সোনালী সংবাদ

পাঁচ টাকা কেজির আম হাতবদলে ব্যবসায়ীর লাভ কয়েকগুণ

লোকসানে চাষিরা

মিজান মাহী, দুর্গাপুর থেকে: রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় কালবৈশাখী ঝড়ে ব্যাপক হারে ঝরে পড়ছে আম। ঝরে পড়া সেই আম বাগান থেকে সংগ্রহ করছেন গ্রামের সাধারণ মানুষ ও বাগান মালিকরা। তবে ঝড়ে পড়া সেই আম পাড়া মহল্লা ও মোড়ে বিক্রি হচ্ছে একেবারে পানির দামে। ৪ থেকে ৫ টাকা কেজি দরে।

এতে ব্যবসায়ীরা কয়েকগুন লাভবান হলেও লোকসানে পড়ছেন আমচাষিরা। শুক্রবার সকালে উপজেলার বিভিন্ন মোড় ও বাগানে ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের কাছে কুড়িয়ে পাওয়া অপরিপক্ক আম বিক্রির ধুম পড়ে।

আমচাষিদের অভিযোগ, গত বৃহস্পতিবার বিকেলের ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে উপজেলার প্রায় বাগানের আম ঝরে পড়েছে। তীব্র খরায় আমের বোটা নরম হওয়ায় হঠাৎ ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে অতিরিক্ত মাত্রায় ঝরে গেছে আম। মাত্র ৪ থেকে ৫টাকা কেজির দরে ব্যবসায়ীরা সেই আম কিনছেন।

এই আম তারা ঢাকা-চট্রগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করছেন। সেখানে এ আমের দাম ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু চাষিদের থেকে তারা কমদামে কিনছেন। পরিস্থিতি এমন যে না বিক্রি করে উপায় নেই। কারণ ঝড়ে পড়েছে শত শত মন আম।

শুক্রবার সকালে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কিছু ফড়িয়া আম ব্যবসায়ীরা সকাল থেকে ভ্যানগাড়ি ও ট্রাক নিয়ে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে ঝরে পড়া আম কিনছেন। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে গিয়ে তাঁরা ৪ থেকে ৫ টাকা কেজি দরে আম কিনছেন। সেই আম বস্তাজাত করে ট্রাকে করে ঢাকা চট্রগ্রামসহ বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করছেন তারা।

আম কিনতে আসা পাশ্ববর্তী বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর এলাকার আতিকুর রহমান স্বপন নামের মৌসুমি এক আম ব্যবসায়ী বলেন, ঝড়ে এসব আম দিয়ে আচার তৈরি করা হয়। আমরা এ আম ক্রয় করে বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিক্রি করি। প্রতিবছরই ঝরে পড়া কড়ালি আম কিনে ঢাকায় চালান করি।

ব্যবসায়ী আতিকুর আরও বলেন, এই কড়ালি আম গতবার ১ টাকা থেকে ২ টাকা দরে ক্রয় করছি। তবে এবার একটু কম পাওয়া যাচ্ছে। তাই ৫ টাকা কেজিদরে কিনছি। দুর্গাপুর পৌর এলাকার দেবীপুর গ্রামের ফড়িয়া ব্যবসায়ী শামীম উদ্দিন বলেন, ভোরে ৫ টাকা কেজিদরে কিনছেন। পরে বেশি আমদানি হওয়ায় ৪টাকা দরে কিনছেন ঝড়ে পড়া আম।

তিনি বলেন, এ আম আমি বানেশ্বর বাজারে গিয়ে কিছু টাকা লাভে বিক্রি করবো। তারা আবার এই আম ঢাকায় পাঠাবেন। সেখানেও আরেকদফা বিক্রি হবে। ফলে দুই তিনহাত ঘুরে এই আমের দাম দ্বিগুন বেড়ে যায় বলে জানান তিনি।

এদিকে চাষিদের এই আম ঢাকায় ও চট্রগ্রামে বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুন দামে। দুর্গাপুর পৌর এলাকার শালঘরিয়া গ্রামের বাসিন্দা রোকুজ্জামান রোকুন মুটোফোনে বলেন, আমি চাকরির সুবাদে ঢাকা মিরপুরে থাকি।

এখানে এই আম বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজিদরে। বাড়ির আম এখনও বড় হয়নি। তবে আমার বাচ্চা জিদ ধরেছে আমখাবে। আমি ৮০ টাকা কেজিদরে ১আম কিনছি। অথচ আমার গ্রামে ঝড়ের সময় বাগানে এমনিতেই পড়ে থাকে এমন আম।

পৌর এলাকার দেবীপুর গ্রামের আনিসুর রহমান বলেন, ঝড়ে বাগানে প্রচুর আম ঝরে পড়েছে। এতো আম বাসায় রাখলে পঁচে নষ্ট হয়ে যাবে। তাই ব্যবসায়ীর কাছে ৫টাকা কেজি দরে চার মণ আম বিক্রি করেছেন। চট্রগ্রামে অবস্থানরত দুর্গাপুরের পারুল আক্তার বলেন, এখানে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে এমন অপরিপক্ক আম।

অথচ আমাদের এলাকার আমচাষিরা দাম পাচ্ছেন না। ওখান থেকে কমদামে কিনে এনে এখানে বেশিদামে বিক্রি করছেন। জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি সাহারা শারমিন লাবনী বলেন, ৮০০ শ ২০ হেক্টর জমিতে আমগাছ রয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে এ অঞ্চলে বৃষ্টি নেই। হঠাৎ ঝড় ও বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকার বাগানের আম পড়ে গেছে। ঝড়ের পর গাছে গাছে এখনো যে আমগুলো সেগুলোর পরিচর্যা করলে ক্ষতি কাটিয়ে উঠবে আমচাষিরা।

Exit mobile version