ঢাকা | মে ৫, ২০২৫ - ২:৫০ পূর্বাহ্ন

সিটিহাট ও দামকুড়া হাটে গরু নিতে  মোড়েমোড়ে টানাটানি

  • আপডেট: Sunday, May 4, 2025 - 11:16 pm

স্টাফ রিপোর্টার: সিটিহাট ও দামকুড়া হাটে গরু নিতে গিয়ে সড়কের মোড়েমোড়ে ব্যাপারীদের গাড়ি থামিয়ে রীতিমতো টানাটানি করেছেন দুই হাটের লোকজন। রাজশাহীতে গরু কেনাবেচার দুইটি হাট নিয়ে দুই হাটের ইজারাদারের লোকজনের মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

সিটি করপোরেশন ইজারা দেয়া নগরীর সিটিহাটের ইজারাদার হয়েছেন শওকত আলীসহ কয়েকজন। অন্যদিকে, পবা উপজেলার দামকুড়া পশুহাটের ইজারা পেয়েছেন মোহাম্মদ সাহজাহান আলী। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৮৯ সালে চালু হওয়া দামকুড়া পশুহাট চালু ছিল ২০০৫ সাল পর্যন্ত।

পরে সিটিহাট চালু হলে একই দিনে ( রোববার ও বুধবার) সিটিহাটেও হাট বসানো হয়। এরপর থেকে একই সিন্ডিকেট দুই হাটই ইজারা নিয়ে দামকুড়া হাট বন্ধ রাখত। তবে এবার দুই হাটের ইজারা পেয়েছেন দুইজন ভিন্ন ব্যক্তি। ফলে গরুর ব্যাপারিদের নিজেদের হাটে নিয়ে যেতে চেষ্টা করছেন দুই হাটের লোকজন।

এ নিয়ে দামকুড়া পশুহাটের ইজারাদার মোহাম্মদ সাহজাহান আলী গত ২৯ এপ্রিল বিভাগীয় কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের অনুলিপি রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছেও পাঠানো হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়, গত ২৩ ও ২৭ এপ্রিল হাটবারে দামকুড়া হাটমুখী গরুবাহী গাড়িগুলোকে পলাশবাড়ি, কদমশহর, চব্বিশনগর, কাঁকনহাট দরগাপাড়া মোড়, কৈকুড়ি মোড়, দারুসা হাট হাজির মোড়, সাইরপুকুর মোড়, দুয়ারি মোড়, বাগধানী মোড়, কাশিয়াডাঙা মোড় এবং মুরারিপুর সিদ্দিকের মোড়ে সিটিহাটের লোকজন লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্রসহ অবস্থান নিয়ে জোর করে সিটিহাটমুখী করেছে। ফলে দামকুড়া হাটে গরু ঢুকতে পারেনি।

গতকাল রোববার সকালে কাঁকনহাট, চব্বিশনগর, কৈকুড়ি মোড়, দারুসা হাজির মোড় ও মুরারিপুর সিদ্দিকের মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, মোড়েমোড়ে দুই পক্ষই অবস্থান নিয়েছেন।

তারা গরুবাহী গাড়িগুলোকে নিজেদের হাটমুখী রাস্তা ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন। কৈকুড়ি মোড় ও দারুসা এলাকায় কর্ণহার থানা পুলিশ এবং মুরারিপুর মোড়ে দামকুড়া থানা পুলিশ মোতায়েন করা হয়। দামকুড়া বাজারেও পুলিশের একটি দল দেখা যায়।

মুরারিপুর মোড়ে দুইপক্ষের টানাটানিতে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কে গরুবাহী নসিমন-করিমনের জটল দেখা দেয়। পরে দামকুড়া থানা-পুলিশের একটি দল গাড়িগুলোকে সিটিহাটের রাস্তা ধরিয়ে দেয়। দামকুড়া হাটের ইজারাদার মোহাম্মদ সাহজাহান আলীর অভিযোগ, পুলিশও সিটিহাটের পক্ষ নিয়ে কাজ করছে।

দুপুর সোয়া ১টার দিকে দামকুড়া হাটে গিয়ে দেখা যায়, গরু এসেছে খুবই অল্প। গোদাগাড়ীর কুন্দলিয়া গ্রামের ব্যাপারী আবদুর রহমান মিলন বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৮টায় গরু গাড়িতে তুলেছি। এখনও গাড়িতেই আছে। রাস্তা থেকে ধরে এই হাটে ঢোকানো হয়েছে। কিন্তু এখানে কোনো ক্রেতা নাই। বিপদে পড়ে গেছি।’

গোদাগাড়ীর আমতলী গ্রামের রাকিব আলী বলেন, ‘আমরা সিটিহাটেই যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের ধরে এখানে ঢোকানো হয়েছে। কেউ কেউ হাটে ঢুকে ৪০০ টাকা ছাড় নিয়ে আবার বের হয়ে সিটিহাটে গেছেন।’ একই দিনে দুই হাট বসায় এই সমস্যা বাড়ছে বলেও জানান তিনি।

তবে দামকুড়া হাটের ইজারাদার সাহজাহান আলী দাবি করেন, ‘আমরা কখনও গরু ঘিরে আনি না। সিটিহাটের লোকজনই আগে শুরু করেছে। বাধ্য হয়েই আজ আমরা গরু এনেছি। পুলিশও পক্ষপাতদুষ্ট ভাবে কাজ করছে।’

অন্যদিকে, অভিযোগ অস্বীকার করে সিটিহাটের ইজারাদার শওকত আলী বলেন, ‘আমরা কারও গরু ঘিরে আনছি না। দামকুড়া হাটের লোকজনই রাস্তা থেকে গরু ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের বাধা দিতেই আমাদের লোকজন গিয়েছে। আমরা চাই, কেউ টানাটানি না করুক। ব্যাপারিরা যেখানে খুশি তাদের গরু নিয়ে যাক।’

এ বিষয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ রকিবুল হাসান ইবনে রহমান বলেন, ‘দুটি হাট একই দিনে বসায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে পুলিশ মাঠে রয়েছে। কেউ যেন জোর করে গরু না নিয়ে যেতে পারে, সেটা নিশ্চিত করা হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাস্তার নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত পুলিশ রয়েছে। গোয়েন্দা বিভাগও কাজ করছে। বড় কোনো উত্তেজনার খবর আমাদের কাছে নেই। থাকলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS