ঢাকা | এপ্রিল ২১, ২০২৫ - ৫:৪০ পূর্বাহ্ন

শুরু হয়েছে বাগানের বাড়তি যত্ন:কাঙ্খিত বৃষ্টিতে চাঁপাইয়ের আমে নতুন আশা

  • আপডেট: Saturday, April 19, 2025 - 11:57 pm

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ব্যুরো: আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে বেশ কয়েকদিন খরতাপের পর পর্যাপ্ত বৃষ্টি আমের জন্য আশীর্বাদ হয়েছে। কেননা বৃষ্টিতে আমের গুটি ঝরে পড়া রোধ করবে। কৃষিবীদদের মতে, এই বৃষ্টির পানি নাইট্টোজেন বহন করে। তাই এই পানি পেয়ে এখন আমের আকার দ্রুত বড় হবে এবং ওজন বাড়বে ও স্বাদও বৃদ্ধি পাবে। সে সাথে আর আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আমের আঁঠি আসলেই পোক্ত হবে আম।

কৃষি বিভাগ বলছে, এখন থেকে যত ঘনঘন বৃষ্টি হবে, ততই আমের জন্য ভালো। আর চাষীরা কাঙ্খিত বৃষ্টির পানি পেয়ে আমবাগানের যত্ন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. ইয়াছিন আলী জানান, জেলার ৫টি উপজেলায় ৩৭ হাজার ৫শ ৪ হেক্টর জমিতে নানা জাতের আমের চাষ হয়েছে। আর এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে প্রায় ৪ লাখ টন। এ বছর প্রায় ৯২ শতাংশ গাছে মুকুল আসলেও ফাল্গুন মাসে বৃষ্টি, কুয়াশা ও মেঘলা আবহাওয়ায় প্রায় ৪০ শতাংশ মুকুল জ¦লে নষ্ট হয় এবং প্রায় ৫৫-৬০ শতাংশ গাছে গুটি আসে।

আবার জেলায় বেশ কয়েকদিনের খরতাপে গুটির একটা বিরাট অংশ ঝরে পড়ে। তিনি আরো জানান, দীর্ঘ খরতাপের পর গত বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) তারিখে জেলায় পর্যাপ্ত বৃষ্টি আমের জন্য আশীর্বাদ এবং অনেক লাভ হয়েছে। কেননা, এই বৃষ্টির পানি নাইট্টোজেন বহন করে। তাই এই পানি পেয়ে এখন আমের আকার দ্রুত বড়, ওজন বাড়বে, রং উজ্জ্বল, বোটা শক্ত, পোক্ত হবে ও স্বাদও বৃদ্ধি পাবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আরো জানান, এখন আমের এই অবস্থায় ক্ষতিকর হপার পোকা ও ফলছিদ্রকারী পোকার হাত থেকে আমকে বাঁচাতে বালাই ব্যবস্থাপনার পরামর্শ কৃষিবিদদের। আম গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোখলেসুর রহমান জানান, অনাবৃষ্টিতে আমের কাঙ্খিত ফলন নিয়ে কিছুটা শঙ্কা থাকলেও; গত বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) তারিখের জেলার ৫টি উপজেলায় গড়ে ৮.৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত নতুন করে আশা জাগিয়েছে চাষিদের মাঝে। আর এই আশা ও শঙ্কার মধ্যেই চাষিরা ভালো ফলনের আশায়, আম রক্ষায় বাগানের বাড়তি যত্ন নিচ্ছেন। আর এই বৃষ্টিতে গাছের পোকা-মাকড় ধুয়ে পরিস্কার হওয়ায় আমের রোগ-বালাই হ্রাস পাবে।

তিনি আবহাওয়াবিদদের সূত্র উল্লেখ করে আরো জানান, সামেেন আরো বৃষ্টির আভাস রয়েছে। তাই এখন থেকে যত ঘনঘন বৃষ্টি হবে, আমের জন্য ততই মঙ্গলকর। সেসাথে আর আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আমের আঁঠি আসলেই পোক্ত হবে আম। পরিপক্কতা আসলেই সামনে মে মাসের শেষ ভাগে আগাম জােেতর আম পাঁকা শুরু হবে।

আমচাষি রবিউল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে গাছভরা মুকুল যখন স্বপ্ন দেখাচ্ছিল বাম্পার ফলনের; তখন বৈরী আবহাওয়ায় মুকুল থেকে কাঙ্খিত গুটি না আসায় দুঃশ্চিন্তা পড়ি, তারপর গত তিন সপ্তাহ ধরে খরতাপে আমের গুটি ঝড়ে পড়ায় আমরা উৎকন্ঠায় পড়ি। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবারের পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত আমাদের মাঝে নতুন করে আশা জাগিয়েছে।

কেননা, এবার গুটি কম, সেহেতু গাছে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের কারণে আমের আকার ও ওজন বাড়ার হবার সুবাদে কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবো আমরা। শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খান শামিম জানান, চলতি মৌসুমে গাছে গুটি আসার হার গড়ে ৫০-৬০ শতাংশ। কিন্তু অনুকূল আবহাওয়ায় যেভাবে মুকুল এসেছিল সে অনুসারে গুটি আসেনি। তিনি আরও বলেন, যদিও অনইয়ার হওয়ায় এবার আমের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে আমের বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত পণ্য উৎপাদন ও বিদেশে রফতানি বাড়ানোর জোর দাবি জানান।

ম্যাংগো ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব ও উদ্যোক্তা আহসান হাবীব জানান, এবছর কম গুটি আসার পরও কাঙ্খিত বৃষ্টিপাত পেয়ে আমচাষি ও  বাগানমালিকরা লাভের আশায় এখন বাগােেনর যত্ন নিয়ে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছে। তিনি, আমের বাণিজ্যিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে বিদেশে রফতানি বাাড়ানোর পাশাপাশি, আমের বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত পণ্য উৎপাদনে আসছে বাজেটে ৩০ শতাংশ বরাদ্দের দাবি জানান।

  চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক, চলতি বছর বৈরী আবহাওয়া মুকুল নষ্ট এবং তাপপ্রবাহে জেলার বাগানগুলোতে প্রায় ২০-২৫ শতাংশ গাছে আমের গুটি ঝড়ে পড়ায় তারা এবার ফলনবিপর্যয় ও আমের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত। তাই তিনি, গত কয়েক বছর ধরেই জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের শিকার হচ্ছে এ জেলার আমশিল্প। এ অবস্থায় জলবায়ুর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমবিজ্ঞানী ও কৃষি বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের টেকসই কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের দাবি জানান। তিনি আরো জানান, আবহাওয়া ভালো এবং প্রাকৃতিক দূর্যোেেগর তেমন ঘণঘটা না ঘটলে, সামনে মে মাসের শেষভাগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আগাম জাতের সুস্বাদু নিরাপদ পাঁকা আম দেশের ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য আমচাষী, বাগানমালিক এবং ব্যবসায়ীরা প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছে।