চারঘাটে চৈত্রের বৃষ্টিতে আমে স্বস্তি

চারঘাট প্রতিনিধি: রাজশাহীতে মৌসুমের শুরুতে আম গাছগুলো মুকুলে ছেয়ে গেলেও সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় আমের গুটি কম এসেছে। পুরো ফাল্গুন মাস জুড়ে অনাবৃষ্টি আর তীব্র দাবদাহের কারণে অনেক গাছে বোঁটা শুকিয়ে ঝরে পড়ছিলো আমের গুটিগুলো।
আবহাওয়ার এই বৈরী আচরণে চাষি ও বাগান মালিকরা চরম হতাশায় দিন পার করছিলেন। দীর্ঘ অপেক্ষার পর চৈত্র মাসের প্রথম সপ্তাহে কাক্সিক্ষত বৃষ্টির দেখা পাওয়া গেছে।
গমসহ রবি শস্যের জন্য কিছু ক্ষতির কারণ হলেও বৃহস্পতিবার থেকে দুদিনের মৃদু বৃষ্টি আমের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে বলে বলছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও ফল গবেষণা কেন্দ্র। আম বড় হয়ে উঠার আগে এই বৃষ্টি গাছের গোড়ায় সেচ ও গুটি আমে স্প্রে হিসেবে কাজ করবে বলছেন আম চাষিরা।
দীর্ঘ খরায় আমের গুটি তৈরি ব্যাহত হলেও বৃষ্টির ফলে আকার দ্রুত বাড়বে বলে আশা করছেন তারা। রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম জানান, কয়েক বছরের মধ্যে এ বছর সর্বোচ্চ মুকুল এসেছে, ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ গাছে। এসময় আমের জন্য বৃষ্টির অনেক প্রয়োজন ছিল।
মুকুল থেকে গুটি আসার মুহূর্তে গাছের শেকড়ে অনেক পানির প্রয়োজন হয়। তাছাড়া বৃষ্টিতে গাছের পাতা ও মুকুল-গুটি ধুয়ে সজীবতা আসবে। গুটিগুলোও খুব দ্রুত বড় হবে।
রাজশাহী কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, রাজশাহীর নয়টি উপজেলায় ১৯ হাজার ৬০০ হেক্টর বাগানে দুই লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা থেকে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্যের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন তারা। উপজেলার আম চাষি রহিম মিয়া বলেন, বৃষ্টির পর গাছ এবং আমের গুটি ঝকঝকে-তককে হয়ে গেছে।
গুটিগুলোতে নতুন করে প্রাণ এসেছে। এখন ভয়ের বিষয় একটাই শিলাবৃষ্টি। এটা না হলেই হয়। এটা না হলে যেমন গুটি এসেছে তাতে ভালো ফলন হবে। চারঘাট উপজেলার রাওথা গ্রামের আম চাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার পাঁচ বিঘা জমির ১১০ টি আম গাছের সবগুলোতে মুকুল এসেছে।
দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় মুকুল থেকে গুটি তৈরি হতে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছিল। যেগুলো গুটি হয়েছে বোঁটা শুকিয়ে গাছ থেকে ঝরে পড়ছিল। আশেপাশে সেচ দেয়ার ব্যবস্থা না থাকায় ভীষণ দুশ্চিন্তায় ছিলাম। হঠাৎ করে বৃষ্টি আমের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। যে পরিমাণে বৃষ্টির দরকার ছিল, সে পরিমাণে হয়নি। তবুও যেটুকু হয়েছে তাতেই অনেক খুশি চাষিরা।
রাজশাহী অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ড. আজিজুর রহমান জানান, রাজশাহীতে ৬৫ শতাংশ মুকুল বর্তমানে মটরশুঁটির গুটি আকারের ও ৩৫ শতাংশ মার্বেল পর্যায়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছরের কম উৎপাদন এ বছর ভালো ফলনের ইঙ্গিত দেয়
। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভালো ফলন পাবেন চাষিরা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আল মামুন হাসান বলেন, যে-সব গাছে আম গুটি আকার ধারণ করেছে সেসব আমের জন্য এই বৃষ্টি সেচ হিসেবে কাজ করবে।
তবে যেসব গাছে এখনও মুকুল আছে কিংবা মুকুল থেকে গুটিতে রূপ নিচ্ছে সেসব গাছে বৃষ্টি শেষ হলে ছত্রাকনাশক ও কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। বৃষ্টি দীর্ঘায়িত না হলে গমের ক্ষতির সম্ভাবনা নেই বলে জানান তিনি।