ঢাকা | মে ৭, ২০২৫ - ৪:৩৯ পূর্বাহ্ন

সিক্ত নেতাকর্মীদের ভালোবাসায় দেশে ফিরলেন খালেদা জিয়া

  • আপডেট: Wednesday, May 7, 2025 - 12:30 am

সোনালী ডেস্ক: দীর্ঘ চার মাস পর যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে দেশে ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তাঁর সঙ্গে আছেন দুই পুত্রবধূ জুবাইদা রহমান ও সৈয়দা শামিলা রহমান। খালেদা জিয়াকে বহনকারী কাতারের রাজপরিবারের বিশেষ বিমান (এয়ার অ্যাম্বুলেন্স) গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার পর রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে এসেছেন তাঁর দুই পুত্রবধূ তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমান। আরও এসেছেন খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের প্রধান শাহাবুদ্দিন তালুকদার, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য এনামুল হক চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, লন্ডন বিএনপির সভাপতি এম এ মালেকসহ ১৪ জন।

বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত পুরো পথে খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য প্রস্তুত রয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা।

বিএনপি মহাসচিব সকাল সাড়ে ৮টায় বিমানবন্দরের ভিআইপি টার্মিনালের সামনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা গণতন্ত্রের উত্তরণের পথকে সহজ করবে। আজ দেশের ও জনগণের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য দিন।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশনেত্রীর আগমন আমাদের জন্য শুধু আবেগ নয়, এটি একটি রাজনৈতিক শক্তির প্রকাশ।’

বেলা ১১টা ২০ মিনিটে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর বিমানবন্দর থেকে বের হয়। এসময় নেতা-কর্মীরা  পতাকা নেড়ে দলীয় প্রধানকে শুভেচ্ছা জানান। বিএনপির নির্দেশনা অনুযায়ী, দলীয় নেতাকর্মীরা সকাল থেকেই সড়কের পাশের ফুটপাতে অবস্থান নিতে শুরু করেন। ব্যানার-ফেস্টুন ও ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁরা। অনেকে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানিয়ে স্লোগান দেন।

কেউ আবার খালেদা জিয়ার ছবি সংবলিত টি-শার্ট পরে ও মাথায় ব্যান্ড বেঁধে উপস্থিত হন। দলীয় চেয়ারপারসনকে একনজর দেখতে এবং তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে সকাল থেকেই রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা ছুটে আসেন বিমানবন্দর সড়কে। বিমানবন্দর থেকে গুলশানের ফিরোজা পর্যন্ত বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে দলীয় নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন ফুটপাতে।

খালেদা জিয়া বিমানবন্দর থেকে সরাসরি গুলশানের বাসভবন ফিরোজা যাওয়ার পথে যাতে ভিড়ের কারণে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না ঘটে, সেজন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়।

 

এর আগে বিমানবন্দরের ভিআইপি টার্মিনালে বিএনপি চেয়ারপারসনকে স্বাগত জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সেলিমা রহমান।

ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে খালেদা জিয়া সরাসরি তাঁর গুলশান-২ নম্বরের ৭৯ নম্বর সড়কের বাসভবন ফিরোজায় যান। বিমানবন্দর থেকে ফিরোজায় যাওয়ার সময় পথে পথে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান দলের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী।

বেলা ১টা ২৫ মিনিটে তিনি ‘ফিরোজা’য় পৌঁছান। খালেদা জিয়ার আগমন উপলক্ষে সকাল থেকে ফিরোজা সংলগ্ন এলাকায় ভিড় করেন দলীয় নেতাকর্মীরা। তাঁদের হাতে ছিল জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা। এছাড়া তাঁরা নানা ব্যানার-ফেস্টুন বহন করেন। তাঁরা স্লোগানে স্লোগানে মুখর করে তোলেন পুরো এলাকা।

ফিরোজা ও এর আশপাশের এলাকায় আগেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। ফিরোজার প্রবেশপথ গুলশান-২ নম্বরের ৭৯ নম্বর সড়কের সামনে ব্যারিকেড দেওয়া হয়। সড়কটির দুই পাশে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়।

ফিরোজার সামনে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশের সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়; পাশাপাশি ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ‘চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ)’ এর সদস্যরা।

এদিকে লন্ডনে চিকিৎসা নেওয়ার পর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে বলে তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘চিকিৎসার পর উনি অনেকটা সুস্থ আছেন এবং মানসিকভাবেও উনি স্ট্যাবল (শক্ত) আছেন। আপনারা ওনার জন্য দোয়া করবেন।’

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের বাসভবন ‘ফিরোজা’র সামনে এক ব্রিফিংয়ে একথা বলেন তাঁর ব্যক্তিগত এই চিকিৎসক। দীর্ঘ চার মাসের চিকিৎসা শেষে যুক্তরাজ্য থেকে গতকাল সকালে ঢাকা পৌঁছান খালেদা জিয়া। বিমানবন্দর থেকে সড়কপথে তিনি নিজ বাসভবনে ফেরেন।

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ আছেন। যদিও দীর্ঘ ১৪ ঘন্টার ভ্রমণের কারণে তিনি কিছুটা অবসন্ন।

আমরা তাঁর জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই।’ বিএনপির চেয়ারপারসন সবাইকে শুভেচ্ছা, সালাম ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বলে জানান ডা. জাহিদ হোসেন। খালেদা জিয়ার জন্য কাতারের পক্ষ থেকে বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দেওয়ায় দেশটির সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, কাতার সরকার সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে এটি দিয়েছে। এ সহায়তার মধ্য দিয়ে জিয়া পরিবারের সঙ্গে তাঁদের যে সম্পর্ক, তার প্রকাশ ঘটিয়েছেন।

খালেদা জিয়াকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্স বাংলাদেশ সময় সোমবার রাতে লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দর ত্যাগ করে। পথে কাতারের রাজধানী দোহায় যাত্রাবিরতি হয়। লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদায় জানান বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বাসা থেকে মাকে বিমানবন্দরে নিয়ে যান।

গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের লন্ডনে যান বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তাঁর শারীরিক অসুস্থতার কথা জেনে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দিয়েছিলেন। সেটিতেই তিনি লন্ডনে যান। কাতারের আমিরের দেওয়া এয়ার অ্যাম্বুলেন্সেই আবার লন্ডন থেকে দেশে ফিরলেন তিনি।

লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসাধীন ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন। টানা ১৭ দিন ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনি ২৫ জানুয়ারি থেকে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় ছিলেন।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS