ঢাকা | এপ্রিল ১২, ২০২৫ - ৪:৪৮ পূর্বাহ্ন

বাঘায় ঐতিহ্যবাহী ঈদ মেলা: এক পানের খিলি ১ হাজার ৫৭৫ টাকা

  • আপডেট: Friday, April 4, 2025 - 9:37 pm

লালন উদ্দীন, বাঘা থেকে: রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী ঈদ মেলায় বাঘা দরগা শরিফের গেটের সামনে সিদ্দিক কবিরাজের পানের দোকান। একটি খিলি পান বিক্রির তালিকায় রয়েছে সর্বোচ্চ এক হাজার ৫৭৫ টাকা।

সর্বনিম্ন রয়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত। তিনি ৩৮ বছর যাবৎ ব্যবসা করে আসলেও এই ঐতিহ্যবাহী ঈদ মেলায় ৩০ বছর ধরে খিলি পানের ব্যবসা করে আসছেন।

সিদ্দিক কবিরাজ (৫৭) নাটোরের লালপুর উপজেলার জয়রামপুর গ্রামের মৃত গরিবউল্লার ছেলে। হরেক রকম জর্দ্দা ও মসলা দিয়ে তৈরি করেন বিভিন্ন স্বাদের পান। বাহারি এই পান খেতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসে সিদ্দিক কবিরাজের দোকানে।

অভাব অনোটনসহ অর্থনৈতিক ব্যাপক অস্বচ্ছলতায় তাকে বাধ্য করেছে পান বিক্রি করতে। বড় ধরনের ব্যবসা করতে মোটা অংকের পুঁজির প্রয়োজন। তার সাধ থাকলেও সাধ্যের বাইরে ছিল সেই স্বপ্ন।

১৯৮৭ সালে স্বল্প পুঁজি নিয়ে শুরু করেন এই খিলি পান বিক্রি। দীর্ঘ ৩৮ বছর পানের দোকানদারী করে সিদ্দিক কবিরাজ এখন স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। তিনি এই মেলায় ৬ দিনে প্রায় লক্ষাধিক টাকার খিলি পান বিক্রি করেছেন।

তিনি এই মেলায় ভালোবাসার পান ৩৩৫ টাকা মূল্যে ৩টি খিলি পান বিক্রি করেছেন। তার লাইসেন্সধারী পানের দোকান। তার দোকানের লাইসেন্স নম্বর ১৮৬৭। সিদ্দিক কবিরাজ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পানের খিলি ব্যবাসায়ী।

তার দোকানের সাইন বোর্ডে লিখা আছে- আপন জনের জন্য নিয়ে যাবেন, ভালো লাগলে দাম দিবেন, না লাগলে দিবেন না।

সিদ্দিক কবিরাজ এই মাসে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার টাকার পান বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে তিনি এই মেলায় ৬ দিনে প্রায় লক্ষাধিক টাকার খিলি পান বিক্রি করেছেন। বিভিন্ন পণ্যের দামসহ যাবতীয় খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মাসে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় হয়।

পাশাপাশি মেয়ে শিখা খাতুন অনার্স মাস্টার সম্পন্ন করিয়ে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে শান্ত হোসেন স্থানীয় স্কুল থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিবেন। তিনি নিজে অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে খুব বেশি লেখা-পড়া করতে পানেনি।

তবে টাকার অভাবে যাতে ছেলের পড়াশুনা বন্ধ না হয়ে যায়, সে ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন রয়েছেন সিদ্দিক কবিরাজ। মেয়ের মতো ছেলেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছেন তিনি।

সিদ্দিক কবিরাজের দোকানে পানের মূল্যের তালিকার মধ্যে নবাব পান ১৫৭৫ টাকা, জমিদার পান ১০৫০ টাকা, নাটোরের বনলতা পান ১৫৭৫ টাকা, আয়ুর্বেদিক পান ৯৯৫ টাকা, বিয়াই-বিয়ান পান ৮৮৫ টাকা, শালি-দুলাভাই পান ৭৭৫ টাকা, হাসি-খুশি পান ৫৫৫ টাকা, নতুন বাবুর হাতের পান ৪৪৫ টাকা, ভালোবাসার পান ৩৩৫ টাকা, বন্ধু-বান্ধবীর পান ২৫ টাকা ও জনতার পান ১০ টাকা।

গতকাল শুক্রবার ঝিনাইদহ থেকে মেলায় ঘুরতে এসে তিন বন্ধু ৩৩৫ টাকা মূল্যের তিনটি ভালবাসার পান নেন। এসময় এ প্রতিবেদককে তারা বলেন, এর আগেও তার কাছে থেকে পান খেয়েছি। তার পান খেলে মনে হয় মুখ থেকে পান ফুরাচ্ছে না।

খেতে খুব সুসাধু।  মেলায় ঘুরতে আসা মাসিক শিক্ষা তথ্য পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক তসলিম উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন থেকে এই মেলায় পান বিক্রি করে আসছেন সিদ্দিক কবিরাজ। তার পান খাওয়ার জন্য মানুষ লাইন নিয়ে থাকেন।

বিক্রিও ভালো হয়। সিদ্দিক কবিরাজ বলেন, আমি দেশের বিভিন্ন জেলায় পান বিক্রি করে বেড়াই। স্থানীয়ভাবে ব্যবসা করি না। ভ্রাম্যমাণ হিসেবে এ ব্যবসা করে আসছি। যেখানে বড়-বড় মেলা বা অনুষ্ঠান হয় সেখানে যাই। এভাবে দীর্ঘ ৩৮ বছর চলছে।

আমার সাত ভাই বোনের মধ্যে আমি বড়। বাবা ১১ বছর আগে মারা গেছেন। বর্তমানে বৃদ্ধ মাসহ ৫ সদস্যের পরিবার পরিচালনা করতে কোনো বেগ পেতে হয় না।