বেদানা চাষে সফল কৃষি উদ্যোক্তা শিবলী ও তাবাসসুম দম্পতি

মোজাম্মেল হক, চারঘাট থেকে: দানায় ভরপুর অথচ নাম বেদানা। রোগীর পথ্য কিংবা পুষ্টিকর ফল হিসেবে দেশে বেদানার চাহিদা সারা বছরই থাকে শীর্ষে।
যদিও দেশের হাজার কোটি টাকার এই ফলের বাজার পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। কারণ আবহাওয়াগত কারণে বেদানা চাষে অনেকটা পিছিয়ে বাংলাদেশ। তবে সম্প্রতি বেদানার চাষে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে রাজশাহীর চারঘাট এলাকায়।
চারঘাট উপজেলার হলিদাগাছী গ্রামে সমতল ভূমিতে বেদানা চাষ করেছেন কৃষি উদ্যোক্তা দম্পতি শিবলী সাদিক ও তাবাসসুম তাসনিম। তাদের বেদানা চাষের সাফল্যে প্রতিদিনই পার্শ্ববর্তী উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে দেখতে ও বেদানার চারা কিনতে আসছে মানুষ জন।
শিবলী সাদিক পেশায় একজন ব্যবসায়ী ও তাবাসসুম তাসনিম গৃহিণী। এ দম্পতি নিজেদের কাজের পাশাপাশি নিবিড় মমতায় বেদানা চাষে রাজশাহী জেলায় নিজেদের সাফল্যের নজির স্থাপন করেছেন।
যা এলাকার শত শত মানুষকে প্রেরণা যোগাচ্ছে। সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি গাছে লাল, গোলাপি ও ফ্যাকাসে রঙের পরিপক্ব বেদানা ঝুলে রয়েছে। আবার কোনো গাছে ফুল আসছে, কোনোটাতে ফুল থেকে ফলে রূপান্তর ঘটছে। কৃষি দম্পতির বাড়ির পাশের বেদানা বাগানের এমন দৃশ্য দেখতে ভিড় করছে মানুষ।
জানা যায়, ২০১৮ ভারতে বেড়াতে গিয়ে একটি গাছের চারা নিয়ে আসেন শিবলী। বাড়ির উঠানে সেই চারা রোপণ করেন স্বামী-স্ত্রী দুজন। সেই গাছটি বড় হলে দুই বছর পর তা থেকে ১৫ টি কলম তৈরি করেন। সেই ১৫ টি গাছ বাড়ির পাশে রোপণ করেন তারা।
দু বছর পর ১৫ টি গাছ থেকে পর্যায়ক্রমে ৩০০টি কলম তৈরি করেন। গত ১৫ মাস আগে দুই বিঘা জমিতে সেই গাছ রোপণ করেছেন। ছয় মাস পর থেকে ১৬০টি গাছে ফল আসা শুরু হয়েছে। ফল আসা শুরুর পর গত নয় মাসে প্রতিটি গাছ থেকে গড়ে চার কেজি হারে বেদানা সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করেছেন তারা।
পাশাপাশি গাছের বাড়তি অংশগুলো ছাটাই না করে সেগুলো দিয়ে কলম তৈরি করে বিক্রি করছেন প্রতিটি ৩৫০ টাকা দামে। বেদানা ও বেদানার কলম বিক্রি করে গত নয় মাসে প্রায় তিন লাখ টাকা আয় করেছেন এ দম্পতি।
তরুণ উদ্যোক্তা শিবলী সাদিক বলেন, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ইলেকট্রনিকস বিষয়ে ডিপ্লোমা শেষ করে কাজ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। ছোট একটা ব্যবসা শুরু করেছিলাম। ভারত থেকে বেদানার চারা এনে ১৫টি গাছে ভাল ফল পেয়ে স্ত্রীর পরামর্শে বাগান বড় করা চিন্তা করি। বাড়ির পাশের দুই বিঘা জমি ফাঁকা করে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ করে পর্যায়ক্রমে তিনশ কলম রোপণ করি।
চারা রোপণের ছয় মাস পর থেকেই ফল আসা শুরু হয়েছে। বাজারে বেদানার চাহিদাও প্রচুর, দামও ভাল। ৩৫০-৪৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। এ বছর প্রতি গাছে চার কেজি হারে ফল পেলেও সামনে মৌসুমে দশ কেজি ছাড়িয়ে যাবে। এত কমপক্ষে দশ লাখ টাকার বেদানা বিক্রির আশা আছে।
তাবাসসুম তাসনিম বলেন, বাড়ির পাশেই আমাদের বেদানা বাগান। পুরো বাগান সিসি ক্যামেরার আওতায় রয়েছে। ছোট থেকেই কৃষি কাজে বাবাকে সহযোগিতা করতাম। এখন সংসারের কাজের পর বাড়তি সময় বেদানা বাগানের পেছনে ব্যয় করি। শ্রমিকদের সাথে নিয়ে বাগানের পরিচর্যা করি।
প্রতি সপ্তাহে গাছে ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হয়। এছাড়া তেমন রোগবালাই হয় না। দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন এসে আমাদের বেদানার সুনাম করে। তখন মনে হয় দুজনের প্রচেষ্টায় আমাদের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। আমরা আরও পাঁচ বিঘা জমিতে বেদানার বাগান করবো, জমি তৈরির কাজ চলছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, দেশের মাটিতে বেদানা চাষ হচ্ছে, এটা অবাক করা বিষয়। বেদানা বাগানের প্রতিটি গাছে ফল ধরেছে, খেতেও ভীষণ সুস্বাদু। শিবলী ও তাসনিম দম্পতির বেদানা বাগান দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এসে ভিড় করছেন এটা আমাদের গ্রামের জন্যও গর্বের বিষয়। চারঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন হাসান বলেন, নিজ উদ্যোগে ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বেদানা বাগান গড়ে তুলেছে শিবলী ও তাসনিম দম্পতি।
আমরা প্রতিনিয়ত তাদের বাগানের খোঁজ খবর নিয়ে যাবতীয় পরামর্শ দিচ্ছি। বারোমাসী জাতের বেদানা হওয়ায় সারাবছরই তারা ফল বিক্রি করতে পারছে। তাদের সফলতা দেখে এলাকার অন্য কৃষি উদ্যোক্তারাও ভিনদেশি ফল চাষে আগ্রহী হচ্ছে।