সোনালী সংবাদ

নন্দনগাছীতে আন্ত:নগর ট্রেনের যাত্রা বিরতির দাবিতে রেলপথ অবরোধ

চারঘাট প্রতিনিধি: রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নন্দনগাছী রেলস্টেশনে দিয়ে রাজশাহী রুটে চলাচল করা আন্ত:নগর ট্রেনের যাত্রাবিরতির দাবিতে রেলপথ অবরোধ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বেলা ১০টা থেকে চার সহস্রাধিক লোক নন্দনগাছী রেলস্টেশনে অবস্থান নিয়ে এই কর্মসূচি শুরু হয়। কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাইদ চাঁদ।

এসময় আন্দোলনকারীরা স্টেশন সংস্কার ও আন্ত:নগর ট্রেন থামানোর দাবি সম্পর্কিত বিভিন্ন ব্যানার ও ফেস্টুন তুলে ধরেন। বেলা ১টার দিকে কর্মসূচি শেষ হয় ও ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। দাবির মধ্যে ছিল- সিল্ক সিটি এক্সপ্রেস, সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস, বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ও ঢালার চর এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রা বিরতি ও স্টেশনের সংস্কার।

 বেলা সাড়ে ১০টার দিকে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, অবরোধে অংশ নেয়া লোকজন ব্যানার, ফেস্টুন হাতে নিয়ে ট্রেন থামানোর দাবিতে স্লোগান দিচ্ছিলেন। অবরোধ ও মানববন্ধনে অংশ নেয়া লোকজনের মধ্যে ছিলেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী থেকে ঈশ্বরদীগামী একটি মেইল ট্রেন আসলে স্টেশনে প্রবেশের আগেই  জাতীয় পতাকা ও লাল পতাকা নিয়ে থামিয়ে দেয়  আন্দোলনকারী। তারা ট্রেনের চালকের রুমে গিয়ে ট্রেনের নিয়ন্ত্রণ নেয়। হাজারো মানুষ কেউ রেল লাইনে, কেউ ট্রেনের ছাদে উঠে আবার কেউ প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে অবস্থান নেয়।

প্রায় ১০-১২ মিনিট পর ট্রেনটিকে যেতে দেয়া হয়। এরপর সাড়ে ১২টার দিকে আসে চিলাহাটি থেকে রাজশাহীগামী আন্ত:নগর ট্রেন বরেন্দ্র এক্সপ্রেস। নন্দনগাছী রেলস্টেশনে ট্রেনটির নির্ধারিত যাত্রাবিরতি নেই।

তবে দাবি আদায়ের জন্য রেললাইনে সাধারণ লোকজন অবস্থান নেয়ায় ট্রেনটি সেখানে থামতে বাধ্য হয়। প্রায় ১৫ মিনিট ট্রেনটিকে আটকে থাকার পর আবু সাইদ চাঁদের সহযোগিতায় ট্রেনটি সেখান থেকে রাজশাহীর দিকে রওনা হয়।

এসময় রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাইদ চাঁদ বলেন, যদি এরপরও আমাদের সমস্যার সমাধান না হয় তবে হাজার হাজার মানুষ নন্দনগাছীতে অবস্থান নিবে কোনো ট্রেন চলবে না। আপনারা বলছেন আপনাদের জনশক্তি নাই, আমরা বিনা পয়সায় জনশক্তি দেবো, স্টেশন মাস্টার দেবো, তবুও স্টেশন চালু করতে হবে।

তারপরও যদি ট্রেন না থামে তবে এরপর আন্দোলন হলে তা থামানোর দায় দায়িত্ব রেল কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে।  অবরোধে অংশ নেয়া স্থানীয় বাসিন্দা মোজাম্মেল হক বলেন, নন্দনগাছী স্টেশনটি তিন উপজেলা থেকেই নিকটবর্তী। এই তিন উপজেলার হাজারো মানুষ বিভিন্ন এলাকায় যাত্রা করেন। সড়কপথে যানজটের কারণে ভোগান্তি হয়।

বিকল্প হিসেবে রেলপথ ব্যবহার করা যায়। নন্দনগাছী স্টেশনে সব আন্তনগর ট্রেন যাত্রাবিরতি দিলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে সরকারও রাজস্ব পাবে। মানববন্ধন অবরোধে অংশ নিয়ে জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী অধ্যক্ষ নাজমুল হক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আশেপাশের মানুষের প্রাণের দাবি আন্তনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতি।

বহু বছর ধরে কয়েক দফা এই দাবি নিয়ে মানুষ অবরোধ ও মানববন্ধন করেছে, কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেই ব্যবস্থা নেয়নি। আমাদের দাবি, অতি দ্রুত এখানে ট্রেনের যাত্রাবিরতির ব্যবস্থা করা হোক। স্টেশনটি চালু করা হোক।

পার্শ্ববর্তী সরদহ রেলস্টেশনের মাস্টার ইকবাল হোসেন জানান, অবরোধের কারণে বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ট্রেন আশেপাশের বিভিন্ন স্টেশনে প্রায় এক ঘন্টা থেমে ছিল। এছাড়াও কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ও মেইল ট্রেনটি ১৫ মিনিট দেরিতে গেছে। বেলা ১টার দিকে অবরোধ তুলে নেয়ায় ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।

আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধির সঙ্গে রেল কর্তৃপক্ষ বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। উল্লেখ্য, ১৯২৯ সালে উপজেলার নন্দনগাছী স্টেশনটি স্থাপিত হয় নিমপাড়া ইউনিয়নের বরকতপুর এলাকায় যা নন্দনগাছী স্টেশন নামে পরিচিত। শতবর্ষী স্টেশনটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় ২০১৫ সালের শেষের দিকে।

নিয়ম অনুযায়ী এই স্টেশনে স্টেশন মাস্টার, টিকিট মাস্টার, পোর্টারম্যান, কয়েন্সম্যান, গেটম্যানসহ প্রায় ১২ জন জনবল ছিল। কিন্তু বর্তমানে শুধুমাত্র পোর্টারম্যান পদে একজন কর্মরত আছেন। শুধুমাত্র দুইটি লোকাল ট্রেন সেখানে থামে।

Exit mobile version