ঢাকা | এপ্রিল ১৯, ২০২৫ - ৭:৩২ অপরাহ্ন

শিরোনাম

শিকলে বাঁধা প্রতিবন্ধী নাহিদের জীবন

  • আপডেট: Friday, April 18, 2025 - 12:37 am

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার সড়াতৈল গ্রাম। এই গ্রামের দিনমজুর রুহুল আমিন ও সীমা খাতুন দম্পতির প্রথম সন্তান নাহিদ হোসেন। পাড়া-প্রতিবেশির অভিযোগে অতিষ্ঠ হয়ে শিশু নাহিদকে শিকল পড়িয়ে বাড়িতে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। তিন বছর ধরে শিকলবন্দি জীবন কাটছে ১০ বছরের শিশু নাহিদের দিন।

নাহিদের মা শিকলে বাঁধা নাহিদের জন্য নীরবে চোখের পানি ফেলছেন। ২০১৬ সালে নাহিদের জন্ম। প্রথম দিকে সে ভালোভাবেই বেড়ে উঠছিল। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার আচরণ ও কথাবার্তায় অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করা যায়। শুরু হয় মানসিক সমস্যা। অনেক চিকিৎসা করিয়েছেন বাবা রুহুল। নিজের সহায় সম্পদ যা কিছু ছিল সবই বিক্রি করে দিয়েছেন ছেলের চিকিৎসার জন্য। কিন্তু কাজ হয়নি কিছুই।

রুহুল আমিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নাহিদের পায়ে শিকল পড়িয়ে তাদের শোয়ার ঘরের বারান্দার একটি বাঁশের খুঁটির সঙ্গে আটকে রাখা হয়েছে তাকে। অসহায় নাহিদ ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে হাসছে। নাহিদের বাবা রুহুল আমিন জানান, নাহিদ তার বড় সন্তান। জন্ম থেকে তাকে সুস্থই মনে হচ্ছিল। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নাহিদ মানসিক ভারস্যাম হারাতে থাকে। তিনি ছেলেটির চিকিৎসার ব্যবস্থা নেন। নিজেদের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ।

সে কারণে নাহিদের চিকিৎসার জন্য তার যেটুকু ফসলি জমি ছিল তা বিক্রি করে দেন। কয়েক বছর ধরে সাধ্যমত চিকিৎসা করালেও কোন উন্নতি হয়নি তার। এখন তার দৈনন্দিন সকল কাজকর্ম মা সীমা খাতুনকে করতে হয়। নাহিদ নিজে নিজে কিছুই করতে পারে না। বরং গ্রামের মধ্যে চলতে গেলে প্রতিবেশী ছেলে মেয়েরা তাকে পাগল বলে আখ্যায়িত করে এবং নানাভাবে বিরক্ত করে।

ফলে সে ক্ষুব্ধ হয়ে বিরক্তকারীদের ওপর আক্রমণ করার চেষ্টা করে ও তাদেরকে ধাওয়া দেয়। এই কারণে প্রতিবেশী বা গ্রামের লোকজন রুহুল আমিন ও তার স্ত্রীকে নাহিদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ-অনুযোগ করেন। তারা নাহিদকে বাড়িতে শিকল পড়িয়ে রাখার কথা বলেন। অবশেষে নিরূপায় হয়ে নাহিদকে পায়ে শিকল পড়িয়ে আটকে রেখেছি। আর এ অবস্থা চলছে প্রায় তিন বছর।

নাহিদের মা সীমা খাতুন চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বললেন, এই অবধ শিশুটিকে বেঁধে রাখা যে মায়ের জন্য কত কষ্টের তা প্রকাশ করার ভাষা নেই তার। এখন সে কিছুই করতে পারে না। অর্থ অভাবে চিকিৎসাও বন্ধ হয়ে গেছে। নিজেদের শুধু মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু সামান্য বাড়ি এখন তাদের শেষ সম্বল। উল্লাপাড়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, নাহিদের বিষয়টি জানতে পেরে তার জন্য প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নাহিদ এখন থেকে নিয়মিত প্রতিবন্ধী ভাতা পাবে। তার পায়ের শিকল খুলে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নাহিদের প্রতি তিনি এলাকাবাসীর মানবিক আচরণ প্রত্যাশা করেছেন।