ঢাকা | মে ৩, ২০২৫ - ৯:৩৬ পূর্বাহ্ন

মানি লন্ডারিং প্রতিরোধের লক্ষ্য ব্যাংক কর্মকর্তাদের সম্মেলন

  • আপডেট: Friday, May 2, 2025 - 8:54 pm

অনলাইন ডেস্ক: বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) উদ্যোগে এবং ‘অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কমপ্লায়েন্স অফিসার্স অব ব্যাংকস ইন বাংলাদেশ’ (অ্যাকব)-এর সহায়তায় তফসিলি ব্যাংকগুলোর প্রধান পরিপালন কর্মকর্তাদের এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (১১ এপ্রিল) চট্টগ্রামে হোটেল র‍্যাডিসন ব্লুতে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সম্মেলনের প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএফআইইউর প্রধান কর্মকর্তা এ জেড এম শহীদুল ইসলাম।

অন্যদের মধ্যে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন এবং অ্যাকবের চেয়ারম্যান মাহাদ জিয়াউল হাসান কাওলাও বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক, ডেপুটি হেড অব বিএফআইইউ, বিএফআইইউর কর্মকর্তারা এবং বাংলাদেশে কর্মরত ৬০টি ব্যাংকের প্রধান ও উপ-প্রধান মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে দায়িত্ব পালনরত কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর অর্থ পাচার করে বিদেশে নিয়ে যাওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়টি বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হিসেবে অভিহিত করেন।

তিনি বলেন, ‘অ্যান্টি-টাস্কফোর্স গঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে বিএফআইইউ, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অন্যান্য সরকারি সংস্থা সমন্বিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহের রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা অর্থ পাচারের ঝুঁকি হ্রাস করেছে।

তবে অর্থ পাচার ঝুঁকি ও সংবেদনশীল মুদ্রানীতির কারণে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার ও সামগ্রিক অর্থনীতিতে কিছুটা অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে মুদ্রানীতি, বিনিয়োগের রিটার্নসহ সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকের মধ্যে সমন্বয় রাখা গেলে তা অর্থ পাচার রোধে সহায়ক হবে বলে তিনি মনে করেন।

আলোচনায় ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের মূল কারণ হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসনের অভাবকে চিহ্নিত করা হয়। যেসব ব্যাংক প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নিশ্চিত করতে পেরেছে, তারাই এখন দেশের ব্যাংকিং খাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে বলেও তিনি জানান।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকির বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যকর তদারকি নিশ্চিত করা গেলে হয়তো দেশের ব্যাংকিং খাতে এমন সংকট সৃষ্টি হতো না। বর্তমান সরকারও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে।’

অ্যাকবের চেয়ারম্যান মাহাদ জিয়াউল হক অ্যান্টি মানি লন্ডারিং এবং কাউন্টার টেররিজম ফাইনান্সিং (এএমএল/সিএফটি) কমপ্লায়েন্স জোরদার করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। সেলিম আর এফ হোসেন মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অর্থায়ন প্রতিরোধে ঝুঁকিভিত্তিক মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন ঘাটতি দূরীকরণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানের সভাপতি, বিএফআইইউর প্রধান কর্মকর্তা এ জেড এম শহীদুল ইসলাম, ব্যাংকিং খাতে অনিয়ন্ত্রিত ঋণপ্রবাহ, খেলাপি ঋণের হার বৃদ্ধি, ঋণ জালিয়াতি, করপোরেট সুশাসনের অভাব এবং অর্থ পাচার ও হুন্ডির ভয়াবহতার ফলে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, মুদ্রানীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, ব্যালেন্স অব পেমেন্টসহ সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়টি তুলে ধরেন।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, অর্থনীতির বিভিন্ন নতুন চ্যালেঞ্জ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন নীতিগত ও সময়োপযোগী উদ্যোগের ফলে ইতিমধ্যে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় রিজার্ভ ও বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

তিনি আরও বলেন, ব্যাংকিং খাতকে সচল রাখতে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন ঝুঁকি একটি স্থিতিশীল অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণে করপোরেট সুশাসনের ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা ও করপোরেট সুশাসন নিশ্চিত করতে ব্যাংকগুলোর এএমএল/সিএফটি পরিপালন ব্যবস্থা ও মনিটরিং জোরদার করার জন্য তিনি ব্যাংকগুলোকে আহ্বান জানান।

এ ছাড়া অ্যান্টি টাস্কফোর্স ও ব্যাংকিং খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট টাস্কফোর্সসহ সকল অংশীজনের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা অর্থ পাচার রোধে সহায়ক হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আলোচনা সভায় ব্যাংকিং খাতে সংকট নিরসনে করপোরেট খাতের অসংগতি প্রতিরোধ ও অর্থ পাচার রোধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ব্যবস্থার ভূমিকার ওপর আলোচনা করা হয়। এ ছাড়া মানি লন্ডারিংয়ের নতুন ধরন এবং তা প্রতিরোধের কৌশলবিষয়ক বিভিন্ন অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS