বাঘা উপজেলার বাউসা ইউনিয়নে বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষ

অনলাইন ডেস্ক: রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাউসা ইউনিয়নে ভিজিডি কার্ড বাণিজ্যের অভিযোগকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রোববার রাতে এ সংঘর্ষে পাঁচটি মোটরসাইকেল ও একটি ভ্যান ভাঙচুরের পর আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি, চারটি দোকানে ভাঙচুর চালানো হয়।
সংঘর্ষে বাউসা ইউনিয়ন ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি রাজিব আহম্মেদ (২৬) ও ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি সৌরভ আহমেদ (২০) আহত হয়েছেন। রাজিবকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং সৌরভকে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। জামায়াতের নেতাকর্মীরা দাবি করেছেন, ক্ষতিগ্রস্ত দোকানপাট ও যানবাহন তাঁদের সমর্থকদের।
এই ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার রাতে বাঘা বাজারে সংবাদ সম্মেলন করে জামায়াতে ইসলামী। তারা পাঁচ দফা দাবি উপস্থাপন করে, যার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বন্ধ, নিরপেক্ষ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পদক্ষেপ, এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনার উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ইউনুস আলী। সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির মাওলানা জিন্নাত আলী, সহসভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন, জামায়াত নেতা অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুল লতিফসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ মার্চ বাউসা ইউনিয়নে সুবিধাভোগীদের জন্য বরাদ্দ করা কার্ড জালিয়াতির অভিযোগে জামায়াত মানববন্ধন করে। বিএনপি এতে বাধা দিলে সংঘর্ষ বাধে। এর জেরে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা বিকেলে শিবির নেতা সৌরভের ওপর হামলা চালায়। পরে সন্ধ্যায় ছাত্রদল নেতা রাজিবের ওপর পাল্টা হামলা চালানো হয়। এরপর বিএনপির কর্মীরা বাউসা বাজারে মোটরসাইকেল, ভ্যানগাড়ি এবং দোকান ভাঙচুর করে ও আগুন লাগায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এছাড়া, সহকারী শিক্ষক জহুরুল ইসলামকে মারধর ও এক দোকানে তালা লাগানোর ঘটনা ঘটে। বিএনপির দাবি, তাঁরা আওয়ামী লীগের লোক এবং গোপনে সভা করছিলেন। রাত নয়টার দিকে দিঘা শ্মশানঘাট এলাকায় আরও এক সংঘর্ষে শিবিরের মারুফ হোসেন আহত হন।
জামায়াত নেতা মিজানুর রহমানের স্ত্রী জুবাইদা বেগম অভিযোগ করেন, বিএনপির শতাধিক কর্মী লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাঁদের বাড়িতে হামলা চালায়, জানালা, মোটরসাইকেল ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করে এবং বাদামের বস্তা লুট করে। একইভাবে, আবদুর রহিমের স্ত্রী হানুফা বেগম জানান, তাঁর পরিবার বিএনপির হামলার শিকার হয়েছে, যদিও তাঁর স্বামী আওয়ামী লীগের কর্মী ছিলেন।
জামায়াত নেতা মাওলানা মজিবর রহমান বলেন, বিএনপি নেতা-কর্মীরা তাঁদের মানববন্ধনে হামলা চালিয়ে কয়েকজনকে আহত করে এবং পরে থানায় ক্ষমা চেয়ে মীমাংসা করে। এরপরও আবার হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় শিবির নেতা সৌরভের ভাই থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
বিএনপি নেতা রেজাউল করিম এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, জামায়াতের লোকজনই ছাত্রদল নেতা রাজিবের ওপর হামলা চালিয়েছে, যার ফলে তিনি গুরুতর আহত হয়েছেন। তবে তিনি বাড়ি ও দোকান ভাঙচুরের দায় স্বীকার করেননি।
বাঘা থানার ওসি আ ফ ম আছাদুজ্জামান জানিয়েছেন, সংঘর্ষের ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে, তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। অন্য পক্ষও এখনো কোনো অভিযোগ দায়ের করেনি।