ঢাকা | এপ্রিল ২০, ২০২৫ - ৯:২৯ পূর্বাহ্ন

বাবার লাশ রেখে কান্নাভেজা চোখে পরীক্ষা দিতে গেল মেয়ে

  • আপডেট: Thursday, April 17, 2025 - 11:32 pm

স্টাফ রিপোর্টার: বাবার নিথর দেহ তখনো রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে। বাড়ির চারপাশে শোক আর কান্নার সুর। তবু চোখ মুছে পরীক্ষা কেন্দ্রে হাজির হলো মেয়েটি। তার নাম আলফি আক্তার। তার এসএসসি পরীক্ষা চলছে। আলফিকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় একদল বখাটের হামলায় নিহত হন তার বাবা আকরাম হোসেন (৪৫)। তিনি নগরীর তালাইমারী এলাকার বাসিন্দা, পেশায় ছিলেন বাসচালক।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে রাজশাহীর তালাইমারী শহিদ মিনার এলাকায় বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে। আর ঠিক পরদিন, বৃহস্পতিবার সকালে এসএসসি পরীক্ষা দিতে যায় তাঁর মেয়ে আলফি আক্তার। বাবার মরদেহ দাফনের আগেই পরীক্ষার হলে বসতে হয় আলফিকে। রাজশাহীর অগ্রণী বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগের ছাত্রী আলফি। তার পরীক্ষা কেন্দ্র রাজশাহীর শিরোইল উচ্চ বিদ্যালয়ে। গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা।

অগ্রণী বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আলফি খুবই মেধাবী ছাত্রী। তার বাবাকে যেভাবে খুন করা হয়েছে, তা একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’

আলফির মা মুক্তি বেগম বলেন, ‘সারারাত মেয়েটা শুধু কেঁদেছে। কোনোভাবেই পরীক্ষা দিতে চাইছিল না। বারবার বলেছে বাবা নেই, আমার কিছুতেই যেতে ইচ্ছে করছে না।” পরে আত্মীয়-স্বজনেরা অনেক বুঝিয়ে পরীক্ষার হলে নিয়ে যান।’ মুক্তি বেগম জানান, তার মেয়েকে দীর্ঘদিন ধরে উত্যক্ত করছিল তালাইমারির বাবর আলী রোড এলাকার বখাটে নান্টু ও তার সহযোগীরা। বুধবার বিকেলে রাস্তায় চলার সময় আলফিকে গালাগালি করে ওই যুবকেরা।

ঘটনা শুনে আকরাম হোসেন নান্টুর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। এরপরই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে নান্টু। রাত সাড়ে ৮টার দিকে কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে তারা এসে প্রথমে আকরামের ছেলে ইমাম হাসান অনন্তকে মারধর করে। ছেলের চিৎকার শুনে ছুটে গেলে আকরাম হোসেনকেও ঘিরে ধরে হামলাকারীরা। একপর্যায়ে তার মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করা হয়। মারাত্মক আহত অবস্থায় ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক আকরামকে মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় নিহত আকরামের ছেলে ইমাম হাসান অনন্ত বাদী হয়ে ৭জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা করেছেন। আসামিরা হলো- নান্টু (২৮), বিশাল (২৮), খোকন মিয়া (২৮), তাসিন হোসেন (২৫), অমি (২৫), নাহিদ (২৫) ও শিশির (২০)। মামলায় আরও ৪-৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া মডল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মামলা হয়েছে। আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।