সুদের টাকা পরিশোধ না করায় নিজ বাড়িতে অবরুদ্ধ এক পরিবার

পুঠিয়া প্রতিনিধি: রাজশাহী পুঠিয়ায় এক পরিবারকে জিম্মি করে সুদের টাকা আদায় করার অভিযোগ ওঠেছে। বর্তমানে ভুক্তভোগি পরিবারটি নিরাপত্তা হীনতার কারণে নিজ বাড়িতে অবরদ্ধ হয়ে আছেন। সোমবারের ঘটনা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার জিউপাড়া ইউনিয়নের মাছপাড়া গ্রামের প্রফুল্ল কুমার সরকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা। সে বর্তমানে তানোর উপজেলা কৃষি অফিসে কর্মরত রয়েছেন। এবং তার স্ত্রী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা।
ভুক্তভোগী প্রফুল্ল কুমার বলেন, আমার ভাতিজা রতন কুমার সরকার ধোপাপাড়া বাজারের সুদ ব্যবসায়ী রতন আলীর নিকট থেকে তিন বছর আগে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা সুদের উপর নিয়েছিল। ভাতিজার সুদের উপর টাকা নেয়ার সময় আমি স্বাক্ষী হিসেবে সেখানে উপস্থিত ছিলাম। সেই সময় চেক স্ট্যাম্প কিছুই দেয়া ছিল না। সে আরো বলেন, ইতোমধ্যে সেই টাকার সুদ-আসল বাবদ আমার ভাতিজা রতন সুদকারবারি রতনকে ২ লাখ ৩৭ হাজার টাকা পরিশোধও করেছে। এর পরও সুদ কারবারীরা আমার ভাতিজা রতন সরকারের কাছে আরও অতিরিক্ত ৫ লাখ টাকা দাবি করেন।
দাবিকৃত টাকার পরিমান এতো বেশি হওয়ায় এলাকায় গ্রাম্য শালিস বসে। সেখানে এক লাখ টাকায় সব কিছু সমাধানের চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী সেই টাকাটা গত সোমবার দেবার কথা ছিল। সকালে ভাতিজাকে না পেয়ে আমাকে সৈয়দপুর বাজার থেকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করেন সুদকারবারিরা। পরে একটি গোডাউন ঘরে সন্ধা পর্যন্ত আমাকে বেঁধে রেখে বিএনপি নেতা হায়দার আলী, ট্রলি বাবু ও হাফিজ মেকার মারধরসহ নানা রকম নির্যাতন করতে থাকে।
এ ঘটনায় বিএনপি নেতা হয়দার আলী বলেন, গত আ’লীগের আমলে পুঠিয়া-দুর্গাপুর আসনের প্রতিমন্ত্রী আব্দুল ওয়াদুদ দারা ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাধে জিউপাড়া ইউনিয়নের সরকারি বিভিন্ন রকম কাজ করে দেয়ার কথা বলে প্রফুল্ল সরকার অনেক মানুষের টাকা আত্নসাৎ করেছে। সেই টাকা উত্তোলনের জন্যই তার সাথে কথা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রফুল্ল সরকারের স্ত্রী নীলিমা রানী বলেন, আমার স্বামীকে সকাল থেকে আটকিয়ে জিম্মি করার কথা শুনে বিকেল ৪টার দিকে পুঠিয়া থানায় যাই।
কিন্তু কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার আমার কথা-বার্তা শুনে গড়িমশি করে ২ ঘন্টা আমাকে বসিয়ে রাখেন। উপায় না পেয়ে অনেকটা বাধ্য হয়েই পুলিশ সুপার (এসপি) স্যারকে আমার পরিচয় দিয়ে ফোন করে বলি হয় আমার স্বামীকে উদ্ধার করে দেন, না হয় আমি থানার গেটেই নিজের গায়ে নিজে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করব স্যার।
এর কিছুক্ষণ পর এসআই আব্দুল মান্নানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে আমার স্বামীকে উদ্ধারের জন্য যায়। সেখানে পুলিশের উপস্থিতিতেই সুদকারবারিরা আমার স্বামীর নিকট হতে দুইটি ফাঁকা ষ্ট্যাম্পে ও ব্যাংকের ফাঁকা পাতায় সাক্ষর করিয়ে নেই এবং আমার স্বামীর ব্যবহৃত মটরসাইকেলটিও কেড়ে নেই।
নীলিমা রানী আরও বলেন, এখন পযর্ন্ত পুলিশ আমার স্বামীর ব্যবহৃত মোটর-সাইকেল, স্ট্যাম্প ও ফাঁকা চেকটি উদ্ধার করে দেয়নি। এবং আমার অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনগত কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেননি। এ ব্যাপারে পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কবির হোসেন বলেন, স্থানীয় লোকজন তাকে আটক করে মফ জাষ্টিস করছিল। আমারা তাকে উদ্ধার করেছি। কিন্তু মোটর-সাইকেলটি তাদের নিকট রয়েছে।