ঢাকা | এপ্রিল ১, ২০২৫ - ৬:১১ পূর্বাহ্ন

সংস্কারের অভাবে মুছে যাচ্ছে শহিদদের নাম

  • আপডেট: Tuesday, March 25, 2025 - 10:17 pm

স্বাধীনতার মাস:

মিজান মাহী, দুর্গাপুর থেকে: রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার সদর হতে উত্তর পাশে অবস্থিত পালশা গণকববের স্মৃতিসৌধটি। দৃষ্টিনন্দন স্থাপনাটিতে শহিদ মুক্তিযোদ্ধাগণের নাম গুলো রয়েছে গণকবরের এক পাশের ফলকে। তবে দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় ফলক থেকে মুছে যাচ্ছে গণহত্যায় ৪২ শহিদদের নাম।

স্মৃতিসৌধের ভিতরেও পড়ে আছে নোংরা আর্বজনাও। সরেজমিন ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে তৎকালীন সরকার এ গণকবর সংরক্ষণের জন্য এক লাখ টাকা অনুদান দেয়। সেই টাকা দিয়ে তৈরি করা হয় প্রাচীর। আয়তনের দিক থেকে প্রায় ৪-৫ শতক জমির ওই গণকবর।

২০০৬ সালের গণকবরটিতে শহিদদের স্মরণে স্মৃতিসৌধ তৈরি করা হয়। পাশে গণহত্যায় ৪২ শহিদদের গণকবরের নাম ফলক তৈরি করা হয়। তবে দীর্ঘ দিন সংস্কার না হওয়ায় গণকবরের নাম ফলকটি মুছে গেছে। ভেঙে গেছে স্মৃতিসৌধের মেইন গেটও। স্মৃতিসৌধের এ নাম ফলকটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন শহিদ পরিবারের সন্তান ও স্বজনরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২২ অক্টোবর দুপুর অনুমান সাড়ে ১২ টা। ঠিক সে সময় অতর্কিত ভাবে পাক-হানাদার বাহিনী ঢুকে পড়ে রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার যুগীশো ও পালশা গ্রামে।

পাক-সেনাদের সাথে থাকা শান্তি কমিটির ইউনিয়ন স্বমন্বয়কারী আব্দুল আজিজ সরকারের ডাকে সাঁড়া দিয়ে ওই গ্রামের সকল মানুষ এসে জড়ো হয় স্থানীয় একটি বাঁশ ঝাড়ের নিচে। এর কিছুক্ষণ পরেই মেশিন গান দিয়ে ব্রাশ ফায়ার করা হয় সেখানে শুয়ে থাকা হিন্দু ধর্মালম্বীদের।

এই নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে পাক বাহিনী চলে গেলে সেখানে ৪২ জন হিন্দু ব্যক্তির লাশ পাওয়া যায়। এরপর সেদিন ওই বাঁশ ঝাড়ের নিচেই পাক-বাহিনীর হাতে শহিদ হওয়া ৪২ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে গণকবর দেয়া হয়।

গণহত্যায় শহিদ রামপ্রসাদ সাহার ছেলে বাসুদেব সাহা বলেন, সংস্কার অভাবে নামগুলো মুছে গেছে। তরুণ প্রজন্ম অনেকেই গণকবরের এ স্মৃতিসৌধটি দেখতে আসেন। কিন্তু নাম ফলকে নাম পড়তে পারেন না। এ নিয়ে আমি বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করেছি। এখনো কোন কাজ হয়নি।

বাসুদেব আরও বলেন, প্রতিবছর ডিসেম্বর ও মার্চ আসলেই সাংবাদিকরা ভিড় করে। অনেকে অনেক কিছু লেখে কিন্তু কাজ হয় না। লোকেরা অভাবে সারাবছরই অযন্ত অবহেলায় থাকে স্মৃতিসৌধটি। আমরাই ডিসেম্বর ও মার্চ মাসে শুধু ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করি।

জানতে চাইলে দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবরিনা শারমিন বলেন, বিষয়টি খোঁজ নেয়া হবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পালশা গণহত্যায় শহিদদের নামের তালিকা সংরক্ষণের ফলকটির নাম মুছে গেলে তা সংস্কার করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে।