ঢাকা | এপ্রিল ২৯, ২০২৫ - ৩:৫০ পূর্বাহ্ন

তীব্র গরম উপেক্ষা করে বোরো ধান কাটতে শুরু করেছেন কৃষকরা

  • আপডেট: Monday, April 28, 2025 - 12:22 am

সাইদ সাজু, তানোর থেকে: রাজশাহীর তানোরে প্রচণ্ড তাপদাহের মধ্যেই বিলকুমারী বিলের বোরো ধান কাটতে শুরু করেছেন কৃষকরা। ফলন ও দামে খুশি এবার তারা বেশ খুশি।  প্রতিটি জমির ধান পেকে গেছে। প্রচণ্ড রোদের কারণে শরীর থেকে পানি বেরিয়ে পড়ছে। এ কারণে ভোর থেকে সকাল সাড়ে ১১টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত শ্রমিকরা ধান কাটতে পারছেন।

১২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত জমিতে প্রচণ্ড রোদের কারণে টিকতে পারছেন না শ্রমিকরা।  ৪টার পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে ধান কাটার কাজ। এবার ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন বিলপাড়ের প্রায় সকল কৃষকরা।

বিলের জমিতে ধান কেটে মাথায় বা ভারে করে সড়কে এনে রাখছেন শ্রমিকরা। দু’এক বোঝা ধান বহন করে সড়কের দু’পাশে জড়ো করছেন এবং গাছের নিচে শরীর শীতল করার চেষ্টা করছেন তারা।

প্রচণ্ড রোদ ও তাপমাত্রার কারণে সকাল ১১টা থেকে দুপুর তিন টা পর্যন্ত রাস্তায় তেমনভাবে যানবাহন দেখা যাচ্ছে না। অথচ ধান কাটা শ্রমিকরা রোদের মধ্যেই কমবেশি সারাদিন জমিতেই পার করছেন। রাতে শীতল আবহাওয়ার কারণে ঘুম পারতে পারছেন শ্রমিকরা। ধান কাটার জন্য ইতিপূর্বেই বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিকরা এসে পড়েছেন। তারাই ধান কাটার মূল ভরসা।

  সরেজমিনে দেখা গেছে, তানোর উপজেলার চান্দুড়িয়া ইউপির চান্দুড়িয়া বাজারের বা চোকির ঘাটের পশ্চিমে, রাতৈল গ্রামের পূর্ব দিকে, দেওতলা গ্রামের পূর্ব দিকে, গাগরন্দ গ্রামের পূর্ব প্রান্তে, তানোর পৌর এলাকার কালীগঞ্জ বাজারের উত্তর দক্ষিণে, মাসিন্দা গ্রামের পূর্ব দিকে, হাবিবনগর, আকচা, বুরুজ, ভদ্রখন্ড, জিওল, চাদপুর, আমশো, মুথরাপুর, তাতিয়ারপাড়া, গোল্লাপাড়া, হলদার পাড়া, কুঠিপাড়া, তানোর পাড়া, শীতলীপাড়া, গুবিরপাড়া, সিন্দুকাই, ধানতৈড়, চাপড়া, গোকুল, তালন্দ নিচ পাড়া, সুমাসপুর হরিদেবপুর গ্রামে  পূর্ব দিকে, লবিয়তলা ব্রীজের পূর্ব ও পশ্চিম দিকে, কলমা ইউপির কুজিশহর, চন্দনকোঠা, আজিজপুর গ্রামের পূর্ব দিকে বিলের জমিতে ধান কাটা চলমান।

কামারগাঁ ইউপির কামারগাঁ গোদামের নিচে, দমদমা, শ্রীখন্ডা, মজুমদার পাড়া, বাতাসপুর, কৃষ্টপুর, পারিশো দূর্গাপুর, মাড়িয়া, মাদারিপুর, ভবানীপুর, জমসেদপুর ও মালশিরা গ্রামের পূর্ব দিকে বিলের জমিতে যারা শ্রমিক পেয়েছেন তারাই ধান কাটা শুরু করেছেন।

প্রতিটি জমির ধান পেকে গেছে। অনেকে আবার ধান কেটে জমিতেও রাখছেন। কারণ তাপমাত্রা প্রচুর ভালোভাবে শুকিয়ে ঘরে তুলবেন। ধানতৈড় গ্রামের কৃষক মুনসুর রহমান বলেন, অনেকের ধান কাটা হয়েছে, কিন্তু মাড়াই হয়নি। আমার ছোট ভাই আফসার দুই বিঘা জমির ধান মাড়াই করে ২০ মণ করে ৪০ মণ ফলন হয়েছে।

যাদের নিজস্ব জমি তাদের রোপণ থেকে মাড়াই পর্যন্ত ২০ হাজার টাকা করে খরচ হবে। আর যারা লিজ নিয়ে আবাদ করেছে তাদের ২৫ হাজার টাকা করে বিঘায় খরচ হবে। তিনি আরও জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে সময় মত রোপণ ও উত্তোলন করতে পারছেন বিল পাড়ের কৃষকরা।

স্থানীয় শ্রমিক মোস্তফা বলেন, আমরা মজুরি হিসেবে ধান কাটছি। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কাটা যায়। কারন প্রচুর রোদ, জমিতে টিকাই কষ্টকর। তবে আমরা যে সব জমির ধান কেটেছি।

ওই সব জমিতে নিম্নে ২৫ মণ করে ফলন হবে। তিনি আরও জানান, এক বিঘা জমির ধান কাটতে ৪ জন করে শ্রমিক লাগে। যে সব জমির ধান পড়ে আছে সেগুলোতে ৫/৬ জন করে শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। উপজেলায় বিলের জমিতে বরাবরের মতই আগাম বোরো চাষবাদ হয়ে থাকে।

আর উপরের মাঠের জমিতে আলু উত্তোলনের পর বোরো ও আউশ চাষাবাদ হয়। এ কারনে বিলের জমিতে ধান কাটা চলছে, আর উপরের জমিগুলোতে পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এবারে বোরো চাষের লক্ষ্যমত্রা ছিল ১৪ হাজার ২০০ হেক্টর জমি। কিন্তু চাষাবাদ হয়েছে ১৪ হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে। ৭০ হেক্টর জমিতে কম বোরো চাষ হয়েছে। বিলের চান্দুড়িয়া ইউপি থেকে কামারগাঁ ইউপি পর্যন্ত আগাম বোরো চাষ হয়েছে ৩৯৪ হেক্টর জমিতে।

উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮৪ দশমিক ৮০০ মে: টন। ১৫ মার্চের আগে যে সব জমিতে ধান রোপণ করা হয় সেগুলো বোরো আবাদ হিসেবে ধরা হয়। আর ১৫ মার্চের পরে যে সব জমি রোপণ হয় সেগুলোকে আউশ চাষাবাদ হিসেবে ধরা হয়। এবারে ৭ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে আউশ চাষ হয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ আহম্মেদ বলেন, বোরো রোপণের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে আছে। বিলের বোরো ধানে রোগবালাই তেমন ছিল না। দু এক জায়গায় হলেও মাঠ কর্মীদের সঠিক পরামর্শে সেটা দূর করা হয়েছে। আশা করছি বরাবরের মতই এবারো বিলের জমিতে ভালো ফলন হবে।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS