ঢাকা | মে ৫, ২০২৫ - ৩:১৮ পূর্বাহ্ন

সড়ক প্রশস্ত করতে অনুমতি ছাড়াই কাটা হলো আড়াই শতাধিক গাছ

  • আপডেট: Sunday, May 4, 2025 - 11:23 pm

এলজিইডি ও বন বিভাগের গাফিলতি

মোজাম্মেল হক, চারঘাট থেকে: রাজশাহীর চারঘাটে সড়ক প্রশস্ত করার নামে দরপত্র ছাড়াই নির্বিচার আড়াই শতাধিক গাছ কেটে নেয়া হয়েছে। যদিও প্রশাসন বলছে, সড়কের কাজের জন্য কাউকে গাছ কাটার অনুমতি দেয়া হয়নি।

কিন্তু এলজিইডি ও বন বিভাগ একে অপরের ওপরে দোষ চাপিয়ে গাছগুলো রক্ষায় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সড়কে ছায়াশীতল পরিবেশ সৃষ্টির পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা পালনকারী এসব গাছ নির্বিচারে কাটার ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, চারঘাট উপজেলার হাবিবপুর থেকে মৌলভাগ বাসুদেবপুর এলাকা পর্যন্ত একটি রাস্তা রয়েছে। আঞ্চলিক এই সড়কের দুই পাশে শত শত ছায়াদানকারী গাছপালা রয়েছে। পিচ ঢালা সড়কটি আগে ছিল ১০ ফুট, বর্তমানে দুই পাশে চার ফুট করে ৮ ফুট চওড়া হবে সড়কটি।

সম্প্রতি সড়কটি ১৮ ফুট প্রশস্ত করে নতুন করে কার্পেটিং করার জন্য দরপত্র আহ্বান করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। সড়ক প্রশস্ত করার জন্য কোনো ধরনের গাছ কাটার অনুমোদন না থাকলেও সড়কের দুই পাশের বড় বড় মেহগনি, কড়ই, আকাশমনি ও শিশুসহ কাঠজাতীয় বিভিন্ন গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।

গত ১৫ এপ্রিল থেকে সড়কের পাশের জমির মালিক ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা নিজেদের খেয়াল খুশিমত গাছগুলো কাটা শুরু করেন। গত দুই সপ্তাহে আড়াই শতাধিক গাছ কাটা হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

গতকাল রোববার সকালে সরেজমিন ওই সড়কে গিয়ে দেখা যায়, কিছুদিন পূর্বেও ছায়াশীতল সড়কটি দুই সপ্তাহের ব্যবধানে গাছ বিহীন মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। সড়কের দুই পাশে শত শত কাটা গাছের গোড়াগুলো পড়ে আছে।

মৌলভাগ এলাকায় গাছ কেটে নেওয়ার পর সড়কের দক্ষিণ পাশে এক্সকাভেটর (খননযন্ত্র) দিয়ে মাটি খুঁড়ে সড়ক প্রশস্তকরণ কাজের জন্য গর্ত করা হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, আড়াই শতাধিক গাছের মধ্যে কিছু গাছের বয়স ছিল ২০ বছরের অধিক আবার কিছু গাছ ১৫ বছর আগে লাগানো। এলজিইডি ও বন বিভাগের দুইটি প্রকল্প থেকে গাছগুলো রোপণ করা হয়েছিল।

প্রতিটি গাছের বর্তমান বাজারদর ১৫-৩৫ হাজার টাকা। তাতে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে।

উপজেলার বাসুদেবপুর এলাকার বাসিন্দা রেজাউল করিম বলেন, প্রায় দুই কিলোমিটারজুড়ে ছায়াদানকারী তরতাজা গাছগুলো কাটা হলো কোন যুক্তিতে বুঝতে পারছি না। প্রকাশ্য দিনের বেলায় গাছগুলো কাটা হলো কিন্তু কেউ বাঁধা দিলনা। উপজেলা এলজিইডি অফিস রাস্তার কাজ শুরু করতে পাশের জমির মালিকদের গাছগুলো কেটে নিতে উদ্বুদ্ধ করেছে।

সড়কের পাশের জমির মালিক রহিদুল ইসলাম বলেন, সড়ক প্রশস্ত হচ্ছে এতে গাছগুলো কাটা পড়বে। এজন্য যারা সড়কের কাজ করবে তারা এসে বলেছিল পাশের গাছগুলো কেটে নিতে। আমি গাছ লাগাইনি কিন্তু সবাই কেটে নিয়েছে এজন্য আমার জমির পাশে থাকা গাছ আমিও কেটেছি। আমি না কাটলে অন্য কেউ এসে কেটে নিতো।

সড়কের গাছ কাটার বিষয়ে এলজিইডির চারঘাট উপজেলা প্রকৌশলী রতন কুমার বলেন, হাবিবপুর থেকে বাসুদেবপুর সড়কটি দুই পাশে চার ফুট করে আট ফুট প্রশস্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গাছগুলো বন বিভাগের লাগানো। এজন্য পাশের গাছগুলো অপসারণের বিষয়ে বন বিভাগের কাছে আবেদন দেওয়া হয়েছিল।

গাছের ব্যাপারে তারা সিদ্ধান্ত নিবে আমার করণীয় কিছু নেই। সড়কের যে অংশে ফাঁকা পাওয়া গেছে সেখানে ঠিকাদার কাজ শুরু করেছে।

উপজেলা বন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, গাছগুলো আমাদের না এলজিইডির লাগানো। গাছ গুলোর ব্যাপারে একটি চিঠি পেলেও কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগেই যার যার খেয়াল খুশিমত কাটা শুরু করেছে। যারা সড়কের কাজ করবে তারা কাটতে বলেছে বলে শুনেছি। আড়াই শতাধিক গাছ কেটে নেয়া হয়েছে। অনেক চেষ্টা করেও আমরা গাছ বাঁচাতে পারিনি।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) চারঘাট উপজেলার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম বলেন, এলজিইডি ও বন বিভাগ একে অপরকে দোষারোপ করছে। কিন্তু গাছগুলো বাঁচানোর দায়িত্ব কেউ নেয়নি। আড়াই শতাধিক পুরনো গাছ নির্বিচারে কেটে ফেলা হলো সরকার রাজস্ব পর্যন্ত পেল না। যাদের গাফলতির কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে নয়তো আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হবো।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, সড়কের গাছের বিষয়ে বনবিভাগের কাছে করা আবেদনের অনুলিপির কপি পেয়েছিলাম। উপজেলা বন বিভাগকে এ বিষয়ে তদন্ত করতে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল।

কাউকে মৌখিক কিংবা লিখিতভাবে গাছ কাটতে অনুমতি প্রদান করা হয়নি কিংবা দরপত্রও হয়নি। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS