রাজশাহীসহ এলজিইডির ৩৬ অফিসে দুদকের অভিযান

স্টাফ রিপোর্টার: নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার, প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন না করে অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রধান কার্যালয় ও রাজশাহীসহ দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ৩৬টি এলজিইডি অফিসে অভিযান পরিচালনা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার সকালে দুদকের বিভিন্ন জেলার সমন্বিত কার্যালয় থেকে ৩৬টি এনফোর্সমেন্ট টিম পৃথকভাবে এসব অভিযান পরিচালনা করেন।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সকালে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ইসমাইল হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি দল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) রাজশাহী জেলা কার্যালয়ে অভিযান চালান। দুদকের সদস্যরা রাজশাহী এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলামের কক্ষে প্রবেশ করে তার উপস্থিতিতে সরকারি কাজের বিভিন্ন প্রকল্পের ফাইলপত্র দেখেন।
এসময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। এরপর এলজিইডির বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদক কর্মকর্তারা। পরে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘ঠিকাদারদের বিল প্রদানের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কমিশন বা ঘুষ নেওয়া হচ্ছে বলে আমরা অভিযোগ পাই।
আমরা সব প্রকল্পের নথিগুলো দেখলাম। যে নির্বাহী প্রকৌশলী বা যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলাম।’ তিনি বলেন, ‘আমরা কমিশন আদায়ের তাৎক্ষণিক প্রমাণ পাইনি। তবে এটা দেখলাম যে, এক ঠিকাদার কাজ পেয়ে অন্য কেউ কাজ করছেন। প্রত্যেকটা কাজের ক্ষেত্রে এই অনিয়ম হচ্ছে।
কাজ নিয়ে নিজে না করে অন্য কেউ করলে অনিয়ম হওয়ার সুযোগ থেকে যায়। এভাবে কাজ হস্তান্তর করা প্রাথমিক অপরাধের মধ্যে পড়ছে। আমরা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব।’ তিনি জানান, মাঠপর্যায়ে কাজের মান কেমন তা তারা সরেজমিনে দেখবেন। তাদের সঙ্গে প্রকৌশলীকেও নেওয়া হবে। এসব দেখার পর তারা প্রধান কার্যালয়ে একটি প্রতিবেদন দেবেন।
এদিকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) নওগাঁ জেলার নওগাঁ সদর উপজেলায় চলমান বিভিন্ন প্রকল্পের সড়ক নির্মাণ ও সড়ক মেরামত কাজে নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় অভিযান পরিচালনা করা করে।
মঙ্গলবার দুপুরে ওই অভিযান শেষে দূর্নীতি দমন কমিশন সমান্বিত জেলা কার্যালয় নওগাঁর উপ-সহকারী পরিচালক মেহবুবা খাতুন রিতা জানান, এনফোর্সমেন্ট টিম প্রথমে নির্বাহী প্রকৌশলী এলজিইডি নওগাঁ সদর উপজেলা এর কার্যালয় হতে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলির সিডিউল ও কার্যাদেশসহ অন্যান্য রেকর্ড পত্র সংগ্রহ করে।
পরবর্তীতে প্রকল্পগুলোর আওতাধীন নির্মিতব্য রাস্তাগুলি পরিদর্শন করে। তিনি আরও জানান অভিযানকালে দেখা যায়, প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। তবে অনুমোদিত সিডিউলের সাথে বাস্তবায়িত কাজের পরিমাপ ও ব্যবহৃত উপকরনের গুনগতমান নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ কর্তৃক প্রদত্ত প্রতিবেদন ও সংগৃহীত রেকর্ডপত্র বিস্তারিতরূপে পর্যালোচনাপূর্বক টিম কমিশন বরাবর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করবে।
অন্যদিকে দুদকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) তানজির আহমেদ জানিয়েছেন, এলজিইডি অফিসগুলোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রকল্প এবং উন্নয়নকাজে অনিয়মের অভিযোগে দুদক এই অভিযান পরিচালনা করেছে।
তিনি আরও জানান, দুদকের সহকারী পরিচালক পাপন কুমার সাহা ও মনির মিয়ার নেতৃত্বে একটি দল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতি, একাধিক প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন না করেই বিধিবহির্ভূতভাবে অগ্রিম বিল উত্তোলন করে আত্মসাৎ, এলজিইডির তত্ত্বাবধানে গ্রামগঞ্জের রাস্তা এবং ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণকাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার ও কাজের গুণগতমান বজায় না রাখার অভিযোগসহ অন্তত শতাধিক অভিযোগ অভিযান পরিচালনা করেছে দুদক।
যেসব কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে- ঢাকা বিভাগের মধ্যে রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়, কেরানীগঞ্জ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল ও মাদারীপুর অফিসে অভিযান পরিচালনা করছে দুদক।
একই সাথে চট্টগ্রাম বিভাগের সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম ১ ও ২, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চাঁদপুর, রাঙ্গামাটি ও কক্সবাজার; ময়মনসিংহ বিভাগের ময়মনসিংহ ও জামালপুর; সিলেটে বিভাগের সিলেট ও হবিগঞ্জ; খুলনা বিভাগের খুলনা, যশোর, বাগেরহাট ও ঝিনাইদহ; বরিশাল বিভাগের বরিশাল, পটুয়াখালী ও পিরোজপুর; রাজশাহী বিভাগের পাবনা, বগুড়া, রাজশাহী ও নওগাঁ; রংপুর বিভাগের দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, রংপুর ও কুড়িগ্রাম এবং ময়মনসিংহ বিভাগের ময়মনসিংহ ও জামালপুর জেলার আওতাধীন এলজিআরডি অফিসে অভিযান পরিচালনা করছে দুদক।