৩০ ঘন্টায় মহিষের গল্পের পরিসমাপ্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক: গোসল করাতে পুকুরে নামানো মহিষ হঠাৎ খেপে গিয়ে দড়ি ছিঁড়ে পালানোকে কেন্দ্র করে শুরু হয় টানটান উত্তেজনায় ভরা ৩০ ঘন্টার এক নাটক।
পালিয়ে যাওয়ার পর এক উপজেলা থেকে আরেক উপজেলায় ছুটে বেড়ানো, ভুট্টাখেত নষ্ট করা, ১০ জনকে আহত করা আর প্রাণপণে ধাওয়া-সব মিলিয়ে যেন সিনেমার চিত্রনাট্য!
রাজশাহীর গ্রামাঞ্চলে গত দুই দিন ধরে এক অদ্ভুত উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে সেই মহিষটি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আরিপপুর গ্রামের বাসিন্দা এমদাদুল হক সরকারি এক পুকুরে তাঁর এক জোড়া মহিষকে গোসল করাচ্ছিলেন। হঠাৎ করে জোড়া ছিঁড়ে একটি মহিষ দৌড় দেয় এবং মুহূর্তেই আড়াল হয়ে যায়। সেই থেকে শুরু হয় এমদাদুল ও তাঁর স্বজনদের বিরামহীন দৌড়।
প্রথম দিন পুরো বাঘা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে খোঁজ চলে। রাতের আঁধারে মহিষটি নাটোরের বাগাতিপাড়ার জামনগর গ্রামে ঢুকে পড়ে। গ্রামের আশপাশে সারারাত পাহারা দিয়ে সময় কাটান তারা। শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে আবার দেখা মেলে মহিষটির।
তখন থেকে শুরু হয় দ্বিতীয় দিনের অভিযানে ধাওয়া-পালানোর খেলা। দুপুর নাগাদ মহিষটি রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার দইপাড়া ও দুলবপুর মাঠে ঢুকে পড়ে। মাঠে থাকা ভুট্টা ক্ষেতে চালায় তাণ্ডব-নষ্ট করে ফেলে অন্তত ১০ বিঘা জমির ফসল।
একপর্যায়ে গ্রামবাসী এবং এমদাদুলের দল মিলে মহিষ ধরার চেষ্টা করলে শুরু হয় হামলা। গুঁতা ও লাথিতে অন্তত ১০ জন আহত হন, যাঁদের মধ্যে এমদাদুল হক ও তাঁর ছেলে সজলও আছেন।
আনারুল ইসলাম ও মাজেদুল ইসলাম নামের দুজনকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। অসহায় হয়ে পড়লে পরিবারটি যোগাযোগ করে বন বিভাগ ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের সঙ্গে। তবে শুক্রবার অফিস বন্ধ থাকায় তারা সহযোগিতা পায়নি। স্থানীয় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাও জানিয়ে দেন, এমন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো ব্যবস্থা তাঁদের নেই।
অবশেষে বিকেলে দইপাড়া ও দুলবপুর গ্রামের লোকজনের সহায়তায় শুরু হয় দড়ির ফাঁদ তৈরির পরিকল্পনা। সন্ধ্যার আগে সফল হয় সেই ফাঁদ। ৩০ ঘণ্টার বিশাল অভিযান শেষে ধরা পড়ে দুরন্ত মহিষটি। কিন্তু এর মধ্যে ক্লান্ত, আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে পুরো এক কমিউনিটি।
মহিষটির আচরণের কারণ সম্পর্কে পুঠিয়া উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, “এমন আচরণের পেছনে অসুস্থতা, কুকুরের কামড় কিংবা মানসিক অস্থিরতা থাকতে পারে। নিশ্চিত করে কিছু বলা কঠিন।”
শেষ পর্যন্ত মহিষ ধরা পড়লেও দুই দিনের এ ঘটনা গ্রামবাসীর মনে রেখে যাবে দুঃস্মৃতি, আর এমদাদুল হক ও তাঁর পরিবারের জন্য হয়ে থাকবে এক ক্লান্তিকর কিন্তু ভুলে না যাওয়ার মতো অভিজ্ঞতা।