াকা | এপ্রিল ২৪, ২০২৫ - ২:৩৭ পূর্বাহ্ন

অসময়ে যমুনার ভাঙন, দিশেহারা তিন গ্রামের সহস্রাধিক পরিবার

  • আপডেট: Wednesday, April 23, 2025 - 11:10 pm

দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি নদীপাড়ের মানুষের

পাবনা প্রতিনিধি: পাবনার বেড়ায় নৌ-চ্যানেল সচল রাখতে ড্রেজিংয়ে গতিপথ বদলেছে যমুনা নদীর। ফলে প্রবল স্রোতে অসময়ে দেখা দিয়েছে ভাঙন। এতে হুমকিতে পড়েছে উপজেলার নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়নের তিনটি গ্রামের অন্তত এক হাজারেরও বেশি পরিবার।

স্থানীয়রা বলেছেন, ভাঙন না থামলে নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে মসজিদ, মাদরাসা, কবরস্থান ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার দাবি এলাকাবাসীর।

ভাঙন আতঙ্কে থাকা এলাকাবাসী ও পাউবো সূত্র জানায়, গত দুই বছরে যমুনার ভাঙনে পাঁচ শতাধিক পরিবার তাদের বসতভিটা হারিয়েছে। হাজারেরও অধিক বিঘা ফসলি জমি বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে। গত কয়েক বছর ধরে বর্ষার আগেই যমুনা ভাঙন তাণ্ডব চালাচ্ছে।

সূত্রটি আরও জানায়, স্রোত এদিকে না থাকায় নদী ছিল দূরে। কিন্তু পূর্বে অবৈধভাবে ড্রেজিংয়ে বালু উত্তোলন ও নৌ চ্যানেল সচল রাখতে অব্যাহতভাবে ড্রেজিংয়ের ফলে নদী গতিপথ পাল্টেছে। ফলে স্রোত এসে এসব এলাকায় আঘাত হানায় ভাঙন তালিকায় চরের নতুন নতুন গ্রাম অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে।

 গত দুই মাস ধরে যমুনার তীরবর্তী এলাকাগুলোতে ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়নের নেওলাইপাড়া, বাটিয়াখরা ও মরিচাপারা গ্রামের বাসিন্দাদের আশঙ্কা বেড়ে চলেছে। আশঙ্কার কথা জানিয়ে ভাঙন এলাকা

বাটিয়াখড়া গ্রামের বাসিন্দা আফতাব হোসেন বলেন, এই তিনটি গ্রামে এক হাজারেরও বেশি পরিবারের বসবাস। সবাই আতঙ্কে রয়েছেন। পূর্বের ভাঙনগুলোতে এক হাজার বিঘার মতো জমি নদী খেয়েছে। এবারও শুরু হয়েছে। এভাবে চললে আমাদের বাড়িঘর, মসজিদ, মাদরাসা, গোরস্তান সবকিছু ভেঙে নদীতে চলে যাবে।

নেওলাই গ্রামের গৃহবধূ মজিরন বেওয়া জানান, চর এলাকার প্রায় সব মানুষের সংসার চলে জমিজমা চাষবাসের ওপর। এদিকে একের পর এক জমি নদীতে চলে যাচ্ছে। গত দুই বছর ছাড়া আমার বিয়ের পর এ ধরনের ভাঙন দেখি নাই। ভাঙন থামাতে সরকার ব্যবস্থা না নিলে তাদের সব শেষ হয়ে যাবে বলেও জানান এ গৃহবধূ।

 নদীপাড়ের আরেক বাসিন্দা আরশেদ বলেন, এখানকার জমিগুলোতে গম, বাদাম ও তিল থেকে শুরু করে অন্যান্য ফসল আবাদ হতো। এখন সেগুলো নদীর ভেতর। এখন যেসব জমি দেখা যাচ্ছে ভাঙন না থামলে এগুলোও যাবে।

 এভাবে যদি ফসলি জমি হারাতে থাকি তাহলে আমরা কৃষকরা বাঁচবো কীভাবে? নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু দাউদ বলেন, এরইমধ্যে তীরবর্তী ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে কাজ শুরুর আশ্বাস দিয়েছেন।

এদিকে, প্রতি বছর বর্ষাকালে নদী ভাঙন দেখা দিলেও এ বছর অসময়ে অর্থ্যাৎ শুকনা মৌসুমেই ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের কয়েকটি গ্রামেও। ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ডাম্পিং শুরু করলেও থামছে না ভাঙনের তীব্রতা।

 জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার খোলাবাড়ি থেকে চরডাকাতিয়া হয়ে বড়খাল পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমটার এলাকা জুড়ে চলছে এ ভাঙন। তবে বর্তমানে ভাঙনের ভয়াবহতা চলছে চরডাকাতিয়া উত্তরপাড়া থেকে দক্ষিণপাড়া পর্যন্ত আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে।

ভাঙন তাণ্ডবে গত এক মাসে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে হাজারি গ্রামের অন্তত ২০টি ঘরবাড়ি ও শতশত একর ফসলি জমি। ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষ বাড়ি-ঘর সরিয়ে নেয়াসহ আতঙ্কে জীবন যাপন করছে।

ভাঙনের মুখে পড়েছে চরডাকাতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদরাসা একাধিক সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও ভাঙন কবলে বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি।

ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলেছে, ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ডাম্পিং চলছে। নদী তীর সংরক্ষণে স্থায়ী কাজের জন্য সম্ভাবতা যাচাই করা হচ্ছে।

সেই রিপোর্ট অনুযায়ী এই এলাকায় নদী ভাঙনরোধে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না হলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। তাই দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি তাদের।

নেওলাইপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ইমদাদুল বলেন, নদী আগে অনেক দূরে ছিল, ভাঙতে ভাঙতে এখন বাড়ির কাছাকাছি চলে আসছে। কিনারায় স্রোত ছিল না।

গতি বদলে যাওয়ায় তীরবর্তী এলাকায় স্রোত হচ্ছে। বাটিয়াখড়া গ্রামের বাসিন্দা আফতাব হোসেন বলেন, বিগত বছরগুলোতে নদীর পেটে এক হাজার বিঘার মতো জমি চলে গেছে। ভাঙন রোধে এখনই দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বাড়ি-ঘর, আবাদি জমি, গ্রামের মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু দাউদ বলেন, ইতোমধ্যে তীরবর্তী ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। তবে বাড়িঘর আক্রান্ত হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ইতোমধ্যে  জানানো হয়েছে। কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে কাজ শুরুর আশ্বাস দিয়েছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বেড়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ভাঙন রোধে জিআর ব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমরা ঠিকাদার নিযুক্ত করেছি। দ্রুত কাজ শুরু হবে।

অসময়ে নদী ভাঙনের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, নৌ-চ্যানেল সচল রাখতে ড্রেজিং করায় এই অংশে নদীর গভীরতা বেশি। আর নদীর স্রোত সব সময়ই বেশি থাকে। নদী গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় স্রোত চরে আঘাত হানছে, ফলে নিচের মাটি সরে গিয়ে ভাঙন হচ্ছে।

এ বিষয়ে পাবনার বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) হায়দার আলী বলেন, ভাঙন রোধে নেওলাইপাড়ার ৭১০ মিটার নদী এলাকায় ৭টি প্যাকেজে একটি কাজের অনুমোদন হয়েছে।

এরইমধ্যে তিনটি প্যাকেজের কাজ চলমান রয়েছে। এর আওতায় ২৫০ কেজির জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। কয়েকদিন আগে আমাদের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও ডিজাইন টিম ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ চলছে।