ঢাকা | মে ৭, ২০২৫ - ৫:২৯ পূর্বাহ্ন

বাগমারায় পাঁচ গ্রামের কৃষকদের বিক্ষোভ

  • আপডেট: Tuesday, April 22, 2025 - 11:17 pm

জোকা বিলে মাছ চাষ নিয়ে বিরোধ

বাগমারা প্রতিনিধি: বাগমারার নরদাশ ইউনিয়নের বহুল আলোচিত জোকা বিল মৎস্য চাষ প্রকল্পের দুইজন সহ-সভাপতি সহ সাত জনের বিরুদ্ধে প্রায় কোটি টাকা আত্নসাতের অভিযোগ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে চরম বিরোধ দেখা দিয়েছে।

এই বিরোধের জের ধরে গতকালও হাট মাধনগর, সুজন পালশা, পানিয়া ও নরদাশসহ বিলসংলগ্ন পাঁচ গ্রামের কৃষক ও মৎস্যজীবীরা হাট মাধনগর বাজারে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করেছেন।

এর আগে গত সোমবার বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ওই প্রকল্পের প্রায় কোটি টাকা আত্নসাতের অভিযোগে জোকা বিল মৎস্য চাষ প্রকল্পের সহ-সভাপতি জনাব আলী, সহ-সভাপতি মাহাবুর রহমান, সদস্য রাশেদুল ইসলাম, হেলাল উদ্দিন, জাহাঙ্গীর আলম, সিদ্দিকুর রহমান ও আমিনুল ইসলামকে কমিটি থেকে বহিষ্কার করা হয়।

মঙ্গলবার সরজমিনে এলাকা গেলে জোকা বিল মৎস্য চাষ প্রকল্পের সভাপতি এফাজুর রহমান, সদস্য নাসির উদ্দিন, সহকারী বিএসসি শিক্ষক রেজাউল করিম ও উজ্জল হোসেন বলেন, জোকা বিলে ওই বলি সংলগ্ন পাঁচ গ্রামের কৃষকদের প্রায় তিনশ বিঘা জমি রয়েছে।

বিগত ২০০৬ সাল থেকে ওই বিলের সমস্ত কৃষি জমিতে বিনামূল্যে সেচ সুবিধা দেয়ার বিনিময়ে প্রকল্পের মাধ্যমে মাছ চাষ শুরু করা হয়। এরপর কয়েক বছর থেকে কৃষকদের বছরে বিঘা প্রতি ছয় হাজার টাকা করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ওই প্রকল্পের মাধ্যমে মাছ চাষ হয়ে আসছে।

তারা অভিযোগ করে বলেন, জোকা বিল মৎস্য চাষ প্রকল্পের সহ-সভাপতি জনাব আলী আ’লীগের একজন স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা।

এ কারণে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রকল্পের আরেক সহ-সভাপতি মাহাবুর রহমান, সদস্য রাশেদুল ইসলাম, হেলাল উদ্দিন, জাহাঙ্গীর আলম, সিদ্দিকুর রহমান ও আমিনুল ইসলামকে সহযোগী হিসাবে ব্যবহার করে কৃষকদের কোন টাকা না দিয়ে এবং কাউকে কোন হিসাব না দিয়ে প্রকল্পের প্রায় কোটি টাকা আত্বসাত করা হয়েছে।

তাই দ্রুত আত্নসাত করা টাকা প্রকল্পের অনুকূলে তাদের ফেরত দেয়ার জন্য দাবি জানানো হয়। অন্যথায় প্রকল্পের অর্থ আত্নসাতকারীদের যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই তাদের প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়া হয়।

এদিকে কৃষক আব্দুল মান্নান, আব্দুস সালাম, রহিদুল ইসলাম ও শহিদুল ইসলাম ভুট্রুসহ বিলসংলগ্ন এলাকার একাধিক কৃষক অভিযোগ করে বলেন, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তাদের জমির টাকা দেয়া হচ্ছে না। বহিষ্কৃতরা অবৈধভাবে তাদের জমিতে মাছ চাষ করে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্নসাত করেছে।

এভাবে ওই প্রকল্পের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্নসাত করে প্রকল্পের সদ্য বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি জনাব আলীসহ তার সহযোগীরা অল্প দিনের মধ্যেই অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে আরো জানা যায়, এর আগে প্রকল্পের হিসাব চাওয়া ও মাছ চাষ নিয়ে বিরোধের জের ধরে ওই প্রকল্পের ক্যাশিয়ার আনিছুর রহমানের নেতৃত্বে কয়েকজন সদস্যের উপর প্রকাশ্যে সশস্ত্র হামলা চালানো হয়। পরে গণপিটুৃনিতে আনিছুর রহমান নিহত হন।

ওই ঘটনায় এলাকার কয়েকজন সাধারণ মানুষসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় সব আসামিরা আদালতে আত্নসমর্পণ করে কারাগারে থাকা অবস্থায় নরদাশ ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান জনাব আলী মারা যান। এরপর এলাকায় আবারো দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে আলোচিত জোকা বিলে প্রসাশনের নিয়ন্ত্রনে মাছ চাষ করা হয়।

কিন্তু গত ৫ আগস্ট আ’লীগ সরকারের পতনের পর পুলিশ প্রসাশনে ব্যাপক রদবদল হয়। আর এই সুযোগে বহিষ্কৃতরা পুনরায় বিলটি দখল করে নেয়। কিন্তু প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কৃষকদের জমির টাকা ও সদস্যদের অর্থের হিসাব না দিয়ে বিভিন্নভাবে অনিয়ম ও দুর্নীতি করে ওই প্রকল্পের প্রায় কোটি টাকা আত্নসাতের অভিযোগে প্রকল্পের সহ-সভাপতি জনাব আলী ও মাহাবুর রহমানসহ সাত জনকে বহিষ্কার করা হয়।

এই ঘটনার পর থেকে এলাকায় এখন থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এ বিষয়ে বাগমারা থানার ওসি তৌহিদুল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওই এলাকার প্রতি পুলিশ সতর্ক রয়েছে।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS