ওমানে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু আলোচনা শুরু

অনলাইন ডেস্ক : ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র শনিবার ওমানে নতুন একটি সম্ভাব্য পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। তিন সপ্তাহে এটি তাদের তৃতীয় দফা বৈঠক।
মাসকাট থেকে এএফপি জানায়, আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি। এবারকার বৈঠকে উভয় পক্ষের কারিগরি বিশেষজ্ঞরাও যুক্ত হয়েছেন।
আলোচনার লক্ষ্য হলো এমন একটি নতুন চুক্তিতে পৌঁছানো, যা ইরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরির পথ থেকে বিরত রাখবে—যদিও তেহরান শুরু থেকেই পরমাণু অস্ত্র তৈরির অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। বিনিময়ে ইরানকে দেওয়া হবে বিধ্বংসী নিষেধাজ্ঞা থেকে কিছুটা মুক্তি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদেই আগের বহুপাক্ষিক পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন।
আলোচনা প্রসঙ্গে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাকচি বলেন, ‘আমরা সতর্ক আশাবাদী। যদি যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র দাবি হয় যে, ইরান যেন পরমাণু অস্ত্র তৈরি না করে—তাহলে সেটি বাস্তবায়ন সম্ভব।’ তবে যুক্তরাষ্ট্র যদি ‘অবাস্তব বা অযৌক্তিক দাবি তোলে, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই সমস্যা দেখা দেবে’, তিনি যোগ করেন।
ইরানের তাসনিম বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, মার্কিন বিশেষজ্ঞ দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের নীতিনির্ধারক মাইকেল অ্যান্টন। ইরানের পক্ষে উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী কাজেম ঘারিবাবাদি এবং মজিদ তাখত রাভাঞ্চি নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
ইরানি রাষ্ট্রীয় টিভি জানায়, স্থানীয় সময় শনিবার দুপুর নাগাদ (গ্রিনিচ সময় ০৮:০০টায়) আলোচনা শুরু হয়।
রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইআরএনএ জানায়, যদিও এক দিনের বৈঠকের পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তবে বিষয়টি এখন কারিগরি ও বিশদ আলোচনায় চলে যাওয়ায় প্রয়োজন হলে বৈঠক বাড়ানো হতে পারে।
চুক্তি না হলে বিকল্প প্রস্তুত: ট্রাম্প
টাইম ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, আলোচনা ব্যর্থ হলে তিনি সামরিক পদক্ষেপ নিতে পিছপা হবেন না। তবে তিনি এটাও বলেন, ‘বোমা ফেলার চেয়ে একটি চুক্তিই আমি বেশি পছন্দ করব।’
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাঈল বাগাঈ জানান, এবারকার আলোচনাও ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আলবুসাইদি’র মধ্যস্থতায় হচ্ছে, যেমন গত দুই শনিবার মাসকাট ও রোমে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রশাসন ২০১৫ সালের ঐতিহাসিক চুক্তি থেকে সরে আসার পর এটিই দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে উচ্চপর্যায়ের সরাসরি আলোচনা। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ট্রাম্প ফের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তেহরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপের নীতি পুনর্বহাল করেন।
মার্চে তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির কাছে একটি চিঠি পাঠান, যেখানে আলোচনার প্রস্তাবের পাশাপাশি কূটনৈতিক সমাধান ব্যর্থ হলে সামরিক পদক্ষেপের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়।
গত মঙ্গলবার ওয়াশিংটন ইরানের তেল নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করে, যাকে তেহরান আখ্যা দেয় ‘শত্রুতা’ হিসেবে।
পশ্চিমা দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে, ইরান গোপনে পরমাণু অস্ত্র বানানোর চেষ্টা করছে—যদিও ইরান বারবার বলছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি শুধুই শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে।
জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএ প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বুধবার জানান, নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনার কাছে কিছু সুড়ঙ্গের নির্মাণ সম্পর্কে ইরানের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে, যেগুলো স্যাটেলাইট চিত্রে ধরা পড়েছে। ইরান এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি।
ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণ: অমীমাংসিত ইস্যু
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ‘অনারেস্টলি’ পডকাস্টে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ইরান যদি শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি চালাতে চায়, তাহলে তাদের উচিত অন্যান্য দেশের মতো বাইরের উৎস থেকে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম আমদানি করা।
বর্তমানে ইরান ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে—২০১৫ সালের চুক্তির নির্ধারিত সীমা ৩.৬৭ শতাংশের অনেক বেশি, তবে অস্ত্রোপযোগী মাত্রা (৯০ শতাংশ) পর্যন্ত এখনো পৌঁছায়নি।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাকচি বলেছেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অধিকার তাদের জন্য ‘অপরিবর্তনীয়’ বা ‘অলোচনাতীত’।
এ সপ্তাহের শুরুতে এক বক্তব্যে আরাকচি বলেন, ইরান অন্তত ১৯টি নতুন পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে।
সম্প্রতি তেহরান ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির সঙ্গেও যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে—তাদের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বৈঠকের আগে।
বৃহস্পতিবার আরাকচি জানান, ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে তিনি নিজে সফর করতেও প্রস্তুত।
গত সপ্তাহে মার্কো রুবিও ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন সিদ্ধান্ত নেয়, ইরানের অনুমোদিত কর্মকাণ্ডের কারণে ২০১৫ সালের চুক্তির ‘স্ন্যাপব্যাক’ প্রক্রিয়া চালু করবে কি না—যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে জাতিসংঘের পুরোনো নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনর্বহাল করবে। এ সুযোগ অক্টোবরে শেষ হয়ে যাবে।
ইরান হুঁশিয়ারি দিয়েছে, যদি ‘স্ন্যাপব্যাক’ চালু হয়, তবে তারা পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (ঘচঞ) থেকে সরে আসতে পারে।
সূত্র: বাসস