর থেকে: রাজশাহী জেলা প্রশাসক থেকে আমপাড়ার ‘আগাম ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ প্রকাশ করা হলেও মানছেন না অসাধু ব্যবসায়ীরা। জেলার দুর্গাপুর উপজেলায় বাগানে বাগানে আম পাড়া শুরু করছেন অনেকেই।

তবে বাগানে এখনও আম পাকা শুরু হয়নি। পাকার আগেই পাড়ার অনুমতি না পেলেও অনেক অসাধু ব্যবসায়ী গোপনে অপরিপক্ক আম বাজারজাত করছেন বলে বিভিন্ন এলাকা থেকে অভিযোগ আসছে।

এদিকে গত ৭ মে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আলোচনায় নিরাপদ, বিষমুক্ত ও পরিপক্ব আম নিশ্চিত করতে এ বছরের ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ প্রকাশ করা হয়। ওই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আগামী ১৫ মে থেকে সব ধরনের গুটি আম পাড়া যাবে।

এ ছাড়া উন্নত জাতের আমগুলোর মধ্যে ২০ মে থেকে গোপালভোগ, ২৫ মে থেকে রাণীপছন্দ বা লক্ষণভোগ ও ৩০ মে থেকে হিমসাগর বা ক্ষীরসাপাতি পাড়া যাবে। ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ১০ জুন থেকে ব্যানানা ও ল্যাংড়া আম পাড়া যাবে।

১৫ জুন থেকে আম্রপালি ও ফজলি, ৫ জুলাই থেকে বারি-৪, আশ্বিনা আম পাড়া যাবে ১০ জুলাই থেকে এবং ১৫ জুলাই থেকে গৌড়মতি।

তবে এর এক সপ্তাহ আগে থেকেই দুর্গাপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গুটি আমসহ বিভিন্ন জাতের আম ভাঙতে দেখা গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার আমগ্রাম এলাকায় আম পাড়ার খবর পাওয়া যায়।

সেখানে পৌছানোর আগেই দেখা যায় ভ্যানগাড়িতে করে আম নিয়ে যাচ্ছেন এক ব্যক্তি। কথা হয় তার সঙ্গে। নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি বলেন, এটা সুরমা ফজলি জাতের আম। এখনও পাকেনি। বাগান থেকে কিনে নিয়েছেন।

পাড়ার তারিখ এখনও আসেনি। তিনি বলেন, পাকা আম হিসেবে নয়, আচার তৈরির জন্য এই আম ঢাকায় পাঠাবেন।

রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের আড়ত পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর। এ বাজারে বৃহস্পতিবার গিয়ে দেখা যায়, বাজারে এখনও আম আসেনি। তবে দু’একজন আম নিয়ে আসলেও গোপনে কেনাবেচা হচ্ছে। এসব আম মোকামে না রেখে কোম্পানি অথবা ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে।

বানেশ্বর আম বাজারের ফড়িয়া ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, আমপাড়া এখনও শুরু হয়নি। তাই বাজারে আম দেখা যাচ্ছে না। ১৫ মে’র পর বাজার গুটি আমে ভরে উঠবে। এখন দু একজন আম নিয়ে আসলেও তা বিভিন্ন কৌশলে কিনে আচার করার জন্য কোম্পানি বা ঢাকা পাঠানো পাঠাচ্ছেন।

এদিকে গত সপ্তাহে দুর্গাপুর উপজেলার ঝালুকা গ্রামে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ( ফেসুবক) লাইভ চালিয়ে আম পাড়ছিলেন সামিউল ইসলাম নামের এক ব্যাপারী। এ সময় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

পরে ব্যাপারী সামিউল বলেন, আমপাড়ার ক্যালেন্ডার এখন প্রকাশ হয়নি। গুটি আম পাড়ছি। এটা একটি আচার কোম্পানি নিবে। আগাম গুটি আম পাড়ার অনুমতি আছে কী না জানতে চাইলে এই ব্যাপারী বলেন, গুটি আম পাড়তে কোন অনুমিত লাগে না।

এছাড়াও পৌর এলাকার দেবীপুর, মাড়িয়া, আমগ্রাম, রঘুনাথপুর সহ বিভিন্ন এলাকায় আগাম আমপাড়ার খবর পাওয়া গেছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর রাজশাহীতে ১৯ হাজার ৬০৩ হেক্টর জমিতে আমবাগান আছে। হেক্টর প্রতি সম্ভাব্য গড় উৎপাদন ১৩ দশমিক ২৬ টন।

মোট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার ৬ টন। এবার শুধু রাজশাহী জেলা থেকে ১ হাজার ৬৯৫ কোটি ৮৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকার আম বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।

দুর্গাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাহারা শারমিন লাবনী বলেন, আম পাড়ার সূচি প্রকাশ করেছে জেলা প্রশাসক। সেই অনুযায়ী আম পাড়া শুরু হবে। এর আগে কোথাও অপরিপক্ক আম পাড়ার খবর পাওয়া গেলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবরিনা শারমিন বলেন, অপরিপক্ক আমপাড়ার কোন অভিযোগ এখনও আসেনি। আর অপরিপক্ক আম পাড়া উচিতও নয়।

জেলার সূচির বাইরে কোথাও অপরিপক্ক আমপাড়া হলে উপজেলা কৃষি বিভাগে অভিযোগ দেয়ার পরামর্শ দেন ইউএনও।