ভূমিকম্পে মিয়ানমারে নিহত ছাড়াল এক হাজার, পৌঁছাতে পারে ১০ হাজারে

সোনালী ডেস্ক: বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় প্রতিবেশী মিয়ানমারে ভয়াবহ ভূমিকম্প নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
এদিকে, শনিবার থেকে বিদেশি উদ্ধারকারী দলগুলো দেশটিতে পৌঁছানো শুরু করেছে। প্রয়োজনীয় সহায়তাও দেয়া শুরু হয়ে গেছে গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশটিতে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস জানিয়েছে, এই সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের সামরিক সরকার শনিবার জানিয়েছে, মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ২ জনে পৌঁছেছে। প্রতিবেশী থাইল্যান্ডে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছে।
৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠা থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে নির্মাণাধীন একটি আকাশচুম্বী অট্টালিকা ধসে পড়ার পর সেখানে ৪৯ জন নিখোঁজ হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) পূর্বাভাস মডেলিং অনুমান করেছে, মিয়ানমারে মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে এবং ক্ষতির পরিমাণ দেশটির বার্ষিক অর্থনৈতিক উৎপাদনের (জিডিপি) চেয়ে বেশি হতে পারে।
জান্তা সরকারের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পে মিয়ানমারের রাস্তা, সেতু ও ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশটির শীর্ষ জেনারেল শুক্রবার আন্তর্জাতিক সাহায্যের জন্য বিরল আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে জান্তা বলেছে, ‘ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে বর্তমানে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান চলছে।’ চীনের একটি উদ্ধারকারী দল মিয়ানমারের বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াঙ্গুনে পৌঁছেছে, যা ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত শহর মান্দালয়।
এদিকে, ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানে একটি নির্বাচিত বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করার পর থেকে গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত মিয়ানমারে রাশিয়া, ভারত, মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুর ত্রাণসামগ্রী ও কর্মীসহ বিমান পাঠাচ্ছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রহ্মণম জয়শঙ্কর বলেছেন, ‘আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখব এবং আরও সাহায্য পাঠানো হবে।’
দক্ষিণ কোরিয়া জানিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে মিয়ানমারে প্রাথমিকভাবে ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মানবিক সহায়তা দেবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও সহায়তা প্রদানের কথা জানিয়েছে। মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ের বাসিন্দা ও উদ্ধারকর্মীরা ধসে পড়া ভবনের নিচ থেকে লোকজনকে বের করে আনার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, ধ্বংসস্তূপ সরানোর জন্য সীমিত ভারী যন্ত্রপাতি থাকায় তাঁরা হিমশিম খাচ্ছেন।
অন্যদিকে, ব্যাংককে উদ্ধারকারীরা শুক্রবার রাতে নির্মাণাধীন একটি ৩০ তলা অট্টালিকার ধ্বংসস্তূপ থেকে আটকে পড়া শ্রমিকদের সন্ধানে কাজ করছে। ঝাঁকুনির ধাক্কায় কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সেটি ধ্বংসস্তূপ ও মোড়ানো ধাতব স্তূপে পরিণত হয়। ব্যাংককের গভর্নর চাদচার্ট সিট্টিপান্ট বলেছেন, শহরজুড়ে প্রায় ১০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই আকাশচুম্বী অট্টালিকা ধসে মারা গেছে।
তবে পর্যটকদের আকর্ষণীয় স্থান চাতুচাক উইকেন্ড মার্কেটের কাছে অবস্থিত ওই নির্মাণস্থলে এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০ জন শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন। ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের চাদচার্ট বলেন, ‘আমাদের যা সরঞ্জাম আছে, তা নিয়ে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি, কারণ প্রতিটি জীবন মূল্যবান।’ গভর্নর বলেন, ‘আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো যত দ্রুত সম্ভব তাদের সবাইকে বাঁচানো।’
ব্যাংকক সিটি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা শহরের ২ হাজারের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের রিপোর্টের ভিত্তিতে নিরাপত্তার জন্য ১০০ জনের বেশি প্রকৌশলীকে মোতায়েন করবে।