তাপদাহে ঝড়ে পড়ছে গুটি চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত চাষিরা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ব্যুরো: তীব্র তাপদাহের প্রভাব পড়েছে আমের ওপর। এতে বোঁটার রস শুকিয়ে ঝরে পড়ছে আমের গুটি। সেচ ও নানা পদ্ধতি অবলম্বন করেও ঠেকানো যাচ্ছে না আম। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমচাষি, বাগামালিক ও ব্যবসায়ীরা। এবার আমের উৎপাদনে বিপর্যয়ের আশঙ্কাও করছেন তারা। এ অবস্থায় আমের গাছের অতিরিক্ত পরিচর্যা ও যত্ন নেয়ার পরামর্শ সংশ্লিষ্টদের।
ক্যালেন্ডারের হিসেব অনুযায়ী আর দুই মাস পর বাজারে নামবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সুস্বাদু আম। আমের রাজধানী খ্যাত এ জেলার বাগানগুলোতে এখন শোভা পাচ্ছে নানা জাতের আমের গুটি। এরই মধ্যে আগাম আসা মুকুলের গাছগুলোতে আম কিছুটা বড় হয়েছে; যা দৃশ্যমান। আর দেরিতে আসা মুকুলের গাছগুলোতে গুটি এখন মার্বেল আকৃতির।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. ইয়াছিন আলী জানান, জেলার ৫টি উপজেলায় ৩৭ হাজার ৫শ ৪ হেক্টর জমিতে নানা জাতের আমের চাষ হয়েছে। এবার প্রায় ৯২ শতাংশ গাছে মুকুল আসলেও ফাল্গুন মাসে বৃষ্টি, কুয়াশা ও মেঘলা আবহাওয়ায় প্রায় ৪০ শতাংশ মুকুল জ¦লে নষ্ট হয় এবং প্রায় ৫৫-৬০ শতাংশ গাছে গুটি আসে। এখন আবার প্রচন্ড খরা ও তাপদাহ অব্যাহত থাকায় গুটির একটা বিরাট অংশ ঝরে পড়ছে।
আর তাপদাহ থেকে আমের গুটি ঝরে পড়া রোধে কৃষকদের রাতে অথবা খুব ভোরে গাছের গোড়ায় সেচ দেয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তিনি আরো জানান, দুর্যোগপূর্ণ এই আবহাওয়া বিরাজ থাকলে এবছর বড় ধরনের আমের ফলনবিপর্যয় ঘটবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক, চলতি বছর বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করায় অনেক মুকুল নষ্ট হয়েছে। এখন বাগানগুলোতে প্রায় ৫০-৬০ শতাংশ গাছে গুটি আসলেও; বিরূপ আবহাওয়া, মার্চ মাসে বৃস্টি, কয়েকদিন কুয়াশার কারণে আমের গুটি ঝরে পড়ছে। এ অবস্থায় চলমান তাপপ্রবাহ দীর্ঘায়িত হলে আমের আকার ছোট এবং ওজন কম এবং মিষ্টতা কম হবে, সর্বোপরি কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তারা।
শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খান শামিম জানান, চলতি মৌসুমে গাছে গুটি আসার হার গড়ে ৫০ শতাংশ। কিন্তু অনুকূল আবহাওয়ায় যেভাবে মুকুল এসেছিল সে অনুসারে গুটি আসেনি। তিনি আরো বলেন, যদিও অনইয়ার হওয়ায় এবার আমের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে আমের বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত পণ্য উৎপাদন ও বিদেশে রপ্তানি বাড়ানোর জোর দাবি জানান। আমচাষি আব্দুর সালাম জানান, গত কয়েক বছর ধরেই জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাবের শিকার হচ্ছে এ জেলার আমশিল্প।
এ অবস্থায় জলবায়ুর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমবিজ্ঞানী ও কৃষি বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের টেকসই কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের দাবি জানান। তবে চলতি মৌসুমে গাছভরা মুকুল যখন স্বপ্ন দেখাচ্ছিল বাম্পার ফলনের, তখন বৈরী আবহাওয়ায় মুকুল থেকে কাঙ্খিত গুটি না আসায় কিছুটা দুশ্চিন্তা রয়েছে চাষিদের মাঝে। তার উপর গত দুই সপ্তাহ ধরে চলমান খরা ও মৃদু তাপ প্রবাহে আমের গুটি কিছুটা ঝরে পড়তে শুরু করায় উদ্বিগ্ন আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
ম্যাংগো ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব ও উদ্যোক্তা আহসান হাবীব জানান, এ বছর কম গুটি আসার পরও গুটি দেখে আমচাষি ও বাগানমালিকরা বুক বেঁধেছিল লাভের আশায় স্বপ্ন দেখছিল, ঠিক তখনই এই তাপদাহে গাছ থেকে ঝরে পড়ছে সেই স্বপ্ন (আমের গুটি)।
আম গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোখলেসুর রহমান জানান, আমের কাঙ্খিত ফলন নিয়ে কিছুটা শঙ্কা থাকলেও গত ৬ এপ্রিল জেলায় ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত নতুন করে আশা জাগিয়েছে চাষিদের মাঝে। আর এই আশা ও শঙ্কার মধ্যেই চাষিরা ভালো ফলনের আশায় আমের গুটি রক্ষায় বাগানের বাড়তি যত্ন নিেেচ্ছন। চলতি তাপদাহ থেকে আমের গুটি ঝরে পড়া রোধে গাছের গোড়ায় রাতের ও খুব ভোরে পানি সেচ দিরে কৃষকরা কিছৃটা উপকৃত হবে।
তবে, দিনের খরতাপে সেচ না দেয়ার পরামর্শ এবং খরতাপে আমের ক্ষতি লাঘবে প্রয়োজনে বালাই ব্যবস্থাপনার পরামর্শদেন কৃষকদের। তিনি আরো বলেন, এবার গুটি কম, সেহেতু গাছে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের কারণে আমের আকার এবং সাইজ বড় হবার সুবাদে কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবে আমচাষি ও বাগানমালিকরা। তারপরও ফল গবেষকরা দুর্যোগ সময়ে আমচাষিদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।