ঢাকা | এপ্রিল ২১, ২০২৫ - ১১:৪৫ পূর্বাহ্ন

উদ্বেগ ছড়াচ্ছে ভিনদেশি আগাছা বিষাক্ত পার্থেনিয়াম

  • আপডেট: Sunday, April 20, 2025 - 11:35 pm

ছড়িয়ে পড়েছে রাজশাহী অঞ্চল জুড়ে

মিজান মাহী, দুর্গাপুর থেকে: রাস্তার দুই পাশে, আমবাগান, ফসলের খেত কিংবা বাড়ির আঙিনায় ধনে পাতার মতো সবুজ গাছের ঝোপ। আপাত দৃষ্টিতে নয়নাভিরাম দৃশ্য।

কিন্তু এই শোভা বাড়িয়েছে ভিনদেশি পার্থেনিয়াম। গত কয়েক বছর আগেও এর খুব একটা দেখা না মিললেও এখন সবত্র ছড়িয়ে পড়েছে পার্থেনিয়াম। বিষাক্ত এ আগাছায় ছেয়ে গেছে পুরো রাজশাহী অঞ্চল। দুর্গাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ডা: মেহেদী হাসান বলেন, গাছটির ফুলের রেণুতে রয়েছে রাসায়নিক পদার্থ।

যা নিশ্বাসের সঙ্গে নাকে প্রবেশ করলে জ্বর, হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। ক্ষতস্থানের মাধ্যমে রক্তে মিশে চর্মরোগও সৃষ্টি করে। যাদের অ্যালার্জি রয়েছে, এর রস তাদের চামড়ায় লাগলে ভয়াবহ রোগও হতে পারে।

সরেজমিন রাজশাহীর দুর্গাপুর, বাগমারা, পুঠিয়া, চারঘাট, ও বাঘা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি গ্রামীণ রাস্তার দু পাশে সৌন্দর্য বর্ধনকারী গাছের মত পার্থেনিয়াম জন্মেছে। দেখা মনে হয়, নিয়মিত পরিচর্যা করে এ গাছগুলো বড় করা হয়েছে। স্কুলগামী শিশুরা রাস্তার পাশের এই আগাছাকে ফুল ভেবে তুলে নিয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয়রা এ আগাছা ছাগল গরু চরণ করছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজশাহীর জেলার মধ্যে দুর্গাপুর, বাগমারা, পুঠিয়া, চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় পার্থেনিয়ামের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি। পার্থেনিয়ামের সবচেয়ে পুকুর পাড়, অধিকাংশ গ্রামীণ সড়ক, আম বাগান, কৃষি জমি ও আঙিনায় ছড়িয়ে পড়েছে বিষাক্ত এ আগাছা।

জানা যায়, পার্থেনিয়ামের তথ্য অনুসন্ধানে ২০০৮ সালে বাংলাদেশে আসেন অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক স্টিভ অ্যাডকিনস। তার সঙ্গে ছিলেন দেশের একদল কৃষি বিজ্ঞানী। তারা ওই সময় যশোর অঞ্চলে আগাছাটির উপস্থিতি প্রথম শনাক্ত করেন। প্রথম দিকে রাস্তার দুই পাশেই কেবল এ উদ্ভিদের উপস্থিতি চোখে পড়ত।

পরে তা পতিত জমি ও ফসলের খেতে ছড়িয়ে পড়ে।

কৃষিবিজ্ঞানী ডা. ইলিয়াছ হোসেন বলেন, গত এক যুগের বেশি সময় ধরে পার্থেনিয়াম নিয়ে কাজ করছি। ২০১১ সালে যখন কাজ শুরু করি তখন অনেকের কাছেই বিষয়টি হাস্যকর মনে হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে খুব ভাল সাড়া পাচ্ছি। পার্থেনিয়াম এতটাই বিষাক্ত আগাছা মানুষের শরীরের স্পর্শে আসলে চর্ম রোগ হয়।

ছাগল, গরু, ভেড়ার মত গবাদিপশুরা এ আগাছা খেলে মুখে ঘা ও ডায়রিয়া হয়। তিনি আরও বলেন, পার্থেনিয়াম ফসলের খেতে জন্মালে সে ফসলের অঙ্কুরোদ্গম ক্ষমতা ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দেয়। একটি পার্থেনিয়াম গাছ থেকে ৬০ হাজার নতুন গাছের জন্ম হতে পারে। রাজশাহী ও যশোর এলাকায় এ আগাছার উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি।

দুর্গাপুর উপজেলার বেলঘরিয়া গ্রামের রোজিনা বেগম জানান, পার্থেনিয়াম সর্ম্পকে আমাদের কোন ধারণাই নেই। আমরা এটার নামও আগে জানতাম না। ফুল ফুটে দেখতে সুন্দর লাগে। তাই পাশে বসেই গরু ও ছাগল চরণ করি। শিশু বাচ্চারাও এ গাছের ফুল নিয়ে খেলা করে।

পৌর এলাকার দেবীপুর গ্রামের আবদুল আওয়াল বলেন, আমার প্রায় ২০ বিঘা আয়তনের একটি পুকুর রয়েছে। পুকুরের পাহাড়ী দিয়ে আমগাছ রোপণ করেছি। দুই তিনমাস পরেই দেখি পুরো বাগান ধনে পাতার মত সবুজ গাছে ছেয়ে গেছে। আমগাছ গুলো মুকুল আসলেও আম থাকে না।

পরে কৃষি অফিসের পরামর্শ নিলে তারা এসে ধনে পাতার মত পার্থেনিয়াম নামক আগাছাগুলোকে নষ্ট করার পরামর্শ দেয়। দুর্গাপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, গবাদি পশুর জন্য এ আগাছা ক্ষতিকর। উদ্ভিদটি দ্রুত বাড়ে এবং হাতের নাগালে পাওয়া যাচ্ছে। অনেকেই এ গবাদি পশুকে খেতে দেয়।

এতে গবাদি পশুর ডায়রিয়া সহ মাড়ির ব্যথা হতে পারে। দুর্গাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাহারা লাবনী শারমিন বলেন, এ অঞ্চলে বিষাক্ত পার্থেনিয়াম ছিল না। গত কয়েক বছর থেকে এটা ছড়িয়ে পড়ছে। অনেকেই জানা না এটা বিষাক্ত বা স্বাস্থ্যর ক্ষতির কারণ। আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তার এ বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে নিদের্শ দিয়েছি।

বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট রাজশাহী অঞ্চলের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ভারত থেকে পণ্যবাহী ট্রাক অথবা গরু মহিষের বিষ্টার সহিত হয়তো এর বীজ চলে এসেছে। রাজশাহীর দুর্গাপুর, বাঘা, চারঘাট দ্রুত এর আগাছা ছড়িয়ে পড়েছে। ফসল ও পরিবেশ রক্ষায় এ আগাছা নিধনে আমাদের সকলের কাজ করা উচিত।