প্রাণ ফিরে পাচ্ছে মৃতপ্রায় ইছামতী নদী

জোরেশোরে চলছে খনন কাজ
পাবনা প্রতিনিধি: দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে পাবনাবাসীর দীর্ঘ প্রত্যাশিত ইছামতী নদী খনন ও পুনরুদ্ধার প্রকল্প। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে প্রায় ১১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে জোরেশোরে চলছে খনন কাজ। এতে প্রাণ ফিরতে শুরু করেছে মৃতপ্রায় ইছামতী নদীতে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত পাবনার বুক চিরে প্রবাহিত ইছামতী নদী সময়ের পরিক্রমায় দখল-দূষণে হয়ে পড়েছিল মৃতপ্রায়। স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সরকারের আমলে নদী খনন ও অবৈধ দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত নানা জটিলতায় বাস্তবায়িত হয়নি। ২০২৩ সালে জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ও আন্দোলনে নদীটি পুনরুদ্ধার ও পুনঃখননে প্রবাহমান করার প্রকল্প নেয় সরকার।
সিএস ম্যাপ অনুযায়ী সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন বিগ্রেডের তত্ত্বাবধানে এখন পাবনার গ্রামে গ্রামে চলছে নদী খননের বিশাল কর্মযজ্ঞ। এরই মধ্যে নদীর ১১০ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ২৫ কিলোমিটার অংশের খনন কাজ শেষ হয়েছে। ১৪০টি এক্সক্যাভেটর দিয়ে খনন কাজ চলছে আরও ১০ কিলোমিটারে।
সরেজমিন দেখা গেছে, পুনঃখনন করা অংশে স্বচ্ছ জলরাশির ধারা। খননের পর নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত ভাগাড়ে পরিণত হওয়া গয়েশপুর, মালঞ্চি, আতাইকুলা এলকায় স্বচ্ছ পানির প্রবাহ বইছে। কথা হয় গয়েশপুর গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব আব্দুর রাজ্জাক মালিথার সঙ্গে। তিনি বলেন, ছোটবেলায় নদীতে পরিষ্কার পানির স্রোত দেখেছি।
বন্ধু-বান্ধব মিলে সাঁতার কেটেছি, মাছ ধরেছি। মরে যাওয়া নদীতে আবারও এমন স্বচ্ছ পানি দেখবো তা কল্পনা করিনি। নদী পূর্ণাঙ্গ খনন শেষ হলে আমাদের এলাকার মানুষের চাষবাস ও দৈনন্দিন জীবনে বড় উপকার হবে। মালঞ্চি এলাকার আবদুল বাসেদ বলেন, পাবনার মানুষের প্রাণের দাবি ছিল এই নদী খনন। এতে এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক চিত্রই বদলে যাবে। কোনো চক্রান্তে এই প্রকল্প যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, সরকারের কাছে এখন এটাই আমাদের একমাত্র দাবি।
প্রকল্প সংশিষ্টরা জানান, ঐতিহ্যবাহী ইছামতী নদীর প্রাণ ফেরাতে প্রকল্পটির খরচ ধরা হয়েছে এক হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ২০২৭ সালে। প্রকল্প প্রস্তাবনা ও নকশা অনুযায়ী, যাতায়াত ও সৌন্দর্যবর্ধনে নদীর বিভিন্ন স্থানে নির্মাণ হবে ছোট-বড় ২৩টি সেতু।
থাকবে ড্রেনেজ ব্যবস্থা, ওয়াকওয়ে ও ঘাট। পরিবেশ রক্ষায় রোপণ করা হবে বিপুল পরিমাণ বৃক্ষরাজি। পাউবো পাবনা বিভাগীয় কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এবং ইছামতী নদী পুনঃখনন, পুনরুজ্জীবিতকরণ প্রকল্পের পরিচালক সুধাংশু কুমার সরকার বলেন, প্রকল্প নকশা ও রোডম্যাপ অনুযায়ী সেনাবাহিনী কাজ বাস্তবায়ন করছে। এরই মধ্যে প্রায় ২৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আশা করছি নির্ধারিত সময়েই কাজ শেষ হবে।
তবে শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীপাড়ের দখলদারদের করা ৯৪টি মামলা খনন কাজে এখনো প্রতিবন্ধকতা হয়ে রয়েছে। বেশ কিছু জায়গায় আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় কাজ করা যাচ্ছে না। আমরা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেছি। দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পাবনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম বলেন, এটি জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। আদালতের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি। প্রকল্প বাস্তবায়নে এটি যেন বাধা না হয়, সেজন্য দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা চলছে। আশা করছি জটিলতা অচিরেই কেটে যাবে।