‘এর কোনো মানেই হয় না’: ট্রাম্পের চলচ্চিত্র শুল্ক ঘোষণায় হতবাক হল হলিউড

অনলাইন ডেস্ক: বিদেশি চলচ্চিত্রে ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার হলিউডকে বিস্ময়ের মধ্যে ফেলে দিয়েছেন। চলচ্চিত্র শিল্প সংশ্লিষ্টরা এই ঘোষণাকে ‘হুট করে নেওয়া’ ও শিল্পের কার্যপ্রক্রিয়া সম্পর্কে ‘অজ্ঞ’ এক প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
লস এঞ্জেলেস থেকে এএফপি জানায়, সোমবার পর্যন্ত বেশিরভাগ স্টুডিও ও চলচ্চিত্র সংগঠন আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালেও ট্রাম্পের ঘোষণার পর হলিউডজুড়ে জরুরি বৈঠক শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো।
‘এর কোনো মানেই হয় না,’ মন্তব্য করেছেন বিনোদন আইনজীবী জোনাথন হ্যান্ডেল।
এএফপিকে তিনি বলেন, বহু মার্কিন চলচ্চিত্র—যেমন জেমস বন্ড সিরিজ বা ‘মিশন ইম্পসিবল’—বিদেশে শুট করা হয় সৃজনশীল কারণে। ‘যদি দৃশ্য হয় টম ক্রুজ আইফেল টাওয়ার বেয়ে উঠছেন, তাহলে কী আমরা লাস ভেগাসের নকল আইফেল টাওয়ারে শুট করব? এটি হাস্যকর।’
রোববার নিজের প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ ট্রাম্প লেখেন, ‘আমি বাণিজ্য দপ্তর ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধিকে নির্দেশ দিচ্ছি, বিদেশে নির্মিত যেকোনো চলচ্চিত্র আমদানিতে ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রক্রিয়া তাৎক্ষণিকভাবে শুরু করতে।’
এই ঘোষণায় শিল্পজুড়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়। বিনোদন কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দর পড়ে যায়, শ্রমিক সংগঠনগুলো জানতে চায়, টেলিভিশন সিরিজেও কি এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে—আর সবাই প্রশ্ন তোলে, আদৌ কি এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নযোগ্য?
হ্যান্ডেল বলেন, চলচ্চিত্র মূলত মেধাস্বত্ব। ‘আপনি যেমন কাপড় বা গাড়ি কিনে দেশে আনলে তা শুল্কযোগ্য, চলচ্চিত্র সেই রকম নয়। আপনি কেবল টিকিট কেনেন, সিনেমা নিজে কিনছেন না।’
যদি শুল্ক আরোপের কোনো ব্যবস্থাও তৈরি হয়, তবু তা যুক্তরাষ্ট্রীয় চলচ্চিত্র শিল্পের ক্ষতিই করবে বলে মনে করেন তিনি। ‘এর ফল হবে—প্রযোজনা কমে যাওয়া, খরচ বেড়ে যাওয়া, প্রদর্শনের জন্য কম চলচ্চিত্র পাওয়া—যা ব্যবসার পরিবেশ ধ্বংস করবে,’ বলেন হ্যান্ডেল।
‘বিশৃঙ্খলা ছাড়া কিছু বোঝা যাচ্ছে না’
বেশিরভাগ স্টুডিও এখনও মুখ না খুললেও, হলিউডের সাংবাদিকেরা অভ্যন্তরীণ সূত্রের বরাতে জানাচ্ছেন, শীর্ষ কর্মকর্তারা এই সিদ্ধান্তে হতবাক। ডেডলাইন নামের এক বিনোদন সংবাদমাধ্যম এক পরিবেশনা নির্বাহীর মন্তব্য উদ্ধৃত করে জানায়, ‘আমি এই সিদ্ধান্তের পেছনে অন্য কোনো লক্ষ্য দেখি না, শুধু বিশৃঙ্খলা আর মনোযোগ ঘোরানো ছাড়া।’
তিনি আরও বলেন, ‘আশা করি এই সিদ্ধান্ত অন্তত আমেরিকার রাজ্যগুলোকে প্রয়োজনীয় করছাড় ও প্রণোদনা দিতে বাধ্য করবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে যেমন ব্রিটেন, কানাডা, আয়ারল্যান্ড—এসব দেশের দেওয়া করছাড় বহু মার্কিন স্টুডিওকে বিদেশে শুট করতে উদ্বুদ্ধ করে।
ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত বিতর্কিত হলেও শিল্পের দুর্দশা নিয়ে সবাই একমত। ২০২৩ সালে অভিনেতা ও লেখকদের ঐতিহাসিক ধর্মঘটের পর থেকে হলিউড এখনও পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।
কোভিডের কারণে পুরোপুরি বন্ধ থাকা ২০২০ সাল বাদ দিলে লস অ্যাঞ্জেলেসে ২০২৪ সালে চিত্রধারণের দিনসংখ্যা ইতিহাসের সর্বনিম্ন স্তরে নেমে এসেছে।
ডেডলাইন এক হলিউড প্রযোজনা অর্থদাতার বরাত দিয়ে জানায়, তিনি ট্রাম্পের ‘দেশে আরও বেশি চলচ্চিত্র নির্মাণ’-এর আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে একমত, তবে বলেন, ‘শুল্ক নয়, প্রয়োজন করছাড়। শুল্ক তো ব্যবসার অবশিষ্ট প্রাণটুকু শুষে নেবে।’
ট্রাম্পের ঘোষণায় যখন হলিউডে অস্থিরতা, তখন হোয়াইট হাউস জানায়, বিদেশি চলচ্চিত্রে শুল্ক আরোপ নিয়ে এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা সব ধরনের পথ খতিয়ে দেখছি যাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশ—আমাদের জাতীয় ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা রক্ষায় এবং ‘হলিউডকে আবার মহিমান্বিত’ করার—বাস্তবায়ন করা যায়।’
সোমবার সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘আমি শিল্পকে আঘাত করতে চাই না। আমি সাহায্য করতে চাই। কিন্তু অন্যান্য দেশ তাদের অর্থায়ন করছে।’
এই কথায় কিছুটা নমনীয়তা থাকলেও তিনি সিদ্ধান্ত থেকে পুরোপুরি সরে আসেননি। বরং তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসোমকে আক্রমণ করে বলেন, ‘অদক্ষতা ও বিদেশি হস্তক্ষেপে আমাদের চলচ্চিত্র শিল্প ধ্বংস হয়েছে। নিউসোম তো শুধু তা চোখের সামনে চলে যেতে দিয়েছেন।’ ‘তিনিই হলিউড থেকে শিল্পকে সরে যেতে দিয়েছেন।’
সূত্র: বাসস