ঢাকা | এপ্রিল ২২, ২০২৫ - ৩:৩৭ পূর্বাহ্ন

পোপ ফ্রান্সিস মারা গেছেন

  • আপডেট: Monday, April 21, 2025 - 11:32 pm

সোনালী ডেস্ক: বিশ্বজুড়ে ক্যাথলিক ক্রিস্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু ও সার্বভৌম ভ্যাটিকান সিটির প্রধান পোপ ফ্রান্সিস মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।

সোমবার ভ্যাটিকানে নিজের সাসা সান্তা মার্তা বাসভবনে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। ভ্যাটিকানের পক্ষ থেকে এক বার্তায় বলা হয়েছে, ‘বিশপ অব রোম’ পোপ ফ্রান্সিস স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে স্রষ্টার ঘরে ফিরে গেছেন।

স্রষ্টা ও তার উপাসনালয়ের জন্য ফ্রান্সিসের গোটা জীবন নিবেদিত ছিল। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। তার মৃত্যুতে বিশ্বজুড়ে ক্যাথলিক বিশ্বাসীরা এবং অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মানুষ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

পোপ ফ্রান্সিসের আসল নাম ছিল জর্জ মারিও বেরগোলিও। পোপ হওয়ার আগে ফ্রান্সিস আর্জেন্টিনার বুয়েনস এইরেসের আর্চবিশপ ছিলেন এবং ২০০১ সালে কার্ডিনাল পদে অধিষ্ঠিত হন। তার পরিচিতি ছিল একজন বিনয়ী ও সাধারণ জীবনধারার ধর্মীয় নেতা হিসেবে।

২০১৩ সালের মার্চে পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট ভ্যাটিকান থেকে অব্যাহতি নিলে কনক্লেভে (পোপ নির্বাচনের জন্য কার্ডিনালদের গোপন বৈঠক) জর্জ বেরগোলিও পোপ নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন প্রথম লাতিন আমেরিকান পোপ।

এসেছিলেন বাংলাদেশ সফরে

২০১৭ সালে বাংলাদেশে সফরে এসেছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। সফরকালে ঢাকায় অয়োজিত গণপ্রার্থনাস্থলে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের দুর্দশার কথা শোনেন তিনি।

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার প্রশ্নে সোচ্চার ছিলেন ফ্রান্সিস

তার অনুসারীরা মনে করেন, পোপ ফ্রান্সিস ইতিহাসে স্মরণীয় থাকবেন একজন মানবিক, সহানুভূতিশীল এবং সংস্কারক পোপ হিসেবে, যিনি বিশ্বাসের গণ্ডি পেরিয়ে মানবতার পক্ষে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছিলেন।

পোপ ফ্রান্সিস সবসময়ই শান্তি ও সংলাপের পক্ষে কথা বলেছেন, বিশেষ করে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের প্রসঙ্গে। তিনি বারবার ‘দুই রাষ্ট্র সমাধান’ অর্থাৎ, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন উভয়েরই আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র থাকা উচিত—এই অবস্থানকে সমর্থন করেছেন।

ভবিষ্যৎ পোপ হিসেবে আলোচনায় থাকা নামগুলো:- পিটার টার্কসন (ঘানা): তিনি পন্টিফিক্যাল কাউন্সিল ফর জাজস্টিস এন্ড পিস এর প্রাক্তন প্রধান। একজন কঠোর রক্ষণশীল নেতা, যিনি নিজ দেশে শান্তির পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। ফ্রিডোলিন অ্যামবঙ্গো (ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো): তিনি কিনশাসার আর্চবিশপ এবং সমাজ শান্তি ও মানবাধিকারের পক্ষে সোচ্চার কণ্ঠ। লুইস টাগলে (ফিলিপাইন): মানবিকতা ও দরিদ্রের পাশে দাঁড়ানোয় যিনি পোপ ফ্রান্সিসের আদর্শের খুব কাছাকাছি। পিটার এরদো (হাঙ্গেরি): এসজ্টারগম-বুদাপেস্টের আর্চবিশপ, যিনি রক্ষণশীল মূল্যবোধের পক্ষে এবং ইস্টার্ন অর্থডক্স খ্রিষ্টানদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে কাজ করেছেন। পিয়েত্রো পারোলিন (ইতালি): ভ্যাটিকানের সেক্রেটারি অব স্টেট এবং দক্ষ কূটনীতিক, যিনি সমস্ত কার্ডিনালের কাছে পরিচিত মুখ। মাত্তেও জুপ্পি (ইতালি): বলোনিয়ার আর্চবিশপ, যিনি সব সময় সংলাপ ও সহনশীলতার উপর জোর দেন। মারিও গ্রেক (মাল্টা): সিনড অব বিশপসের সেক্রেটারি জেনারেল, যিনি পোপ ফ্রান্সিসের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন।

এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ভবিষ্যতের পোপ সম্ভবত ইউরোপের বাইরের কোনও দেশ থেকে আসতে পারেন। যদি তাই হয়, তবে তা হবে ক্যাথলিক গির্জার ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক পরিবর্তন।