হঠাৎ শিলা বৃষ্টি: আত্রাইয়ে ধান ভুট্টা, নাটোরে আম লিচু ও রবিশস্যের চরম ক্ষতি

আত্রাই ও নাটোর প্রতিনিধি: হঠাৎ শিলা বৃষ্টিতে নওগাঁর আত্রাইয়ে ধান, ভুট্টা ও নাটোরে আম লিচু এবং রবিশস্যের চরম ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আত্রাই প্রতিনিধি জানান, আত্রাইয়ে শিলা-বৃষ্টিতে প্রায় ১০০ বিঘা জমির ধান ও ভূট্টার চরম ক্ষতি হয়েছে। শিল পড়ে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে ঘরের চালের টিন। রোববার রাতে উপজেলার পাঁচুপুর ও আত্রাই সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় এমন ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়রা জানান, রোববার রাত ৮টা নাগাদ হঠাৎ করেই হালকা বাতাস শুরু হয়। এর সামান্য কিছু পরেই একটানা শিল পরতে থাকে। পরে হালকা বৃষ্টির সাথে বড় বড় শিল পড়ে।
এতে উপজেলার পাঁচুপুর ইউনিয়নের কোলা, কাসুন্দা, পবনডাঙ্গা, জগদীশপুর, ধুলাউড়ি, খনজোরসহ বিভিন্ন এলাকায় মাঠের জমির ধানের শীষ থেকে ধান ঝরে পরে গেছে এবং জমির ভূট্টা ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া বাড়ী-ঘরের চালের টিন ঝাঁঝরা হয়ে গেছে।
এতে চরম ক্ষতির মুখে পরেছেন ওই এলাকার লোকজন। উপজেলার সাহেবগঞ্জ গ্রামের আব্দুর রহমান জানান, প্রথমে হালকা হিমেল বাতাস শুরু হয়। এর সামান্য কিছু পর থেকেই শিল পরতে থাকে। তার পর সামান্য বৃষ্টির সাথে বড় বড় শিল পরে। এতে তার বাড়ীর টিনের চাল ফুটো হয়ে গেছে।
কোলা গ্রামের কৃষক আব্দুল করিম জানান, গত রোববার রাতে শিলা বৃষ্টিতে তার প্রায় ১০ বিঘা জমির ধানের ৩০ শতাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। বৃষ্টির সাথে শিল পরে শীষ থেকে ধান ঝরে পরে গেছে। এছাড়া বাড়ীর চালের টিনও ঝাঁঝরা হয়ে গেছে। একই কথা জানিয়েছেন ওই গ্রামের কৃষক জহুরুল ইসলাম।
তিনি জানান তার প্রায় সাড়ে পাঁচ বিঘা জমির ধানের ২৫-৩০ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে। আত্রাই কৃষি কর্মকর্তা প্রসেনজিৎ তালুকদার জানান, উপজেলার বিভিন্ন মাঠে জমিতে সবে মাত্র ধানের শীষ বের হয়েছে আবার কোথাও ধান পাকার উপক্রম হয়েছে। তিনি বলেন, গত রোববার রাতে শিলা বৃষ্টির কারণে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৭৫ বিঘা জমির ধান এবং সাড়ে ২২বিঘার মতো ভুট্টার ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে কি পরিমান জমির ধান বা ভূট্টার ক্ষতি হবে তা আগামী ৩-৪দিন পর বোঝা যাবে।
নাটোর প্রতিনিধি জানান, নাটোর সদর, বাগাতিপাড়া ও লালপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে শিলাসহ বৃষ্টি হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশ কিছু কাঁচা ঘরবাড়ি। এছাড়া মৌসুমি ফল আম-লিচুর মুকুল ঝড়ে গেছে, ক্ষতির মুখে পড়েছে রবিশস্যে।
রোববার বিকেল সাড়ে ৪টার পর হঠাৎ করে শিলাসহ বৃষ্টি শুরু হয়। কোথাও কোথাও বৃষ্টির চেয়ে শিলার মাত্রা বেশি দেখা যায়। আবার কোথাও ঝোড়ো হাওয়া, শিলাসহ বৃষ্টি হয়েছে। এতে মৌসুমি ফল আম ও লিচুর অনেক কুঁড়ি/গুটি/মুকুল ঝরে গেছে। এ ছাড়া উঠতি গম, ভুট্টা ও কলার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় কৃষকরা।
সদর উপজেলার হরিশপুর এলাকার কৃষক জালাল উদ্দিন বলেন, বিকেলে হঠাৎ করে শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। আমার লিচু ও আম বাগানের ফলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এখন ছোট ছোট কুঁড়ি বের হচ্ছিল, সেগুলো ঝরে গেছে। এমন ক্ষতি আরও অনেকেরই হয়েছে। নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডি) মো. হাবিবুর রহমান জানান, এসময়ে শিলাবৃষ্টি কৃষকদের জন্য অশনি সংকেত।
কেননা এখন গাছে গাছে আম ও লিচুর মুকুল রয়েছে। মাঠে বিভিন্ন ধরনের রবিশস্য রয়েছে এবং বোরো ধানেও ফুল আসতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় শিলাবৃষ্টি হলে ফসলের ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে।
রোববারের শিলাবৃষ্টিতে কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিরুপণ করা সম্ভব হয়নি। গতকাল সোমবার স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা ফসলের ক্ষতির তালিকা করবেন। এরপর ক্ষয়-ক্ষতির আসল তথ্য পাওয়া যাবে। তবে শিলাবৃষ্টির কারণে ফসলের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন এলাকার কাঁচা ঘরবাড়ির টিনের চালাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
হালতি বিলের মাধনগর এলাকার কৃষক জহের আলী বলেন, ঝড় শিলাবৃষ্টিতে আমার চার বিঘা বোরো ধানের মধ্যে এক বিঘা জমির জিরাশাইল ধান মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আরেক কৃষক আকরাম বলেন, আর কয়েক দিন পর আমার জমির ধান পেকে যেত। এর মধ্যে গত রোববার সন্ধ্যায় শিলাবৃষ্টিতে সেই ধান ঝরে গেছে। ধানের শিষে অর্ধেক ধান আছে। সোনাপাতিল গ্রামের কৃষক মেজু আলী বলেন, ঝড়ে ভুট্টাগাছ মাটিতে শুয়ে পড়েছে।
এতে ভুট্টার ফলন কমে যাবে। নলডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কিশোয়ার হোসেন বলেন, উপজেলার হালতি বিলে সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর বোরো ধানের মধ্যে ৭৯ হেক্টর জমির বোরো ধান শুয়ে পড়েছে। এ ছাড়া ভুট্টা ও দুই হেক্টর জমির পেঁয়াজবীজের ক্ষতি হয়েছে।