ঢাকা | মে ৮, ২০২৫ - ৩:২১ অপরাহ্ন

শিরোনাম

গবাদিপশুর ‘ল্যাম্পি’ চর্মরোগের প্রকোপ

  • আপডেট: Wednesday, May 7, 2025 - 10:42 pm

আতঙ্কিত খামারিরা

মিজান মাহী, দুর্গাপুর থেকে: রাজশাহীর দুর্গাপুরে দেখা দিয়েছে গবাদিপশুর ভাইরাসজনিত চর্মরোগ ‘লাম্পি স্কিণ ডিজিজ’র প্রকোপ। উপজেলায় গত দুই সপ্তাহে বসতবাড়িতে ও খামারে লালন-পালন করা প্রায় অর্ধ শতাধিক গরু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তবে এ রোগ মোকাবেলায় ভ্যাকসিন নেই সরকারি হাসপাতালে। এ নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয় খামারিরা।

তাঁরা বলছেন, সরকারি হাসপাতালে ভ্যাকসিন নেই। গ্রাম্য পশু চিকিৎসকরা নানা ধরনের চিকিৎসা দিচ্ছেন। তাতে কোন কাজে আসছে না। আক্রান্ত গরু সুস্থ হচ্ছে না।

তবে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা বলছেন, এ রোগ মোকাবিলায় ভ্যাকসিন এখনও আসেনি। এ রোগ বর্ষাকাল মারাত্মক আকার ধারণ করে। তবে এবার আগে থেকে এ রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এতে খামারিদের আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকার খামারিদের সঙ্গে কথা বলা জানা গেছে, কোরবানি ঈদের মাত্র এক মাস বাকি। তার আগেই গবাদিপশু এমন রোগে আক্রান্ত হতে শুরু করে। প্রথমে গরুর চামড়ার উপরিভাগে টিউমারের মতো উপসর্গ দেখা যায়, পরে তা মানুষের শরীরে হওয়া পক্সের মতো গুটি গুটি হয়ে গরুর সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।

দু-তিন দিনের মধ্যে তা বড় বড় হয়ে ফেটে ঘায়ে পরিণত হচ্ছে। রোগাক্রান্ত গরু খাবার খাচ্ছে না। অনেক গরুর বুকের নিচে হওয়া গুটিতে পানি জমে ক্ষত সৃষ্টি হচ্ছে। পরে সেখান থেকে খসে পড়ছে মাংস।

উপজেলার পানানগর মন্ডল পাড়া এলাকার আবুল কাশেম বলেন, এটা কী রোগ তা জানি না। এ রোগে গতবছর একটি গরু মারা গেছেন। এবার একটি বাছুর গরু আক্রান্ত হয়েছে। তীব্র শ্বাস কষ্ট হচ্ছে। বাড়িতে পল্লি চিকিৎসক ডেকে এনে ওষুধ খাওয়াচ্ছি। তাতে কোনো কাজ হয়নি। এখন রক্ত-পুঁজ হয়ে গুটিগুলো ফেটে গেছে। আরও চারটি গরু আছে। এ নিয়ে খুবই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি।

পৌর এলাকার দেবীপুর গ্রামের আরিফুল হক বলেন, খামারে দশটি গরু আছে। গতবছর এই রোগে বড় একটি গরু মারা গেছে। এবার ঈদে সব গরু গুলো বিক্রি করবো। তাই খামারের গরু নিয়ে খুবই ভয়ে আছি। সব সময় প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের পরামর্শ নিচ্ছি।

উপজেলার কিশোরপুর গ্রামের ভাই ভাই খামারে মালিক রহিদুল ইসলাম বলেন, কোরবানি ঈদের জন্য ২০ টি ষাড় গরু প্রস্তুত করছি। বাড়ি পাশে এক ব্যক্তির গরু এ আক্রান্ত হয়েছে। খুবই আতঙ্কিত আছি। এ রোগে আমার খামারের গরু আক্রান্ত হলে ঈদে গরু গুলো অবিক্রিত থেকে যাবে। তবে জানুয়ারি মাস থেকে মশা মাছির থেকে মশারি টাঙানো হচ্ছে। এখন পর্যন্ত আমার সব গরু ভাল আছে।

পৌর সদর খোড়খাই গ্রামের রুবিনা বেগম বলেন, এক সপ্তাহ আগে প্রথমে আমার একটি গাভি এ রোগে আক্রান্ত হয়। গাভিটি মরে মরে অবস্থা। পরে আমি হাসপাতালে নিয়ে যাই। এখনও আমার গাভীটি পুরোপুরি সুস্থ হয়নি।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের ভেটেরিনারি সার্জন ডা: জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। মশা ও মাছি দ্বারা এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে। তবে হাসপাতালে এ রোগের ভ্যাকসিন নাই। এ রোগ দেখা দেয়া মাত্র গরুকে হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে। কিছুতে পল্লি চিকিৎসকের কথায় প্রথমেই অ্যান্টিবায়েটিক ব্যবহার করা যাবে না। তাহলে গরুর মৃত্যু ঝুঁকি বাড়বে। তিনি বলে, এ রোগের পিক আওয়ার বর্ষাকাল। তবে এর আগেই এবার রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন গড়ে তিন চারটা ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ চর্মরোগে আক্রান্ত গরু হাসপাতালে আসছে। আমরা চিকিৎসা দিচ্ছি।

এ রোগ মোকাবেলা কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, এ রোগ মোকাবেলায় গত নভেম্বর মাস থেকে উপজেলায় আমরা গরু চাষি ও খামারিদের উঠান বৈঠক ও প্রচার পত্র বিলি করা হচ্ছে। চাষি ও খামারিদের সচেতন করা হচ্ছে। এই রোগে শুধু গবাদিপশুই আক্রান্ত হয়। মানুষ আক্রান্ত হয় না।

এ নিয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আতোয়ার রহমান বলেন, জেলার সব জায়গায় থেকে গরুর লাম্পি স্কিন ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার খবর আসছে। এটার এখনও ভ্যাকসিন নেই। আমি যত দূর জানি এ রোগ মোকাবেলায় ভ্যাকসিন তৈরির গবেষণা চলছে । এখন ট্রায়াল পর্যায়ে রয়েছে। আশা করছি জুলাই মাসে ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে।

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, মশা ও মাছি থেকে এই রোগ গরুর শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। গরুর গায়ে যেন মশা-মাছি বসতে না পারে, এ জন্য খামারিদের মশারে ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তবে এ রোগের কারণে কোরবানি ঈদে গবাদিপশুর ঘাটতি হবে বলেও জানান তিনি।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS